ঢাকা ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শাল্লায় চাচাকে পিতা বানিয়ে পুলিশে চাকুরী নিলো ভাতিজা

শাল্লা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৪:৫২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 173
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের নিরঞ্জন চন্দ্র সরকারের ছেলে নিলয় সরকার তার চাচা মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকারকে পিতা ও চাচী নিয়তি রাণী সরকারকে মাতা বানিয়ে কোটা সুবিধা নিয়ে চাকরী পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশে। এ নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বর্তমানে তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)তে কর্মরত আছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার ও নিয়তি রাণী সরকার দম্পতি মুলত নি:সন্তান। মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার চতুর মানুষ। তার আপন ভাই নিরঞ্জন সরকারের ছেলে নিলয় সরকারকে নিজের সন্তান বানিয়ে পুলিশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরী পেতে সহায়তা করেন। ২০২৩ সালের ১ম ব্যাচে কনস্টেবল পদে নিয়োগ হয় নিলয়ের। বর্তমানে তিনি এসএমপি (পিওএম) আলমপুরে কর্মরত রয়েছেন যার বিপি নম্বর ০২২৩২৪৩২০৪। এদিকে, নিখিল সরকারের আরেক সহোদর নিবির সরকারের মেয়ে কাকলী রাণী সরকারকেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা দিতে পিতার নাম নিখিল সরকার দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে। কোটা সুবিধার জন্য তার ভাইদের একাধিক সন্তানদের ডকুমেন্টারি পিতা হিসেবে নিখিল বাবুর নাম রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিলয় সরকার মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন তার মামার বাড়ি (নিরঞ্জন সরকারের শ্বশুর বাড়ি) হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর বসন্ত কুমার পাবলিক বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন শাল্লা সরকারি ডিগ্রি কলেজে। মামার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করার কারণে মানুষ নিলয়কে এলাকায় কম দেখলে তারা জানেন সে নিরঞ্জন বাবুর ছেলে। চতুর নিখিল সরকার লোক জানাজানি হতে পারে এমন ভয়ে নিলয়ের মামার বাড়িতে পড়াশোনা করিয়েছেন যেন তার কাগজপত্রে পিতা কে সেটা কেউ জানতে না পারে। ২০২৩ সালে পুলিশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের পর মানুষ কিছুটা জানতে পারে চাচকে পিতা বানিয়ে চাকরি নেয়া হয়েছে। তবুও তার প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি।

এ বিষয়ে এলাকার একাধিক সচেতন নাগরিক জানান, নিখিল বাবুর কোন সন্তান নেই। তিনি কিভাবে নিলয়কে ছেলে বানালেন আমরা জানিনা। এতোদিন তার ভয়ে মুখ বন্ধ ছিলো সবার। স্থানীয় পঞ্চায়েত ব্যক্তি হরিভক্ত দাস বলেন, নিখিল বাবু আমার আত্মীয়। তিনি নিলয়কে কিভাবে কি করছেন আমরা জানিনা। সে নিখল বাবুর ছেলে নয় নিরঞ্জন বাবুর ছেলে। এটা এলাকার সবাই জানে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নিলয় সরকার মুঠোফোনে জানান, আমাকে ছোট বেলায় আমার বাবা (নিখিল সরকার) জন্মদাতা পিতা নিরঞ্জন বাবুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছে। তবে তার আপন মামার বাড়িতে (নিরঞ্জন সরকারের শ্বশুর বাড়ি) থেকে কেন পড়াশোনা করেছে জানতে চাইলে বলেন, আমার সুবিধার জন্য ওখানে ছিলাম।

মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার বলেন, মুসলিম ও হিন্দু ধর্মে বিধান আছে দত্তক নেয়ার। নিলয়কে আমি দত্তক এনেছি। তবে সরকারী কোন বৈধতা নেই বলেও জানান তিনি। তার একাধিক ভাইয়ের সন্তান নিজের সন্তান বানিয়ে এনআইডি কার্ড করার বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি নন।

এ বিষয়ে আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নোমান জানান, আমি এলাকায় খোঁজ নিয়েছি, তিনি নি:সন্তান। চাকরির বিষয়টা আমি অবগত নই। সিলেটের সিটিএসবি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও মিডিয়া উইং মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, এরকম সমস্যা নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে ইতোমধ্যে। এরপরও আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

শাল্লায় চাচাকে পিতা বানিয়ে পুলিশে চাকুরী নিলো ভাতিজা

আপডেট সময় : ০৪:৫২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের নিরঞ্জন চন্দ্র সরকারের ছেলে নিলয় সরকার তার চাচা মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকারকে পিতা ও চাচী নিয়তি রাণী সরকারকে মাতা বানিয়ে কোটা সুবিধা নিয়ে চাকরী পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশে। এ নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বর্তমানে তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)তে কর্মরত আছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার ও নিয়তি রাণী সরকার দম্পতি মুলত নি:সন্তান। মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার চতুর মানুষ। তার আপন ভাই নিরঞ্জন সরকারের ছেলে নিলয় সরকারকে নিজের সন্তান বানিয়ে পুলিশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরী পেতে সহায়তা করেন। ২০২৩ সালের ১ম ব্যাচে কনস্টেবল পদে নিয়োগ হয় নিলয়ের। বর্তমানে তিনি এসএমপি (পিওএম) আলমপুরে কর্মরত রয়েছেন যার বিপি নম্বর ০২২৩২৪৩২০৪। এদিকে, নিখিল সরকারের আরেক সহোদর নিবির সরকারের মেয়ে কাকলী রাণী সরকারকেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা দিতে পিতার নাম নিখিল সরকার দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে। কোটা সুবিধার জন্য তার ভাইদের একাধিক সন্তানদের ডকুমেন্টারি পিতা হিসেবে নিখিল বাবুর নাম রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিলয় সরকার মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন তার মামার বাড়ি (নিরঞ্জন সরকারের শ্বশুর বাড়ি) হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর বসন্ত কুমার পাবলিক বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন শাল্লা সরকারি ডিগ্রি কলেজে। মামার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করার কারণে মানুষ নিলয়কে এলাকায় কম দেখলে তারা জানেন সে নিরঞ্জন বাবুর ছেলে। চতুর নিখিল সরকার লোক জানাজানি হতে পারে এমন ভয়ে নিলয়ের মামার বাড়িতে পড়াশোনা করিয়েছেন যেন তার কাগজপত্রে পিতা কে সেটা কেউ জানতে না পারে। ২০২৩ সালে পুলিশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের পর মানুষ কিছুটা জানতে পারে চাচকে পিতা বানিয়ে চাকরি নেয়া হয়েছে। তবুও তার প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি।

এ বিষয়ে এলাকার একাধিক সচেতন নাগরিক জানান, নিখিল বাবুর কোন সন্তান নেই। তিনি কিভাবে নিলয়কে ছেলে বানালেন আমরা জানিনা। এতোদিন তার ভয়ে মুখ বন্ধ ছিলো সবার। স্থানীয় পঞ্চায়েত ব্যক্তি হরিভক্ত দাস বলেন, নিখিল বাবু আমার আত্মীয়। তিনি নিলয়কে কিভাবে কি করছেন আমরা জানিনা। সে নিখল বাবুর ছেলে নয় নিরঞ্জন বাবুর ছেলে। এটা এলাকার সবাই জানে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নিলয় সরকার মুঠোফোনে জানান, আমাকে ছোট বেলায় আমার বাবা (নিখিল সরকার) জন্মদাতা পিতা নিরঞ্জন বাবুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছে। তবে তার আপন মামার বাড়িতে (নিরঞ্জন সরকারের শ্বশুর বাড়ি) থেকে কেন পড়াশোনা করেছে জানতে চাইলে বলেন, আমার সুবিধার জন্য ওখানে ছিলাম।

মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার বলেন, মুসলিম ও হিন্দু ধর্মে বিধান আছে দত্তক নেয়ার। নিলয়কে আমি দত্তক এনেছি। তবে সরকারী কোন বৈধতা নেই বলেও জানান তিনি। তার একাধিক ভাইয়ের সন্তান নিজের সন্তান বানিয়ে এনআইডি কার্ড করার বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি নন।

এ বিষয়ে আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নোমান জানান, আমি এলাকায় খোঁজ নিয়েছি, তিনি নি:সন্তান। চাকরির বিষয়টা আমি অবগত নই। সিলেটের সিটিএসবি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও মিডিয়া উইং মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, এরকম সমস্যা নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে ইতোমধ্যে। এরপরও আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা