সুনামগঞ্জ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বোরো ধান সংগ্রহে মিলার ও খাদ‍্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা সুনামগঞ্জে বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র বৃদ্ধির দাবি বিএনপির সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ তাহিরপুরে ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল চালকের ঝড়ে উড়ে গেল ভূমিহীন পরিবারের ঘর, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই ট্রাইবেকারে জিতে থ্রি ব্রাদার্স স্পোর্টিং ক্লাব ফাইনালে শান্তিগঞ্জে যুবলীগ নেতা শহীদ মিয়া গ্রেফতার দোয়ারায় সুরমা ইউনিয়নে উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন ফ্যাসিস্টের পতন হলেও বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে : মিজান চৌধুরী তাহিরপুরে ইভটিজিংয়ের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী মাথা ও হাতে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি

পৃথিবীটা মানুষের হোক-ডা. এম. নূরুল ইসলাম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ২০৪ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শান্তি ফিরে আসুক, শান্তি। পৃথিবীটা মানুষের হোক।

–ডা. এম. নূরুল ইসলাম

গতকাল বাসায় ফিরতে বিরাত হয়ে গেছে! ঘড়ির কাটায় তখন প্রায় বারোটা বাজে বোধকরি। নিশাচর পাখির মতো ছেলে দুটি তখনো জেগে আছে। বাবা বাসায় আসা মানেই তারা পুরোপুরি স্বাধীন। খাবার টেবিলে স্বর্গীয় খাবার নিয়ে বউয়ের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ। আলোচনা পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে আসছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা চলছিলো।

এক পর্যায়ে বললাম-
-‘দেখো, বাংলাদেশের সাথে কারো যুদ্ধ লাগলে, আমি কিন্তু সরাসরি যু্দ্ধে চলে যাবো!’
-‘তুমি একলা যাবা কেনো? আমিও তোমার সাথে যুদ্ধে যাবো।’
-‘তুমি যুদ্ধে গেলে, বাচ্চাদের দেখবে কে? তাছাড়া তুমি যুদ্ধে গিয়েতো ঝগড়া বাঁধাবে?’
-‘আমি ঝগড়া করি? ঝগড়া করো তোমরা!’

‘তোমরা’ মানে আমি আর আমার দুই ছেলে। সত্যি কথা বলতে দুই ছেলে এবং আমি মোটেও ঝগড়াটে নই। পৃথিবীর শান্ত-শুবোধ মানুষদের জন্য যদি নোবেল প্রাইজ থাকতো, তাহলে আমরা বাপ-ছেলেরা মিনিমাম দুইবার পেয়ে যেতাম!

আমাদের সমস্যা একটাই;
আমরা একটু স্বাধীনভাবে থাকতে চাই, খেতে চাই, ঘুমাতে চাই, পোশাক পড়তে চাই। কিন্তু ছেলেদের মা তা মোটেও সহ্য করবে না। আমাদের স্বাধীনতা দেখে বেশি রকম হিংসুটে হলে যা হয় আর কি! এই ধরুন, কোথায় বেড়াতে যাচ্ছি; বাপ-ছেলেরা পছন্দের রঙচটা পোশাক-আশাক নিয়ে রেডি হচ্ছি। অমনি স্বৈর শাসক বউ এসে বলবে-
-‘এগুলো পড়া যাবে না।’
-‘কেনো পড়া যাবে না? সমস্যা কি?’
-‘এগুলো পড়লে তোমাদের ভদ্র লাগবে না। এই নাও, এগুলো পড়ো।’

কেমনটা লাগে তখন? শুরু হয় ঝগড়া। ঝগড়া শেষ পর্যায়ে আমাদের দলটা ভারী হলেও স্বৈর-শাসকের কাছে হার মেনে আমরা গোমড়া হয়ে থাকি। দুনিয়ার সবচেয়ে পঁচা জামা-মোজা পড়ে অবশেষে ঘর থেকে বের হই। শুরুতেই যেখানে স্বপ্রণোধিত হয়ে যিনি ঝগড়াটা লাগান, বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি আবার ক্ষান্ত থাকেন কি করে? তাই রাস্তায়, রেস্তোরায়, ফুল আর আম বাগানেও তিনি ঝগড়া করে প্রশান্তি লাভ করেন। শুনেছি প্রশান্তিতে মানুষের আয়ু বাড়ে। এজন্যই বোধ করি মেয়েরা বেশি দিন বাঁচে!

বাঁচুক তাঁরা। তাঁদের ছাড়া পৃথিবী সুন্দর হয় নাকি!

বড় ছেলের মনে ইদানিং এক পোকা ধরেছে। বাংলাদেশ কতো আগে স্বাধীন হয়ে গেছে। কিন্তু সে নাকি তার মায়ের কাছে স্বাধীন না! আমি তার অভিযোগ শুনি আর মনে মনে বলি-‘কার লগে দুঃখের কথা কও বাবা?’

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে ফিরে আসি। দুনিয়ায় ক্রমাগত নিজেদের আগ্রাসন আর আধিপত্য বজায় রাখতে ক্ষমতাবানরা ক্ষণে ক্ষণে যুদ্ধের যে ডামাঢোল বাজিয়ে পরিবার তথা পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করে চলেছে, তাদের ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার জানা নাই।

আমার পরিবারের মতো ইউক্রেনের একটি সাধারন পরিবারের ছোট্ট ছোট্র ছেলে-মেয়েরা এখন পরিবারের স্বর্গীয় খুনসুটি পরিহার করে বেঁচে থাকার জন্য অজানা গন্তব্যে ছুটে ফিরছে। কি মর্মান্তিক সে দৃশ্য!

ছাদের অভাবে, ভাতের অভাবে, চিকিৎসার অভাবে, প্রিয়জনদের সান্নিধ্যের অভাবে প্রতিটা পরিবার কি অমানুষিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, নিজ পরিবারকে সেখানে রেখে চিন্তা করলে, চোখে-মুখে নিমিশেই অনিশ্চিত কালো মেঘে ঢাকা পড়ে। কি ভয়াবহ দৃশ্য! কখন তারা আবার একটি খুনশুটির স্বর্গীয় পরিবারের সান্নিধ্য ফিরে পাবে? নাকি আজীবনই উদ্ভাস্তু হয়ে, পরাধীন হয়ে, পরিবার-পরিজন হারিয়ে শোকে, বিরহে, আতঙ্ক আর বিভীষিকায় অবশিষ্ট্য জীবন পার করতে হবে?

নিজেদের আধিপত্য ও আগ্রাসন বন্ধ করে, পৃথিবীর প্রতিটা পরিবারে কখন শান্তি নেমে আসবে? মহান সৃষ্টিকর্তা যে পৃথিবী মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন, সে পৃথিবী যে ক্রমাগত অমানুষদের দখলে চলে যাচ্ছে, তা কি তিনি দেখেন না?

শান্তি ফিরে আসুক, শান্তি! পৃথিবীটা মানুষের হোক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পৃথিবীটা মানুষের হোক-ডা. এম. নূরুল ইসলাম

আপডেট সময় : ০৯:০৪:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

শান্তি ফিরে আসুক, শান্তি। পৃথিবীটা মানুষের হোক।

–ডা. এম. নূরুল ইসলাম

গতকাল বাসায় ফিরতে বিরাত হয়ে গেছে! ঘড়ির কাটায় তখন প্রায় বারোটা বাজে বোধকরি। নিশাচর পাখির মতো ছেলে দুটি তখনো জেগে আছে। বাবা বাসায় আসা মানেই তারা পুরোপুরি স্বাধীন। খাবার টেবিলে স্বর্গীয় খাবার নিয়ে বউয়ের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ। আলোচনা পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে আসছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা চলছিলো।

এক পর্যায়ে বললাম-
-‘দেখো, বাংলাদেশের সাথে কারো যুদ্ধ লাগলে, আমি কিন্তু সরাসরি যু্দ্ধে চলে যাবো!’
-‘তুমি একলা যাবা কেনো? আমিও তোমার সাথে যুদ্ধে যাবো।’
-‘তুমি যুদ্ধে গেলে, বাচ্চাদের দেখবে কে? তাছাড়া তুমি যুদ্ধে গিয়েতো ঝগড়া বাঁধাবে?’
-‘আমি ঝগড়া করি? ঝগড়া করো তোমরা!’

‘তোমরা’ মানে আমি আর আমার দুই ছেলে। সত্যি কথা বলতে দুই ছেলে এবং আমি মোটেও ঝগড়াটে নই। পৃথিবীর শান্ত-শুবোধ মানুষদের জন্য যদি নোবেল প্রাইজ থাকতো, তাহলে আমরা বাপ-ছেলেরা মিনিমাম দুইবার পেয়ে যেতাম!

আমাদের সমস্যা একটাই;
আমরা একটু স্বাধীনভাবে থাকতে চাই, খেতে চাই, ঘুমাতে চাই, পোশাক পড়তে চাই। কিন্তু ছেলেদের মা তা মোটেও সহ্য করবে না। আমাদের স্বাধীনতা দেখে বেশি রকম হিংসুটে হলে যা হয় আর কি! এই ধরুন, কোথায় বেড়াতে যাচ্ছি; বাপ-ছেলেরা পছন্দের রঙচটা পোশাক-আশাক নিয়ে রেডি হচ্ছি। অমনি স্বৈর শাসক বউ এসে বলবে-
-‘এগুলো পড়া যাবে না।’
-‘কেনো পড়া যাবে না? সমস্যা কি?’
-‘এগুলো পড়লে তোমাদের ভদ্র লাগবে না। এই নাও, এগুলো পড়ো।’

কেমনটা লাগে তখন? শুরু হয় ঝগড়া। ঝগড়া শেষ পর্যায়ে আমাদের দলটা ভারী হলেও স্বৈর-শাসকের কাছে হার মেনে আমরা গোমড়া হয়ে থাকি। দুনিয়ার সবচেয়ে পঁচা জামা-মোজা পড়ে অবশেষে ঘর থেকে বের হই। শুরুতেই যেখানে স্বপ্রণোধিত হয়ে যিনি ঝগড়াটা লাগান, বাড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি আবার ক্ষান্ত থাকেন কি করে? তাই রাস্তায়, রেস্তোরায়, ফুল আর আম বাগানেও তিনি ঝগড়া করে প্রশান্তি লাভ করেন। শুনেছি প্রশান্তিতে মানুষের আয়ু বাড়ে। এজন্যই বোধ করি মেয়েরা বেশি দিন বাঁচে!

বাঁচুক তাঁরা। তাঁদের ছাড়া পৃথিবী সুন্দর হয় নাকি!

বড় ছেলের মনে ইদানিং এক পোকা ধরেছে। বাংলাদেশ কতো আগে স্বাধীন হয়ে গেছে। কিন্তু সে নাকি তার মায়ের কাছে স্বাধীন না! আমি তার অভিযোগ শুনি আর মনে মনে বলি-‘কার লগে দুঃখের কথা কও বাবা?’

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে ফিরে আসি। দুনিয়ায় ক্রমাগত নিজেদের আগ্রাসন আর আধিপত্য বজায় রাখতে ক্ষমতাবানরা ক্ষণে ক্ষণে যুদ্ধের যে ডামাঢোল বাজিয়ে পরিবার তথা পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করে চলেছে, তাদের ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার জানা নাই।

আমার পরিবারের মতো ইউক্রেনের একটি সাধারন পরিবারের ছোট্ট ছোট্র ছেলে-মেয়েরা এখন পরিবারের স্বর্গীয় খুনসুটি পরিহার করে বেঁচে থাকার জন্য অজানা গন্তব্যে ছুটে ফিরছে। কি মর্মান্তিক সে দৃশ্য!

ছাদের অভাবে, ভাতের অভাবে, চিকিৎসার অভাবে, প্রিয়জনদের সান্নিধ্যের অভাবে প্রতিটা পরিবার কি অমানুষিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, নিজ পরিবারকে সেখানে রেখে চিন্তা করলে, চোখে-মুখে নিমিশেই অনিশ্চিত কালো মেঘে ঢাকা পড়ে। কি ভয়াবহ দৃশ্য! কখন তারা আবার একটি খুনশুটির স্বর্গীয় পরিবারের সান্নিধ্য ফিরে পাবে? নাকি আজীবনই উদ্ভাস্তু হয়ে, পরাধীন হয়ে, পরিবার-পরিজন হারিয়ে শোকে, বিরহে, আতঙ্ক আর বিভীষিকায় অবশিষ্ট্য জীবন পার করতে হবে?

নিজেদের আধিপত্য ও আগ্রাসন বন্ধ করে, পৃথিবীর প্রতিটা পরিবারে কখন শান্তি নেমে আসবে? মহান সৃষ্টিকর্তা যে পৃথিবী মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন, সে পৃথিবী যে ক্রমাগত অমানুষদের দখলে চলে যাচ্ছে, তা কি তিনি দেখেন না?

শান্তি ফিরে আসুক, শান্তি! পৃথিবীটা মানুষের হোক।