সুনামগঞ্জ ১২:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বোরো ধান সংগ্রহে মিলার ও খাদ‍্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা সুনামগঞ্জে বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র বৃদ্ধির দাবি বিএনপির সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ তাহিরপুরে ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল চালকের ঝড়ে উড়ে গেল ভূমিহীন পরিবারের ঘর, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই ট্রাইবেকারে জিতে থ্রি ব্রাদার্স স্পোর্টিং ক্লাব ফাইনালে শান্তিগঞ্জে যুবলীগ নেতা শহীদ মিয়া গ্রেফতার দোয়ারায় সুরমা ইউনিয়নে উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন ফ্যাসিস্টের পতন হলেও বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে : মিজান চৌধুরী তাহিরপুরে ইভটিজিংয়ের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী মাথা ও হাতে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাঃ কিছু কথা-১

মোঃ নাসিম হাসান
  • আপডেট সময় : ০১:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫ ১২২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

Written on 16 January 2019

২০১০ সাল। শাবিপ্রবিতে প্রথম বর্ষে সবেমাত্র ক্লাশ শুরু করেছি। প্রথম সেমিস্টারে মাইনর কোর্স হিসেবে জেনারেল কেমিস্ট্রি ক্লাশ করছিলাম। কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের একজন ম্যাডাম ক্লাশ নিচ্ছিলেন। প্রায় ৩০/৩৫ জন স্টুডেন্ট ক্লাসে ছিল।

সেখান থেকে আমার এক বন্ধু কোনো কারণে হেসে উঠেছিল। হাসিটা অট্রহাসি ছিলনা কিন্তু ম্যাডামের কান পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ম্যাডাম তাকে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বললেন। সে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলো, কিন্তু ম্যাডাম নাছোড়বান্দা।

আমরা সবাই মিলে ম্যাডামকে রিকুয়েস্ট করলাম কিন্তু কোনো কাজ হলনা। সে পরদিন আবার ক্লাসে আসলো। ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকে প্রথমেই তাকে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন। বললেন আমার কোর্সে তুমি এবার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবানা।

আশ্চর্য হয়ে গেলাম এই কারণে যে, এতো বড়ো জায়গায় (ম্যাডাম তখন সম্ভবত অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন) থেকে একজন ছাত্রের ছোট একটা ভুল ম্যাডাম ক্ষমা করতে পারলেন না। অগত্যা আমার বন্ধুটি এক বছর পরে এই কোর্সের পরীক্ষা দিয়েছিল যদিও সে অনেকদিন ভালোই মেন্টাল ডিপ্রেশনে ভুগেছিল।

২০১৭ সাল। জার্মানির Rhine-Waal University of Applied Sciences এর শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম বর্ষের ক্লাশ করছিলাম। “Sustainable Learning-Learning Sustainability” কোর্সের গ্রুপ প্রেজেন্টেশন চলছিল। ক্লাশে প্রায় ৮০/৯০ জন শিক্ষার্থী। প্রতি গ্রুপে পাঁচ জন করে প্রেজেন্টেশন করছিল।

একটি গ্রুপের প্রেজেন্টেশনের শুরুতে আমার ক্লাশমেট জার্মান মেয়ে welcome everyone to…বলেই সেই হাসি শুরু করলো। কিছুক্ষণ হেসে আবার প্রেজেন্টেশন শুরু করলো। এবার welcome everyone to our presentation বলেই আবার হাসলো। আমি স্যারের দিকে লক্ষ্য করলাম। তিনিও হাসলেন আর মেয়েটিকে ইজি হয়ে আবার শুরু করতে বললেন। কোনো ধমক দিলেননা।

তৃতীয়বারও সে হাসার কারণে মূল টপিকস-এ যেতে পারলনা। এবার সে নিজ থেকেই তার গ্রুপের দ্বিতীয় মেম্বার-কে শুরু করতে অনুরোধ করলো। স্যার তাকে ক্লাশ থেকে বের করে দিলেন না আর সাথে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবানা বলে কোনো হুমকিও দিলেন না। শুধু বললেন, “Be at ease. Please try to do well next time.”

উপসংহার:
আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কিছু শিক্ষকের (আমি সব শিক্ষককে বুঝাচ্ছিনা) একগুয়েমি, স্টুডেন্ট-দের প্রতি দূর্ব্যবহার আর পরীক্ষায় নাম্বার বৈষম্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই আত্নঘাতী হয়ে উঠে। আর যার দায় পুরোটা না হলেও অনেকাংশে এই সব শিক্ষকদের উপরই বর্তায়। যদিও আত্নহত্যা কোনো সমাধান নয়। প্রতিবাদই হোক সমাধানের ভাষা।

(দ্বিতীয় পর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আমি যে হয়রানির শিকার হয়েছি তা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করব)

—-

সাবেক শিক্ষার্থী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাঃ কিছু কথা-১

আপডেট সময় : ০১:১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

Written on 16 January 2019

২০১০ সাল। শাবিপ্রবিতে প্রথম বর্ষে সবেমাত্র ক্লাশ শুরু করেছি। প্রথম সেমিস্টারে মাইনর কোর্স হিসেবে জেনারেল কেমিস্ট্রি ক্লাশ করছিলাম। কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের একজন ম্যাডাম ক্লাশ নিচ্ছিলেন। প্রায় ৩০/৩৫ জন স্টুডেন্ট ক্লাসে ছিল।

সেখান থেকে আমার এক বন্ধু কোনো কারণে হেসে উঠেছিল। হাসিটা অট্রহাসি ছিলনা কিন্তু ম্যাডামের কান পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ম্যাডাম তাকে ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বললেন। সে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলো, কিন্তু ম্যাডাম নাছোড়বান্দা।

আমরা সবাই মিলে ম্যাডামকে রিকুয়েস্ট করলাম কিন্তু কোনো কাজ হলনা। সে পরদিন আবার ক্লাসে আসলো। ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকে প্রথমেই তাকে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন। বললেন আমার কোর্সে তুমি এবার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবানা।

আশ্চর্য হয়ে গেলাম এই কারণে যে, এতো বড়ো জায়গায় (ম্যাডাম তখন সম্ভবত অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন) থেকে একজন ছাত্রের ছোট একটা ভুল ম্যাডাম ক্ষমা করতে পারলেন না। অগত্যা আমার বন্ধুটি এক বছর পরে এই কোর্সের পরীক্ষা দিয়েছিল যদিও সে অনেকদিন ভালোই মেন্টাল ডিপ্রেশনে ভুগেছিল।

২০১৭ সাল। জার্মানির Rhine-Waal University of Applied Sciences এর শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম বর্ষের ক্লাশ করছিলাম। “Sustainable Learning-Learning Sustainability” কোর্সের গ্রুপ প্রেজেন্টেশন চলছিল। ক্লাশে প্রায় ৮০/৯০ জন শিক্ষার্থী। প্রতি গ্রুপে পাঁচ জন করে প্রেজেন্টেশন করছিল।

একটি গ্রুপের প্রেজেন্টেশনের শুরুতে আমার ক্লাশমেট জার্মান মেয়ে welcome everyone to…বলেই সেই হাসি শুরু করলো। কিছুক্ষণ হেসে আবার প্রেজেন্টেশন শুরু করলো। এবার welcome everyone to our presentation বলেই আবার হাসলো। আমি স্যারের দিকে লক্ষ্য করলাম। তিনিও হাসলেন আর মেয়েটিকে ইজি হয়ে আবার শুরু করতে বললেন। কোনো ধমক দিলেননা।

তৃতীয়বারও সে হাসার কারণে মূল টপিকস-এ যেতে পারলনা। এবার সে নিজ থেকেই তার গ্রুপের দ্বিতীয় মেম্বার-কে শুরু করতে অনুরোধ করলো। স্যার তাকে ক্লাশ থেকে বের করে দিলেন না আর সাথে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবানা বলে কোনো হুমকিও দিলেন না। শুধু বললেন, “Be at ease. Please try to do well next time.”

উপসংহার:
আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কিছু শিক্ষকের (আমি সব শিক্ষককে বুঝাচ্ছিনা) একগুয়েমি, স্টুডেন্ট-দের প্রতি দূর্ব্যবহার আর পরীক্ষায় নাম্বার বৈষম্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থীই আত্নঘাতী হয়ে উঠে। আর যার দায় পুরোটা না হলেও অনেকাংশে এই সব শিক্ষকদের উপরই বর্তায়। যদিও আত্নহত্যা কোনো সমাধান নয়। প্রতিবাদই হোক সমাধানের ভাষা।

(দ্বিতীয় পর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আমি যে হয়রানির শিকার হয়েছি তা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করব)

—-

সাবেক শিক্ষার্থী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট