সুনামগঞ্জ ১২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বোরো ধান সংগ্রহে মিলার ও খাদ‍্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা সুনামগঞ্জে বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র বৃদ্ধির দাবি বিএনপির সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ তাহিরপুরে ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল চালকের ঝড়ে উড়ে গেল ভূমিহীন পরিবারের ঘর, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই ট্রাইবেকারে জিতে থ্রি ব্রাদার্স স্পোর্টিং ক্লাব ফাইনালে শান্তিগঞ্জে যুবলীগ নেতা শহীদ মিয়া গ্রেফতার দোয়ারায় সুরমা ইউনিয়নে উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন ফ্যাসিস্টের পতন হলেও বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে : মিজান চৌধুরী তাহিরপুরে ইভটিজিংয়ের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী মাথা ও হাতে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি

শহীদ আব্দুস সালাম আজাদ স্মরণে

▪️একটি রক্ত পলাশের বৃন্তচ্যুতির উপাখ্যান▪️

মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
  • আপডেট সময় : ০১:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪ ১২২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

🔹এক:

বাঁচাও! বাঁ-চাঁ-ও।
প্রভু! বাঁচাও! হে প্রভু!

আটাশি সালের মধ্যভাগ। আব্দুল হক স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। সেখানে তালাবদ্ধ আল্লাহর এক সৈনিক। নাম মারফত আলী। অকথ্যভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন সন্ত্রাসীদের হাতে।

সংগঠনের অফিস।
মজলুম সাথীরা আহাজারী করছে। মোনাজাতের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ছে কান্নায়। প্রিয় ভাইকে উদ্ধারের জন্য ব্যাকুল সবাই।

আমি তখন কর্মী। নবম শ্রেণীতে পড়ি। অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। সাথে আরও অনেক। অপেক্ষায়- দায়িত্বশীলের নির্দেশের।

একটি কণ্ঠ বার বার উচ্চকিত হচ্ছে- আমাদের নির্দেশ দিন। অনুমতি দিন। উদ্ধার করব। মারফত ভাইকে উদ্ধার করব।

উচ্চকিত কন্ঠে আকর্ষিত হই সেদিকে। অসীম সাহসী তেজোদ্দীপ্ত কে এই যুবক? কে উনি? ওমর? আলী হায়দার? বখতিয়ার? তীতুমীর? হৃদয় তন্ত্রীতে উঠে প্রশ্নের ঝড়। হাত বাড়াতেই উত্তর আসে, আমি সালাম। কলেজে পড়ি।

🔹দুই:
আটাশী সালের ছয় নভেম্বর। গোবিন্দগঞ্জ রেল গেইট পয়েন্ট। সূর্য পশ্চিমের লালে ডুব দিচ্ছে।
রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ছে সবদিকে। বাতাসে বাতাসে জানান দিচ্ছে শীতের। কি সুন্দর শীতল বাতাস।
আহা শান্তি! কি শান্তি!

: পোষ্টার। একটি পোষ্টার!
ওদের সহ্য হচ্ছে না। ওরা কেড়ে নিতে চায়। গায়ে পড়েই শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে চায়।
শেষ পর্যন্ত আক্রমণ করেই বসল। যথার্থ জবাব পেল ওরা। গুটি কয়েক মুজাহিদের মিলিত উচ্চারণ। তাকবিরের শ্লোগান। মিলিত প্রচেষ্টা-আল্লাহর পথে।

বিজয় আমাদের। জয়তো সত্যের।
অনেক তাগুতি পালায়। পালিয়ে যায়।

🔹তিন:
সূর্য হারিয়ে যায়। সন্ধ্যা নামে। অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় ধরণী। রাত আসে ছমছমে আতংক নিয়ে। আক্রমণ।

তাড়া খাওয়া কুকুরেরা আবারো আক্রমণ করতে চায়। তারা অস্ত্র মওজুত করছে। সংঘটিত হচ্ছে। আমরা মাত্র ক’জন। আমি, আপ্তাব ভাই, সফিক ভাই, লোকমান………। আমরাও প্রস্তুত। হাত তুলি মা’বুদের দরবারে।

হে পরওয়ারদিগার…..।
সে রাত্রে আর কিছু হয়নি।

🔹চার:
সাত নভেম্বর।
সকাল। অপূর্ব সুন্দর সকাল। পাখিদের প্রাণ উজাড় করা গান। মাঠে তরতাজা ঘাস। ঘাসের ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশির কণা। তার উপর রোদের ঝিলিমিলি খেলা। কতই না সুন্দর। কি সুন্দর। তার পরও কি যেন এক শূন্যতা। ভীষণ শূন্যতা। ধূ-ধূ প্রান্তর। নীল যন্ত্রণায় যেন কাতরাচ্ছে সুন্দর প্রভাত।

বিচারের বাণী কাঁদছে। নিরবে নিভৃতে কাঁদছে।

আল্লাহর সৈনিকরা ঘুরছে। ঘুরছে বিচার চেয়ে চেয়ে। আমার আসতে দেরী হয়ে যায়। এসে দেখি রেজা ভাইকে। সবে মাত্র খাওয়া সেরেছেন। চিন্তার সুস্পষ্ট ছাপ তার চেহারায়। তার পরও মুখে হাসি টেনে বললেন-

: দেরী যে হয়ে গেল?

: এখন কি করতে পারি। অপরাধীর মত জবাব দেই।

: আচ্ছা ঠিক আছে। জালাল সাহেবের বাড়ীতে আবুল ভাই (তৎকালীন সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি) আছেন। তোমাকে একটু সতর্ক হয়ে যেতে হবে। গিয়ে বলো- আমাদের ভাইরা গণসংযোগে আছেন। তারা এখন ফিরবেন কিনা? কখন কি ভাবে ফিরতে হবে?

যথারীতি খবর পৌঁছাই। কিছু নির্দেশনা নিয়ে ফিরছি। তার আগেই তারা ফিরে আসেন। অতিক্রম করেন গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট। ছুটলেন পশ্চিম দিকে। হেঁটে হেঁটে। অফিসের উদ্দেশ্যে। রাস্তার পাশেই ভি,পি’র বাড়ী। সেখানে আছে সংগঠিত শত্রুর দল। আছে সত্য বিরোধী সন্ত্রাসীরা। খুনের নেশায় মত্ত নরপশুরা। হায়েনারা।

সেখানেই আক্রান্ত হন আমাদের ভাইয়েরা। পয়েন্টে এসে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি।। আমার দিকে লম্বা দা হাতে তেড়ে আসে সন্ত্রাসী আজিজ। কৌশলে প্রাণে বাঁচলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে দৃষ্ট অবস্থার জানান দেই আবুল ভাইকে। আবুল ভাই বের হন। সাথে আমি, আইনুদ্দিন শাহীন ভাই (আলীয়া মাদরাসা, মজলুম মুজাহিদদের বন্ধু)…. । এরপর যোগ হন বাবলু ভাই। রাস্তায় উঠেই দেখি একটি রিক্সা আসছে। রিক্সায় রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত রেজা ভাই, জুলহাস ভাই আর সালাম ভাই।

আপ্তাব ভাই, বাবলু ভাই, লোকমান … নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু মারাত্মক আহত হন জুলহাস ভাই ও সালাম ভাই। তাদেরকে রিক্সায় তুলে দিতে এসে আহত হন রেজা ভাই।

তাদের রক্তে লাল হল পীচ ঢালা কালো পথ। রাস্তার দু’ধারের ঘাসও ধারণ করল রক্তবর্ণ। যেন রক্তলাল পলাশের পাপড়ির প্রলেপ। প্রথমে পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তারপর ট্রাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ট্রাকের উপর আহত সালাম আর্তনাদ করছিলেন- পানি পা-নি পা……….বলে।

🔹পাঁচ:
আসরের নামাজ শেষে বসে আছি জানালার ধারে। গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন। ভাবছি আর ভাবছি। চেয়ে দেখছি পাখিদের নীড়ে ফিরার দৃশ্য। রক্তলাল সূর্যের দৃশ্য। মৃদু বাতাসের মমতার অবগাহনে এলিয়ে দেই ক্লান্ত দেহ।
কারো চিৎকারে হতবম্ব হয়ে পড়ি। ইথারে ইথারে কানে ভেসে আসে শহীদ,,,,, । সালাম ভাই শহীদ হয়েছেন। শহীদ,,,,।
হঠাৎ যেন পাখির নীড়ে ফেরা বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলের উজ্জল সূর্য ফিকে হয়ে আসে। বন্ধ হয়ে যায় বাতাস।
সমস্ত প্রকৃতি যেন এক যোগে বলছে-
হায় সালাম! হায় সালাম!
নীল বেদনায় হয়ে পড়ি বাকরুদ্ধ। হৃদয়ে অনুভব করি তীব্র যন্ত্রণা। অসীম বেদনা। আপ্লুত হই বাঁধ ভাঙ্গা কান্নায়। সালাম, সালাম বলে চিৎকার করে উঠি।

🔹ছয়:
হত্যা। খুন। নির্মম ভাবে খুন।

কী পাশবিকতা! হৃদয়হীন পাষন্ডের বর্বরোচিত কাজ।

ওরা কেড়ে নিল আল্লাহর পথের কাফেলার এক নিরস্ত্র সৈনিকের প্রাণ। কেড়ে নিল চিরদিনের মত। ফুটবার পূর্বেই ঝরিয়ে দেয়া হলো পলাশ ইউনিয়নের এক রক্তলাল পলাশকে।
হঠাৎ ছন্দ পতনের মত বৃন্তচ্যুত হলো রূপের মাঝেও অপরূপ অর্ধফুটন্ত পলাশ, যে পলাশ প্রস্ফুটিত হলে তার সৌন্দর্যে দূরীভূত হত সকল কালিমা।
মুখোরিত হত জনপথ।

🔹সাত:
ভুলি নাই। ভুলতে পারছি না। পারবও না।

সালাম হারানোর যাতনা আজও মনে দোলা দিয়ে যায়। হৃদয় তন্ত্রীতে বার বার আলোড়িত হয় একটি নাম। একটি ইতিহাস। একটি প্রেরণা। সালাম শুধুই সালাম। শুধু আব্দুস সালাম আজাদ।

চোয়াল শক্ত হয় আসে।

শোধ নেব। প্রতিশোধ। শোনিতের শোধ। খুনের শোধ।

কিন্তু কীভাবে?

আর দুঃখ নয়। অশ্রু নয়। আহাজারী নয়।
শপথ নিই বজ্র কঠোর।

ইসলামী সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমেই শোধ নিই খুনের, সকল শহীদের রক্তের……………।

….

সাবেক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক, সিলেট শহর শিবির

………

সূত্র:
সোনালী সম্ভাষণ
(বরণ উৎসব’৯৯ স্মারক)
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
মদন মোহন কলেজ শাখা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শহীদ আব্দুস সালাম আজাদ স্মরণে

▪️একটি রক্ত পলাশের বৃন্তচ্যুতির উপাখ্যান▪️

আপডেট সময় : ০১:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

🔹এক:

বাঁচাও! বাঁ-চাঁ-ও।
প্রভু! বাঁচাও! হে প্রভু!

আটাশি সালের মধ্যভাগ। আব্দুল হক স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। সেখানে তালাবদ্ধ আল্লাহর এক সৈনিক। নাম মারফত আলী। অকথ্যভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন সন্ত্রাসীদের হাতে।

সংগঠনের অফিস।
মজলুম সাথীরা আহাজারী করছে। মোনাজাতের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ছে কান্নায়। প্রিয় ভাইকে উদ্ধারের জন্য ব্যাকুল সবাই।

আমি তখন কর্মী। নবম শ্রেণীতে পড়ি। অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। সাথে আরও অনেক। অপেক্ষায়- দায়িত্বশীলের নির্দেশের।

একটি কণ্ঠ বার বার উচ্চকিত হচ্ছে- আমাদের নির্দেশ দিন। অনুমতি দিন। উদ্ধার করব। মারফত ভাইকে উদ্ধার করব।

উচ্চকিত কন্ঠে আকর্ষিত হই সেদিকে। অসীম সাহসী তেজোদ্দীপ্ত কে এই যুবক? কে উনি? ওমর? আলী হায়দার? বখতিয়ার? তীতুমীর? হৃদয় তন্ত্রীতে উঠে প্রশ্নের ঝড়। হাত বাড়াতেই উত্তর আসে, আমি সালাম। কলেজে পড়ি।

🔹দুই:
আটাশী সালের ছয় নভেম্বর। গোবিন্দগঞ্জ রেল গেইট পয়েন্ট। সূর্য পশ্চিমের লালে ডুব দিচ্ছে।
রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ছে সবদিকে। বাতাসে বাতাসে জানান দিচ্ছে শীতের। কি সুন্দর শীতল বাতাস।
আহা শান্তি! কি শান্তি!

: পোষ্টার। একটি পোষ্টার!
ওদের সহ্য হচ্ছে না। ওরা কেড়ে নিতে চায়। গায়ে পড়েই শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে চায়।
শেষ পর্যন্ত আক্রমণ করেই বসল। যথার্থ জবাব পেল ওরা। গুটি কয়েক মুজাহিদের মিলিত উচ্চারণ। তাকবিরের শ্লোগান। মিলিত প্রচেষ্টা-আল্লাহর পথে।

বিজয় আমাদের। জয়তো সত্যের।
অনেক তাগুতি পালায়। পালিয়ে যায়।

🔹তিন:
সূর্য হারিয়ে যায়। সন্ধ্যা নামে। অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় ধরণী। রাত আসে ছমছমে আতংক নিয়ে। আক্রমণ।

তাড়া খাওয়া কুকুরেরা আবারো আক্রমণ করতে চায়। তারা অস্ত্র মওজুত করছে। সংঘটিত হচ্ছে। আমরা মাত্র ক’জন। আমি, আপ্তাব ভাই, সফিক ভাই, লোকমান………। আমরাও প্রস্তুত। হাত তুলি মা’বুদের দরবারে।

হে পরওয়ারদিগার…..।
সে রাত্রে আর কিছু হয়নি।

🔹চার:
সাত নভেম্বর।
সকাল। অপূর্ব সুন্দর সকাল। পাখিদের প্রাণ উজাড় করা গান। মাঠে তরতাজা ঘাস। ঘাসের ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশির কণা। তার উপর রোদের ঝিলিমিলি খেলা। কতই না সুন্দর। কি সুন্দর। তার পরও কি যেন এক শূন্যতা। ভীষণ শূন্যতা। ধূ-ধূ প্রান্তর। নীল যন্ত্রণায় যেন কাতরাচ্ছে সুন্দর প্রভাত।

বিচারের বাণী কাঁদছে। নিরবে নিভৃতে কাঁদছে।

আল্লাহর সৈনিকরা ঘুরছে। ঘুরছে বিচার চেয়ে চেয়ে। আমার আসতে দেরী হয়ে যায়। এসে দেখি রেজা ভাইকে। সবে মাত্র খাওয়া সেরেছেন। চিন্তার সুস্পষ্ট ছাপ তার চেহারায়। তার পরও মুখে হাসি টেনে বললেন-

: দেরী যে হয়ে গেল?

: এখন কি করতে পারি। অপরাধীর মত জবাব দেই।

: আচ্ছা ঠিক আছে। জালাল সাহেবের বাড়ীতে আবুল ভাই (তৎকালীন সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি) আছেন। তোমাকে একটু সতর্ক হয়ে যেতে হবে। গিয়ে বলো- আমাদের ভাইরা গণসংযোগে আছেন। তারা এখন ফিরবেন কিনা? কখন কি ভাবে ফিরতে হবে?

যথারীতি খবর পৌঁছাই। কিছু নির্দেশনা নিয়ে ফিরছি। তার আগেই তারা ফিরে আসেন। অতিক্রম করেন গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট। ছুটলেন পশ্চিম দিকে। হেঁটে হেঁটে। অফিসের উদ্দেশ্যে। রাস্তার পাশেই ভি,পি’র বাড়ী। সেখানে আছে সংগঠিত শত্রুর দল। আছে সত্য বিরোধী সন্ত্রাসীরা। খুনের নেশায় মত্ত নরপশুরা। হায়েনারা।

সেখানেই আক্রান্ত হন আমাদের ভাইয়েরা। পয়েন্টে এসে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি।। আমার দিকে লম্বা দা হাতে তেড়ে আসে সন্ত্রাসী আজিজ। কৌশলে প্রাণে বাঁচলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে দৃষ্ট অবস্থার জানান দেই আবুল ভাইকে। আবুল ভাই বের হন। সাথে আমি, আইনুদ্দিন শাহীন ভাই (আলীয়া মাদরাসা, মজলুম মুজাহিদদের বন্ধু)…. । এরপর যোগ হন বাবলু ভাই। রাস্তায় উঠেই দেখি একটি রিক্সা আসছে। রিক্সায় রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত রেজা ভাই, জুলহাস ভাই আর সালাম ভাই।

আপ্তাব ভাই, বাবলু ভাই, লোকমান … নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু মারাত্মক আহত হন জুলহাস ভাই ও সালাম ভাই। তাদেরকে রিক্সায় তুলে দিতে এসে আহত হন রেজা ভাই।

তাদের রক্তে লাল হল পীচ ঢালা কালো পথ। রাস্তার দু’ধারের ঘাসও ধারণ করল রক্তবর্ণ। যেন রক্তলাল পলাশের পাপড়ির প্রলেপ। প্রথমে পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তারপর ট্রাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ট্রাকের উপর আহত সালাম আর্তনাদ করছিলেন- পানি পা-নি পা……….বলে।

🔹পাঁচ:
আসরের নামাজ শেষে বসে আছি জানালার ধারে। গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন। ভাবছি আর ভাবছি। চেয়ে দেখছি পাখিদের নীড়ে ফিরার দৃশ্য। রক্তলাল সূর্যের দৃশ্য। মৃদু বাতাসের মমতার অবগাহনে এলিয়ে দেই ক্লান্ত দেহ।
কারো চিৎকারে হতবম্ব হয়ে পড়ি। ইথারে ইথারে কানে ভেসে আসে শহীদ,,,,, । সালাম ভাই শহীদ হয়েছেন। শহীদ,,,,।
হঠাৎ যেন পাখির নীড়ে ফেরা বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলের উজ্জল সূর্য ফিকে হয়ে আসে। বন্ধ হয়ে যায় বাতাস।
সমস্ত প্রকৃতি যেন এক যোগে বলছে-
হায় সালাম! হায় সালাম!
নীল বেদনায় হয়ে পড়ি বাকরুদ্ধ। হৃদয়ে অনুভব করি তীব্র যন্ত্রণা। অসীম বেদনা। আপ্লুত হই বাঁধ ভাঙ্গা কান্নায়। সালাম, সালাম বলে চিৎকার করে উঠি।

🔹ছয়:
হত্যা। খুন। নির্মম ভাবে খুন।

কী পাশবিকতা! হৃদয়হীন পাষন্ডের বর্বরোচিত কাজ।

ওরা কেড়ে নিল আল্লাহর পথের কাফেলার এক নিরস্ত্র সৈনিকের প্রাণ। কেড়ে নিল চিরদিনের মত। ফুটবার পূর্বেই ঝরিয়ে দেয়া হলো পলাশ ইউনিয়নের এক রক্তলাল পলাশকে।
হঠাৎ ছন্দ পতনের মত বৃন্তচ্যুত হলো রূপের মাঝেও অপরূপ অর্ধফুটন্ত পলাশ, যে পলাশ প্রস্ফুটিত হলে তার সৌন্দর্যে দূরীভূত হত সকল কালিমা।
মুখোরিত হত জনপথ।

🔹সাত:
ভুলি নাই। ভুলতে পারছি না। পারবও না।

সালাম হারানোর যাতনা আজও মনে দোলা দিয়ে যায়। হৃদয় তন্ত্রীতে বার বার আলোড়িত হয় একটি নাম। একটি ইতিহাস। একটি প্রেরণা। সালাম শুধুই সালাম। শুধু আব্দুস সালাম আজাদ।

চোয়াল শক্ত হয় আসে।

শোধ নেব। প্রতিশোধ। শোনিতের শোধ। খুনের শোধ।

কিন্তু কীভাবে?

আর দুঃখ নয়। অশ্রু নয়। আহাজারী নয়।
শপথ নিই বজ্র কঠোর।

ইসলামী সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমেই শোধ নিই খুনের, সকল শহীদের রক্তের……………।

….

সাবেক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক, সিলেট শহর শিবির

………

সূত্র:
সোনালী সম্ভাষণ
(বরণ উৎসব’৯৯ স্মারক)
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
মদন মোহন কলেজ শাখা।