ধর্ষণের কথা প্রকাশের ভয়ে জোৎস্নাকে ছয় টুকরা

- আপডেট সময় : ০৮:৩১:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১৮৮ বার পড়া হয়েছে
আমার সুনামগঞ্জ ডেস্ক:
জগন্নাথপুরে ফার্মেসির ভেতরে প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জোৎস্না (৩৬) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় জড়িত মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
সিআইডি জানায়, জোৎস্না কিছুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সমস্যার কথা স্থানীয় ফার্মেসি মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে জানালে তিনি তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলেন। এরপর ফার্মেসিতে গেলে পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হন জোৎস্না। ধর্ষণের কথা সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে জিতেশসহ তিনজন জোৎস্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ফল কাটার ছুরি দিয়ে মরদেহ ছয় টুকরা করে। এ ঘটনায় গ্রেফতাররা হলো- জিতেশ চন্দ্র গোপ (৩০), অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও অসীত চন্দ্র গোপ (৩৬)।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিআইডির সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার ছয় টুকরা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জোৎস্না জগন্নাথপুর থানার নারকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছরকু মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মুক্তা ধর বলেন, ওষুধ কেনার সুবাদে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সঙ্গে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জোৎস্না কিছুদিন ধরে শারীরিক গোপন সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জোৎস্নার মায়ের প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যায়। তখন জোৎস্না তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে সে তাকে ফার্মেসিতে যেতে বলে। ওইদিন বিকেলে জোৎস্না জিতেশের দোকানে গেলে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে তাকে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। এদিকে রাত গভীর হলে জোৎস্নার বাসায় যাওয়ার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে জোৎস্নাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেয় জিতেশ। এতে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন জিতেশ তার দুই সহযোগী অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত গোপকে নিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। এরপর রাত গভীর হলে আশপাশের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তখন জিতেশ ও তার দুই সহযোগী এনার্জি ড্রিংকস পান করে জোৎস্নাকে জোরপূর্বক সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি জোৎস্না তার পরিবারকে জানাবে বলে জানান। তখন জিতেশ ও তার সহযোগীরা জোৎস্নার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
মুক্তা ধর বলেন, পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে জোৎস্নার দুই হাত, দুই পা ও বুক-পেটসহ ছয় টুকরা করে। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে তারা ফার্মেসি তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ওই মরদেহের খণ্ডিত অংশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় ও লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেনি।
এই ঘটনার পর সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামিদের গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনজিৎ ও অসীত গোপকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার জিতেশ চন্দ্র গোপ কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার শহিলা গ্রামের যাদব চন্দ্র গোপের ছেলে, অনজিৎ চন্দ্র গোপ একই এলাকার রসময় চন্দ্র গোপের ছেলে এবং অসীত চন্দ্র গোপ নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার সুয়াইর অলিপুর গ্রামের পতিত পবন গোপের ছেলে।
নিহত জোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজের বাসায় দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তার স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী।