ঢাকা ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দুর্নীতি রুখতে পারলে পাঁচ বছরেই সুনামগঞ্জের উন্নয়ন সম্ভব – তোফায়েল আহমদ খান পুনরায় আমীর নির্বাচিত ডা. শফিকুর রহমান জগন্নাথপু‌রে কি‌শোরকণ্ঠ মেধাবৃ‌ত্তি পরীক্ষা ২০২৫ অনুষ্ঠিত কলকাতায় মারা গেলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কনিকা বিশ্বাস বালু লুট,অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধে এনসিপির মানববন্ধন অধ্যক্ষ অপসারণের দাবিতে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন সকল দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে—  বিএসপি নেতা কাজী আশিকুর রহমান হাশেমী উগ্র কর্মকাণ্ড ও গুমের অভিযোগে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি নাগরিকসমাজের হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার প্রয়োজন – তোফায়েল আহমদ খান ভিজিডি উপকারভোগীদের ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তাহিরপুরের শ্রীপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

প্রযুক্তির ছোয়ায় কাঠের লাঙ্গল এখন স্মৃতি

বিশেষ প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় : ০৫:০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 206
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রযুক্তির ছোয়ায় কাঠের লাঙ্গল এখন স্মৃতি/আধুনিক প্রযুক্তির যুগে হারিয়ে গেছে লাঙ্গল জোয়াল!

 

 “পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু এটা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিল। প্রতিটি ঘরে ঘরেই ছিল হালচাষ করার গরু ও লাঙ্গল জোয়াল।

 

কিন্তু আধুনিক কলের লাঙ্গলের যুগের কাঠের লাঙ্গল এখন জাদুঘরে” লাঙ্গল নিয়ে এমন কথাই বলেন উপজেলার মাটিয়ান হাওর এলাকার কৃষক হারুন  মিয়া।

বিজ্ঞান ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। সেই অগ্রযাত্রা থেমে নেই কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও। বর্তমান ডিজিটাল সভ্যতার যুগে উন্নয়নের ছোঁয়া দিতে আবিস্কৃত হয়েছে নামী দামী হাল চাষের যান্ত্রিক লোহার লাঙ্গল ও ট্রাক্টর।

 

 হালচাষ, বীজ বপন, রোপন ঝারাই মাড়াই করার যন্ত্র। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙ্গল, বাঁশের মই ও জোয়াল।

 

এক সময় কৃষি কাজে এক টুকরো লোহার ফাল আর কাঠমিস্ত্রির হাতে তৈরী কাঠের লাঙ্গল, বাঁশের জোয়াল, মই ও শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে গরু, ঘোড়া, মহিষ দিয়ে জমি চাষ করতেন গ্রামের কৃষকরা।

খুব বেশি দিনের কথা নয়, কয়েক বছর আগেও গরুর কাধে লাঙ্গল- জোয়াল আর মই তাহিরপুরের বিভিন্ন গ্রামের জমিতে হরহামেশাই দেখা যেত। চাষিদের অনেকে নিজের জমিতে হালচাষ করার পাশাপাশি অন্যের জমি চাষিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু অর্থও উপার্জন করতেন।

 

তারা হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যেও কখনো কখনো ফুরফুরে আনন্দে মনের সুখে ভাওয়াইয়া, পল্লী গীতি ও ভাটিয়ালি গান গেয়ে গেয়ে জমিতে চাষ দিতেন। এখন হাতে গোনা দু-একজন কৃষককে পাওয়া যায়। আর চাষ কাজের জন্য হালের গরু ছোট থাকাকালে পোষ মানাতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতো। ভোররাত থেকে শুরু করে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে হালচাষ করতেন তারা।

 

 এক সময় গ্রামবাংলার কৃষকরা এক টুকরো লোহার ফাল আর কাঠ দিয়ে তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল ও বাঁশের তৈরি মই ব্যবহার করে গরুর সাহায্যে জমি চাষ করতেন। এখন সেই লাঙ্গল, জোয়াল, মই এবং গরুর স্থান দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার ট্রিলার বা কলের লাঙ্গল।

 

 অথচ কৃষিকাজে এ অঞ্চলের মানুষ যুগের পর যুগ ধরে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হতো অন্যদিকে কৃষকের অর্থ সাশ্রয় হতো। এছাড়া হাল চাষের সময় গরু যাতে কোনো খাদ্য খেতে না পারে, সেদিক লক্ষ্য রেখে পাট, বেত, বাঁশের কঞ্চি অথবা লতা জাতীয় এক ধরনের গাছ দিয়ে তৈরি কাপ গরুর মুখে বেঁধে দেয়া হত।

 

আর তাড়াতাড়ি হাল চালানোর জন্য ব্যবহার করেন বাঁশের বা শক্ত কোনো লাঠি দিয়ে তৈরি পাজন (লাঠি)। শনির হাওর এলাকার প্রান্তিক কৃষক মনির হোসেন বলেন, কলের লাঙ্গল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না। ফলন কম হয়। কাঠের লাঙ্গল গভীরে প্রবেশ করে। পরিবেশবান্ধব। খরচও কম। ফলন বেশি হয়।

 

চাষিরা জমিতে হাল নিয়ে আসার আগে চিড়া-গুড় অথবা মুড়ি-মুড়কি দিয়ে হালকা পানি খাবার খেয়ে নিতেন।

 

তবে হুকা ও পাতা বা কাগজের তৈরি বিড়ি খাওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত ছিল বলে মনে করেন অনেকে। আবার একটানা হট হট, ডাই ডাই, বাঁই বাঁই, বস বস আর উঠ উঠ করে যখন ক্লান্তি আসত, তখন সূর্য প্রায় মাথার ওপর খাড়া হয়ে উঠত।

 

 এ সময় চাষিরা সকালের নাস্তার জন্য হালচাষে বিরতি রেখে জমির আইলের ওপর বসতেন।

তাদের নাস্তার ধরনটাও ছিল ঐতিহ্যবাহী। এক থালা পান্তা ভাতের সঙ্গে কাঁচা অথবা শুকনো মরিচ, সরিষার খাঁটি তেল আর আলু ভর্তা। কিন্তু আজকাল সময়ের আবর্তে তাহিরপুরে থেকে এসব গরুর হাল, কৃষি উপকরণ কাঠের লাঙ্গল, জোয়াল, বাঁশের মই হারিয়ে যেতে বসেছে।

 

কাঠের লাঙ্গলের স্থান দখল করেছে যান্ত্রিক লাঙ্গল। এতে অল্প সময়ে অধিক জমি চাষাবাদ করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা যুগের সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে। পুরাতন হারিয়ে যাবে নতুনরা স্থান দখল করে নিবে, এটাই স্বাভাবিক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

প্রযুক্তির ছোয়ায় কাঠের লাঙ্গল এখন স্মৃতি

আপডেট সময় : ০৫:০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

প্রযুক্তির ছোয়ায় কাঠের লাঙ্গল এখন স্মৃতি/আধুনিক প্রযুক্তির যুগে হারিয়ে গেছে লাঙ্গল জোয়াল!

 

 “পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু এটা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিল। প্রতিটি ঘরে ঘরেই ছিল হালচাষ করার গরু ও লাঙ্গল জোয়াল।

 

কিন্তু আধুনিক কলের লাঙ্গলের যুগের কাঠের লাঙ্গল এখন জাদুঘরে” লাঙ্গল নিয়ে এমন কথাই বলেন উপজেলার মাটিয়ান হাওর এলাকার কৃষক হারুন  মিয়া।

বিজ্ঞান ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। সেই অগ্রযাত্রা থেমে নেই কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও। বর্তমান ডিজিটাল সভ্যতার যুগে উন্নয়নের ছোঁয়া দিতে আবিস্কৃত হয়েছে নামী দামী হাল চাষের যান্ত্রিক লোহার লাঙ্গল ও ট্রাক্টর।

 

 হালচাষ, বীজ বপন, রোপন ঝারাই মাড়াই করার যন্ত্র। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঠের লাঙ্গল, বাঁশের মই ও জোয়াল।

 

এক সময় কৃষি কাজে এক টুকরো লোহার ফাল আর কাঠমিস্ত্রির হাতে তৈরী কাঠের লাঙ্গল, বাঁশের জোয়াল, মই ও শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে গরু, ঘোড়া, মহিষ দিয়ে জমি চাষ করতেন গ্রামের কৃষকরা।

খুব বেশি দিনের কথা নয়, কয়েক বছর আগেও গরুর কাধে লাঙ্গল- জোয়াল আর মই তাহিরপুরের বিভিন্ন গ্রামের জমিতে হরহামেশাই দেখা যেত। চাষিদের অনেকে নিজের জমিতে হালচাষ করার পাশাপাশি অন্যের জমি চাষিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু অর্থও উপার্জন করতেন।

 

তারা হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যেও কখনো কখনো ফুরফুরে আনন্দে মনের সুখে ভাওয়াইয়া, পল্লী গীতি ও ভাটিয়ালি গান গেয়ে গেয়ে জমিতে চাষ দিতেন। এখন হাতে গোনা দু-একজন কৃষককে পাওয়া যায়। আর চাষ কাজের জন্য হালের গরু ছোট থাকাকালে পোষ মানাতে বেশ কিছুদিন সময় লাগতো। ভোররাত থেকে শুরু করে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে হালচাষ করতেন তারা।

 

 এক সময় গ্রামবাংলার কৃষকরা এক টুকরো লোহার ফাল আর কাঠ দিয়ে তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল ও বাঁশের তৈরি মই ব্যবহার করে গরুর সাহায্যে জমি চাষ করতেন। এখন সেই লাঙ্গল, জোয়াল, মই এবং গরুর স্থান দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত পাওয়ার ট্রিলার বা কলের লাঙ্গল।

 

 অথচ কৃষিকাজে এ অঞ্চলের মানুষ যুগের পর যুগ ধরে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হতো অন্যদিকে কৃষকের অর্থ সাশ্রয় হতো। এছাড়া হাল চাষের সময় গরু যাতে কোনো খাদ্য খেতে না পারে, সেদিক লক্ষ্য রেখে পাট, বেত, বাঁশের কঞ্চি অথবা লতা জাতীয় এক ধরনের গাছ দিয়ে তৈরি কাপ গরুর মুখে বেঁধে দেয়া হত।

 

আর তাড়াতাড়ি হাল চালানোর জন্য ব্যবহার করেন বাঁশের বা শক্ত কোনো লাঠি দিয়ে তৈরি পাজন (লাঠি)। শনির হাওর এলাকার প্রান্তিক কৃষক মনির হোসেন বলেন, কলের লাঙ্গল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না। ফলন কম হয়। কাঠের লাঙ্গল গভীরে প্রবেশ করে। পরিবেশবান্ধব। খরচও কম। ফলন বেশি হয়।

 

চাষিরা জমিতে হাল নিয়ে আসার আগে চিড়া-গুড় অথবা মুড়ি-মুড়কি দিয়ে হালকা পানি খাবার খেয়ে নিতেন।

 

তবে হুকা ও পাতা বা কাগজের তৈরি বিড়ি খাওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত ছিল বলে মনে করেন অনেকে। আবার একটানা হট হট, ডাই ডাই, বাঁই বাঁই, বস বস আর উঠ উঠ করে যখন ক্লান্তি আসত, তখন সূর্য প্রায় মাথার ওপর খাড়া হয়ে উঠত।

 

 এ সময় চাষিরা সকালের নাস্তার জন্য হালচাষে বিরতি রেখে জমির আইলের ওপর বসতেন।

তাদের নাস্তার ধরনটাও ছিল ঐতিহ্যবাহী। এক থালা পান্তা ভাতের সঙ্গে কাঁচা অথবা শুকনো মরিচ, সরিষার খাঁটি তেল আর আলু ভর্তা। কিন্তু আজকাল সময়ের আবর্তে তাহিরপুরে থেকে এসব গরুর হাল, কৃষি উপকরণ কাঠের লাঙ্গল, জোয়াল, বাঁশের মই হারিয়ে যেতে বসেছে।

 

কাঠের লাঙ্গলের স্থান দখল করেছে যান্ত্রিক লাঙ্গল। এতে অল্প সময়ে অধিক জমি চাষাবাদ করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা যুগের সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে। পুরাতন হারিয়ে যাবে নতুনরা স্থান দখল করে নিবে, এটাই স্বাভাবিক।