ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমাকে গুম করার পেছনে দুইটা কারণ ছিল

তানভির মাহতাব
  • আপডেট সময় : ০৩:১৭:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 110
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমাকে গুম করার পেছনে দুইটা কারণ ছিল। ১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনে যোগাদান এবং বাবা জামাতের কর্মী ছিলেন।

হেফাজতের আন্দোলনে যোগদানের কারণে যেই না জুলুম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তার চেয়েও বেশি নির্যাতনে শিকার হতে হয়েছে আমার বাবা ছিলেন একজন জামাত কর্মী। ১৪ সালে যখন গুম করা হয়েছিল আমাকে। তার দেড় বছর আগে অর্থাৎ ১২ সালের শেষের দিকে আমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জীবিত থাকতে তিনি জামাত করতেন এই অপরাধে আমার শাস্তির মাত্রাও দিগুণ হতো। আয়নাঘরে নারী বন্দীদের যৌনাঙ্গে জ্বলন্ত সিগারেটের মাথা দিয়ে ছ্যাঁক দেওয়ার কাহিনী হয়তো শুনেছেন অনেকে। সেইম প্যাটার্ন ছিল আমাকে যখন ষষ্ঠবার রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ২২৭ দিনে আমাকে রিমান্ডে নেওয়া হয় মোট ১৩বার। তার মাঝে ষষ্ঠবারের রিমান্ড ছিল যেন আমাকে উত্তপ্ত আগুনে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বা গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সেদিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যারা এসেছিল তারা প্রত্যেকেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। তাদের মনমতো উত্তর না হলে কোন কথা ছাড়াই গনহারে চড় থাপ্পড়, লাথি উষ্ঠা শুরু হয়ে যেতো। যা নরমালি কারো জন্য সহ্য করার মতো না। অল্পতেই জ্ঞান হারানোর উপক্রম হয়ে যাওয়ার মতো। সেইম অবস্থা আমারও হয়। বারবার সোজা করিয়ে চুল ধরে টানা, চড় থাপ্পড় মারার পর যখন চেয়ারে সোজা হয়ে বসতে পারছিলাম না আর। তখন এদের একজন ‘ভং ধরছে, জামাতের পোলা, বড়ো জাওড়া আছে’ এসব বলে আমার পেটের বাম সাইটে জ্বলন্ত সিগারেটের মাথা লাগিয়ে দেয় সোজা হয়ে বসতে। একদিকে সোজা হয়ে বসার মতো গায়ে জোর নেই অন্যদিকে সামনের দিকে মাথা নুয়ে সিগারেটের আগুন লাগছিল। কয়েক মিনিটের জন্য জাহান্নাম মনে হলো তখন। পরবর্তীতে যেই ব্যাথা নিয়ে বন্দী জীবন পার করি। সেই দাগ রয়ে গেছে এখনো।

আজ প্রায় দশ বছর হতে চললো, আমি আমার ছোট্ট বোনের সামনে টিশার্ট খোলার সাহস পাই না। এই দশ বছর যাবত ছোট্টবোনকে নিজেই কোলেপিঠে করে যত্ন করছি। আমাকে গুম করার পাঁচ মাসের মাথায় আম্মা হার্ট অ্যাটাক এ মারা যান। যেই সংবাদ আয়নাঘরে থাকাবস্থায় আমাকে একবারের জন্যও জানায়নি হায়েনারা। অথচ তাদের কাছে কতো শতবার রিকুয়েষ্ট করেছিলাম মা’য়ের বর্তমান অবস্থা জানাতে। এবং আমি বেচে আছি কোনোধরনের দুশ্চিন্তা যাতে না করে এই সংবাদ পৌছাতে। পায়ে ধরা থেকে শুরু করে কি না করি নাই। তাও আমার এই কথাটুকু তারা রাখলো না।

জামাতের যেসকল নেতারা ফ্যাসিবাদের সাথে সুর মেলাতে সুশীল সাজার চেষ্টা করছেন, আমার মাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন আমার কাছে? আমার বোনকে কোন জবাব দিতে পারবেন? আমার বাবা তো আপনাদের দলের কর্মীই ছিলেন। জামাতের পোলা ট্যাগ দিয়েই তো আমার পেটে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাক দিয়েছিল। সব ভুলে গেলেন আপনারা?

From Tanvir Mahtab

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

আমাকে গুম করার পেছনে দুইটা কারণ ছিল

আপডেট সময় : ০৩:১৭:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আমাকে গুম করার পেছনে দুইটা কারণ ছিল। ১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনে যোগাদান এবং বাবা জামাতের কর্মী ছিলেন।

হেফাজতের আন্দোলনে যোগদানের কারণে যেই না জুলুম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তার চেয়েও বেশি নির্যাতনে শিকার হতে হয়েছে আমার বাবা ছিলেন একজন জামাত কর্মী। ১৪ সালে যখন গুম করা হয়েছিল আমাকে। তার দেড় বছর আগে অর্থাৎ ১২ সালের শেষের দিকে আমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জীবিত থাকতে তিনি জামাত করতেন এই অপরাধে আমার শাস্তির মাত্রাও দিগুণ হতো। আয়নাঘরে নারী বন্দীদের যৌনাঙ্গে জ্বলন্ত সিগারেটের মাথা দিয়ে ছ্যাঁক দেওয়ার কাহিনী হয়তো শুনেছেন অনেকে। সেইম প্যাটার্ন ছিল আমাকে যখন ষষ্ঠবার রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ২২৭ দিনে আমাকে রিমান্ডে নেওয়া হয় মোট ১৩বার। তার মাঝে ষষ্ঠবারের রিমান্ড ছিল যেন আমাকে উত্তপ্ত আগুনে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বা গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সেদিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যারা এসেছিল তারা প্রত্যেকেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। তাদের মনমতো উত্তর না হলে কোন কথা ছাড়াই গনহারে চড় থাপ্পড়, লাথি উষ্ঠা শুরু হয়ে যেতো। যা নরমালি কারো জন্য সহ্য করার মতো না। অল্পতেই জ্ঞান হারানোর উপক্রম হয়ে যাওয়ার মতো। সেইম অবস্থা আমারও হয়। বারবার সোজা করিয়ে চুল ধরে টানা, চড় থাপ্পড় মারার পর যখন চেয়ারে সোজা হয়ে বসতে পারছিলাম না আর। তখন এদের একজন ‘ভং ধরছে, জামাতের পোলা, বড়ো জাওড়া আছে’ এসব বলে আমার পেটের বাম সাইটে জ্বলন্ত সিগারেটের মাথা লাগিয়ে দেয় সোজা হয়ে বসতে। একদিকে সোজা হয়ে বসার মতো গায়ে জোর নেই অন্যদিকে সামনের দিকে মাথা নুয়ে সিগারেটের আগুন লাগছিল। কয়েক মিনিটের জন্য জাহান্নাম মনে হলো তখন। পরবর্তীতে যেই ব্যাথা নিয়ে বন্দী জীবন পার করি। সেই দাগ রয়ে গেছে এখনো।

আজ প্রায় দশ বছর হতে চললো, আমি আমার ছোট্ট বোনের সামনে টিশার্ট খোলার সাহস পাই না। এই দশ বছর যাবত ছোট্টবোনকে নিজেই কোলেপিঠে করে যত্ন করছি। আমাকে গুম করার পাঁচ মাসের মাথায় আম্মা হার্ট অ্যাটাক এ মারা যান। যেই সংবাদ আয়নাঘরে থাকাবস্থায় আমাকে একবারের জন্যও জানায়নি হায়েনারা। অথচ তাদের কাছে কতো শতবার রিকুয়েষ্ট করেছিলাম মা’য়ের বর্তমান অবস্থা জানাতে। এবং আমি বেচে আছি কোনোধরনের দুশ্চিন্তা যাতে না করে এই সংবাদ পৌছাতে। পায়ে ধরা থেকে শুরু করে কি না করি নাই। তাও আমার এই কথাটুকু তারা রাখলো না।

জামাতের যেসকল নেতারা ফ্যাসিবাদের সাথে সুর মেলাতে সুশীল সাজার চেষ্টা করছেন, আমার মাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন আমার কাছে? আমার বোনকে কোন জবাব দিতে পারবেন? আমার বাবা তো আপনাদের দলের কর্মীই ছিলেন। জামাতের পোলা ট্যাগ দিয়েই তো আমার পেটে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাক দিয়েছিল। সব ভুলে গেলেন আপনারা?

From Tanvir Mahtab