ঢাকা ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটা সংস্কার” প্রয়োজন কি না এতদ্বিষয়ে প্রস্তাব

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৩৭:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
  • / 198
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মির্জা নাঈম সালেহ্
দেশ পরিচালনায় মেধাবীদের প্রয়োজনীয়তা সর্বজন স্বীকৃত। দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদগুলুতে জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানেরা থাকাটাই কাম্য। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা নামক অযৌক্তিক, অমানবিক এবং অবিবেচনাপূর্ণ বৈষম্যের ফলে মেধাবীরা যোগ্য মর্যাদা পাচ্ছে না। তাই তারা হচ্ছে ক্ষুব্ধ, হতাশ ও হতোদ্যম। অনেক মেধাবীরাই তাদের পূর্বগামীদেরকে কোটার কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখে সিদ্ধান্ত নেন দেশত্যাগের।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন—”যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মায় না।” আমরাও কি সেই গুণীহীন দেশেই পরিণত হতে চাচ্ছি? মানুষ তার কর্ম,মেধা ও সাফল্যের স্বীকৃতি পেলে কর্মস্পৃহা বেড়ে যায়, মেধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, ফলে সাফল্যের পরিমাণও বহুগুণ বেড়ে যায়। আর এর বিপরীতটি তখনই ঘটে যখন তার কর্ম, মেধা ও সাফল্যকে অবমূল্যায়ন করা হয়। বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার ফলে আমরা গুণীদের কদর করতে পারছি না। পারছি না মেধাবীদের মেধার মূল্যায়ন করতে। ফলে যা হবার তা-ই হচ্ছে। দেশ তার কাঙ্খিত গতিতে অগ্রসর হতে পারছে না। অধিকতর মেধাবীদের রেখে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের সেবার মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করাও সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত কোটাধারী না পাওয়ায় যখন অনেক পদ শূণ্য থাকছে বিপরীতে যথেষ্ঠ মেধার স্বাক্ষর রাখার পরও একদলকে অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বেকারত্বের । তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার এখন অপরিহার্য একটি ব্যাপার।

কোটা ব্যবস্থার সংস্কার কেন জরুরী সে বিষয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হলো—

১. মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদানের জন্যঃ কোটা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান বর্ধনের চেয়ে সম্মানহানিই বেশি ঘটেছে বলে আমার মনে হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারী যতোই মেধাবী হোক না কেন তার কোটা আছে জানার পর তার সহপাঠী বা সহকর্মী কেউই তাকে মেধাবী হিসেবে মেনে নিতে চায় না বা পারে না। এটা অবশ্যই তার জন্য লজ্জাকর ঘটনা। অবশ্য কোটাধারীদেরকে মেধাবী হিসেবে মেনে নেয়ার সুযোগও কম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একজন কোটাধারী ৫১৫০ তম অবস্থানে থেকেও মোটামুটি ভালো একটি বিভাগে অধ্যয়ন করছে । বিপরীতে এমন একজনকেও আমি চিনি যে ২০০৫ তম অবস্থানে থেকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই হতে পারেনি। কোটাধারীরাও মেধাবী হতে পারেন এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উপর্যুক্ত অবস্থা প্রত্যক্ষ করার পর কোটাধারীদের মেধাবী হিসেবে মেনে নেয়াটা কঠিন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার জন্যও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।

২. যৌক্তিক ‍বিচারের জন্যঃ কর্ম যার ফলও তারই পাওয়া উচিৎ। একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের অস্থিত্ব রক্ষার্থে নিজ প্রাণের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছেন। সেজন্য তাঁকে রাষ্ট্র কর্তৃক যে কোন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কারো কোন রকম আপত্তি থাকার কথা না। আপত্তি উঠে তো তখনই যখন শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার সুবাদে দেশের জন্য কোনরুপ ত্যাগ না করেই সুবিধা ভোগ করার সুয়োগ পায়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার ফলেই যে কারো মাঝে দেশপ্রেম েএবং দেশের জন্য ত্যাগের মানসিকতা থাকবে তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই।
তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনী পর্যন্ত কোটা ব্যবস্থা বিস্তৃত করণ একজনের কর্মফল অন্যজনকে বিনাপরিশ্রমে ভোঘের সুযোগ দানের নামান্তর। আর তা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়।

৩. মেধাবীদের রক্ষা করার জন্যঃ কোটার অযৌক্তিক প্রয়োগের ফলে অনেক মেধাবীরাই হতোদ্যম হয়ে যাচ্ছেন। অনেক কষ্ঠ করার পরও কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে পারছেন না। আর তারই সামনে যখন একজন কোটাধারী অপেক্ষাকৃত কম শ্রম দিয়েও কোটার জোরে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছে তখন তার আর কর্মস্পৃহা থাকছে না। তাই মেধাবীদেরকে কর্মোদ্যম ও অরো বেশি উৎপাদনশীর করার জন্য কোটা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।
৪. মেধা পাচার রোধ করার জন্যঃ উপরোক্ত কারণে মেধাবীরা ক্ষুব্ধ, হতাশ, নিরাশ এবং ভগ্নহৃদয় হয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের খুব অল্প সংখ্যকই দেশে প্রত্যাবর্তন করছে। ফলে ঘটছে মেধার পাচার ( ব্রেইন ড্রেইন)।

৫. সংবিধানের অনুসরণঃ কোটার কোন সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। উপরন্তু এটি সংবিধানের মূল স্পৃহার বিপরীত। কেননা, অামাদের সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সরকারি সকল নিয়োগে সকলের সমান অধিকার লাভের কথা বলা আছে। কিন্তু বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা এ ধারার পরিপন্থী। এর কারণে চাকরী প্রার্থীরা কোন সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ( লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) পাচ্ছে না। তাই সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে হলেও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

কোটা সংস্কার” প্রয়োজন কি না এতদ্বিষয়ে প্রস্তাব

আপডেট সময় : ১২:৩৭:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

মির্জা নাঈম সালেহ্
দেশ পরিচালনায় মেধাবীদের প্রয়োজনীয়তা সর্বজন স্বীকৃত। দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদগুলুতে জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানেরা থাকাটাই কাম্য। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা নামক অযৌক্তিক, অমানবিক এবং অবিবেচনাপূর্ণ বৈষম্যের ফলে মেধাবীরা যোগ্য মর্যাদা পাচ্ছে না। তাই তারা হচ্ছে ক্ষুব্ধ, হতাশ ও হতোদ্যম। অনেক মেধাবীরাই তাদের পূর্বগামীদেরকে কোটার কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখে সিদ্ধান্ত নেন দেশত্যাগের।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন—”যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মায় না।” আমরাও কি সেই গুণীহীন দেশেই পরিণত হতে চাচ্ছি? মানুষ তার কর্ম,মেধা ও সাফল্যের স্বীকৃতি পেলে কর্মস্পৃহা বেড়ে যায়, মেধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, ফলে সাফল্যের পরিমাণও বহুগুণ বেড়ে যায়। আর এর বিপরীতটি তখনই ঘটে যখন তার কর্ম, মেধা ও সাফল্যকে অবমূল্যায়ন করা হয়। বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার ফলে আমরা গুণীদের কদর করতে পারছি না। পারছি না মেধাবীদের মেধার মূল্যায়ন করতে। ফলে যা হবার তা-ই হচ্ছে। দেশ তার কাঙ্খিত গতিতে অগ্রসর হতে পারছে না। অধিকতর মেধাবীদের রেখে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের সেবার মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করাও সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত কোটাধারী না পাওয়ায় যখন অনেক পদ শূণ্য থাকছে বিপরীতে যথেষ্ঠ মেধার স্বাক্ষর রাখার পরও একদলকে অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বেকারত্বের । তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার এখন অপরিহার্য একটি ব্যাপার।

কোটা ব্যবস্থার সংস্কার কেন জরুরী সে বিষয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হলো—

১. মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদানের জন্যঃ কোটা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান বর্ধনের চেয়ে সম্মানহানিই বেশি ঘটেছে বলে আমার মনে হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারী যতোই মেধাবী হোক না কেন তার কোটা আছে জানার পর তার সহপাঠী বা সহকর্মী কেউই তাকে মেধাবী হিসেবে মেনে নিতে চায় না বা পারে না। এটা অবশ্যই তার জন্য লজ্জাকর ঘটনা। অবশ্য কোটাধারীদেরকে মেধাবী হিসেবে মেনে নেয়ার সুযোগও কম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একজন কোটাধারী ৫১৫০ তম অবস্থানে থেকেও মোটামুটি ভালো একটি বিভাগে অধ্যয়ন করছে । বিপরীতে এমন একজনকেও আমি চিনি যে ২০০৫ তম অবস্থানে থেকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিই হতে পারেনি। কোটাধারীরাও মেধাবী হতে পারেন এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উপর্যুক্ত অবস্থা প্রত্যক্ষ করার পর কোটাধারীদের মেধাবী হিসেবে মেনে নেয়াটা কঠিন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার জন্যও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।

২. যৌক্তিক ‍বিচারের জন্যঃ কর্ম যার ফলও তারই পাওয়া উচিৎ। একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের অস্থিত্ব রক্ষার্থে নিজ প্রাণের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছেন। সেজন্য তাঁকে রাষ্ট্র কর্তৃক যে কোন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কারো কোন রকম আপত্তি থাকার কথা না। আপত্তি উঠে তো তখনই যখন শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার সুবাদে দেশের জন্য কোনরুপ ত্যাগ না করেই সুবিধা ভোগ করার সুয়োগ পায়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার ফলেই যে কারো মাঝে দেশপ্রেম েএবং দেশের জন্য ত্যাগের মানসিকতা থাকবে তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই।
তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনী পর্যন্ত কোটা ব্যবস্থা বিস্তৃত করণ একজনের কর্মফল অন্যজনকে বিনাপরিশ্রমে ভোঘের সুযোগ দানের নামান্তর। আর তা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়।

৩. মেধাবীদের রক্ষা করার জন্যঃ কোটার অযৌক্তিক প্রয়োগের ফলে অনেক মেধাবীরাই হতোদ্যম হয়ে যাচ্ছেন। অনেক কষ্ঠ করার পরও কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে পারছেন না। আর তারই সামনে যখন একজন কোটাধারী অপেক্ষাকৃত কম শ্রম দিয়েও কোটার জোরে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছে তখন তার আর কর্মস্পৃহা থাকছে না। তাই মেধাবীদেরকে কর্মোদ্যম ও অরো বেশি উৎপাদনশীর করার জন্য কোটা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।
৪. মেধা পাচার রোধ করার জন্যঃ উপরোক্ত কারণে মেধাবীরা ক্ষুব্ধ, হতাশ, নিরাশ এবং ভগ্নহৃদয় হয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের খুব অল্প সংখ্যকই দেশে প্রত্যাবর্তন করছে। ফলে ঘটছে মেধার পাচার ( ব্রেইন ড্রেইন)।

৫. সংবিধানের অনুসরণঃ কোটার কোন সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। উপরন্তু এটি সংবিধানের মূল স্পৃহার বিপরীত। কেননা, অামাদের সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সরকারি সকল নিয়োগে সকলের সমান অধিকার লাভের কথা বলা আছে। কিন্তু বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা এ ধারার পরিপন্থী। এর কারণে চাকরী প্রার্থীরা কোন সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ( লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) পাচ্ছে না। তাই সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে হলেও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রয়োজন।