ঢাকা ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সকল ধর্মের মানুষের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করা হবে – তোফায়েল আহমদ খান কোটি টাকার ওষুধ নষ্ট হওয়ার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি ছাতকে ইউএনও ওসি’র সাথে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ জগন্নাথপুর উপজেলা উন্নয়ন সংস্থা ইউকে’র উদ্যোগে সেলাই মেশিন বিতরণ উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন -সভাপতি তারা মিয়া, সম্পাদক ফজলুল হক ধর্মপাশায় কনে দেখতে গিয়ে নৌকাডুবি, উকিল ও শিশু কন্যার লাশ উদ্ধার দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে দেশ পিছিয়ে আছে — এডভোকেট মুহাম্মদ শামস উদ্দিন সিলেটের পাথর কুয়ারী লুটপাটে জামায়াত জড়িত নয়: প্রমাণের চ্যালেঞ্জ নেতৃবৃন্দের ছাতকে বিদেশি রিভলভার উদ্ধার

শেখ হাসিনা, আমরা সকলে শকুনের মতো অধীর আগ্রহে আপনার চূড়ান্ত পরিণতির অপেক্ষা করছি

রাজীব হোসেন
  • আপডেট সময় : ০২:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 132
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মীর কাশেম আলীর সাথে আমার কারাগারে অনেকবার সাক্ষাত হয়েছে। উনি ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দী ছিলেন। উনার সাথে সাক্ষাতে বিশেষ কথা হয়নি। তিনি বেশ সৌখিন মানুষ এবং কথাবার্তা বেশি বলতেন না। তবে একটা কথা তিনি সুযোগ পেলেই বলেছেন, ‘তাঁর নিজের পুত্র ব্যারিস্টার আরমান তাঁর হয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন।’ আমি সেই পুত্রকে চিনতাম না।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমীকে যেদিন চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, সেদিন আমি চাকুরীরত ক্যাপ্টেন। সামরিক বাহিনীতে রাজনীতি নিয়ে আলাপের সুযোগ তখন নেই। আমি মনে প্রানে বাংলাদেশের ইতিহাস ও জাতীয়তাবাদের যে বিষয়গুলো বিশ্বাস করি, সেগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কখনও শব্দ উচ্চারন করি না। আমাদেরকে মিলিটারি একাডেমীতে শিখানো হয়েছে, সামরিক অফিসারের কাছে দেশ এবং দেশের মানুষ সবার আগে। এর বাইরে কিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।

আমি সেদিন ঢাকা সেনানিবাস ট্রাষ্ট ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময়ে তদকালীণ একজন কর্নেলের ফোন কল পেলাম।

স্যার আমাকে স্নেহ করতেন। তিনি আমার পিতামাতার পরিচয় জানতেন। আমি তাঁকে অন্তর থেকেই শ্রদ্ধা করতাম। স্যার আমার সাথে ফোনে কথা বলার সমইয়ে আচানক কোন রকমের ভূমিকা ছাড়াই বলেন, “জানো রাজীব, আজকে ব্রিগেডিয়ার আজমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।”

আমি ব্রিগেডিয়ার সাহেবের পিতার পরিচয় জানতাম। আমি ব্রিগেডিয়ার সাহেবের সামরিক ক্যারিয়ারের খবর জানতাম। কিন্তু কোন অবস্থাতেই আশা করি নাই, কর্নেল সাহেব এতো উল্লসিত হয়ে আরেকজন অফিসারের চাকুরিচ্যুতির সংবাদ উদযাপন করবেন!

সেই দিয়ে শুরু।

(পরবর্তীতে সেই উল্লসিত কর্নেল পদোন্নতি পেয়ে ব্রিগেডিয়ার হন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তারেক সিদ্দিকির খাস লোক ছিলেন। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ পরবর্তী “ধামাচাপা অপারেশন” এ তিনি প্রত্যক্ষ অংশ নেন।)

কারাগারে পিতার মৃত্যুর পর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমি সাহেবকে ২০১৬ সালে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকে তাঁর আর কোন সন্ধান মিলে নাই।

ব্যরিস্টার আরমান গুম হন তাঁর বাবার ফাঁসি হবার অল্প কিছুদিন আগেই । তাঁর আর খোঁজ মিলে নাই।

হেলাল মুহম্মদ খান, রেজাউল করিম, খান সুবায়েল বিন রফিক, ফুয়াদ খান, খন্দকার রাজীব হোসেন, ২০০৯ এর শেষ থেকে প্রায় বছরখানেক নিখোঁজ ছিলেন। সেই সময়ে তাঁরা ইউনিফর্ম পড়তেন। চাকুরীরত অফিসার ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁদের গাপিস করে দেয়া হয়। এই অপহরণের অগ্রভাগে যে সকল অফিসার ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়- তাঁরা তারিক সিদ্দিকির কাছের অফিসার। সামরিক বাহিনীর উর্দি পড়া অপহরণকারী, খুনি অফিসার।

গুম হওয়া পাঁচ অফিসারকে যে সিক্রেট টর্চার সেলে রাখা হয়েছিল, তাঁর কোন কোড নাম নেই। এই ধরনের সেলের “কোড নেইম” হয় না। এই সেলে কাউকে পারতপক্ষে নেয়া হয় না। যাদের নেয়া হয়, তাঁরা কেউ কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। এক মাসের অধিক সময়ে সেই গোপন টর্চার সেলে পাঁচ অফিসারকে নির্যাতন করা হয়। এবং তাঁরা প্রত্যেকে তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংকের অফিসার ছিল। “ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার” ।

বহুদিন পর এক সন্ধ্যায় গোপনে তাঁদেরকে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তাঁদের সহকর্মী সকলে জানতে পারেন, এরা বেঁচে আছেন। এর আগে পর্যন্ত কিচ্ছু জানা যায় না। ইন সার্ভিস অফিসারদের মানবাধিকার থাকতে নেই কিনা!

২০১৪ সালে কারামুক্ত হবার প্রায় ৩ বছর পর, ২০১৭ সালে একবার আমাকে গোয়েন্দা সংস্থা ‘কফি পানের’ জন্য আবার তুলে নিয়ে যায়। মাঝে মাঝেই এরকম হতো। (আমাদের সান্নিধ্যে ‘কফির স্বাদ’ সম্ভবত বেড়ে যায়।” এরকম এক ‘কফি পানের আসরে’ আমি তাঁদের কথা প্রসঙ্গে একটা সূত্র পাই। যার অর্থ- ‘ব্রিগেডিয়ার আজমি বেঁচে আছেন।’ সম্ভবত কোন সেফ হাউসে আটক। আমার সেই মুহূর্তে চোখ ভিজে গিয়েছিল।

আমার ধারনা ছিল, ব্যারিস্টার আরমান বেঁচে নাই।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমি, ব্যারিস্টার আরমান গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান, জুলাই বিল্পবের পর। হাজারো কারনের ভিতর এই একটা কারণ, যার জন্যে আমি জুলাই বিল্পবের কাছে ঋণী।

আমি জুলাই বিপ্লবের কাছে ঋণী, কারণ এই কথাগুলো আমি লিখতে পারছি।

আমি জুলাই বিল্পব এবং তরুন প্রজন্মের কাছে ঋণী কারণ আমি শেষ পর্যন্ত “মুক্ত” হয়েছি।

হ্যাঁ এটা সত্যি, আজ প্রধান উপদেষ্টা যে সিক্রেট প্রিজন “আয়নাঘর” পরিদর্শনে গেছেন, সেখানে অনেক রকমের পরিবর্তন করা হয়েছে। গুম কমিশনের রিপোর্টে এই তথ্য এসেছে। দেয়ালে লেখা মানুষের আকুতি গুলো পেইন্ট করে ঢেকে দেয়া হয়েছে। অনেক কুকর্মের আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। ছয় মাস নিজেদের কুকর্ম ঢাকার জন্য অনেক সময়। তাও তো প্রধান উপদেষ্টা গেছেন। অবশিষ্টাংশ দেখেছেন! দুনিয়াকে জানিয়েছেন।

এই ধরনের সিক্রেট প্রিজন এবং টর্চার সেন্টার যারা পরিচালনা করতেন, সেই সকল সামরিক অফিসার কিংবা পুলিশ অফিসার কিংবা কর্মকর্তা- এদের সিংহভাগ এখন বহাল তবিয়তে চাকুরীতে আছে। দুই একজনকে লোক দেখানো চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। সার্ভিসে থাকা এই প্রতিজন রাক্ষস, ঘাপটি মেরে আছে। তবে, বর্তমান কার্যক্রম তাদেরকে একটা মেসেজ দিবে। ভবিষ্যতে যে কেউ রাক্ষস হবার আগে যেন পরিণতি চিন্তা করে।

পিতার পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয়, ব্যক্তি পরিচয়, যেই রেফারেন্স দিন না কেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমি, ব্যারিস্টার আরমান এবং আর অসংখ্য গুম হওয়া মানুষদের সাথে যা ঘটেছে, তা অমার্জনীয় অপরাধ।

পিলখানায় যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তাঁর বিচার না করা, ধামাচাপা দেয়া, পরিবারের জবান চেপে ধরে রাখা- অমার্জনীয় অপরাধ।

বহু বছর পর ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে হাজার কিশোর, তরুন, জনতা হত্যা করা- অমার্জনীয় অপরাধ।

যেহেতু এই কোন ঘটনাকেই আপনাদের কাছে ধর্তব্য বলে মনে হয় না, সেহেতু প্রিয় আওয়ামী সমর্থক বাহিনী- বাংলাদেশের আপনাদের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই।

যেহেতু এই সকল অপকর্মের হোতা আপনি এবং তাঁর প্রমান বিদ্যমান, জনাব শেখ হাসিনা, আমরা আপনার বিচার করবো এবং সেই দণ্ড কার্যকর করবো।

আর হেলাম মুহম্মদ খান, রেজাউল করিম, খান সুবায়েল বিন রফিক, ফুয়াদ খান এবং খন্দকার রাজীব হোসেন- এদের গল্পের কি হবে? সে গল্প তো চলবেই ভাই। তাঁদের সেই গোপন নির্যাতন কেন্দ্রের ছবি আমরা দেখবো না, গল্প শুনব না। কিন্তু গল্পগুলো তো থেকে যাবেই।

শেখ হাসিনা, আমরা সকলে শকুনের মতো অধীর আগ্রহে আপনার চূড়ান্ত পরিণতির অপেক্ষা করছি।

রাজীব হোসেন
ব্যারিস্টার তাপস হত্যাচেস্টা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

শেখ হাসিনা, আমরা সকলে শকুনের মতো অধীর আগ্রহে আপনার চূড়ান্ত পরিণতির অপেক্ষা করছি

আপডেট সময় : ০২:৫৭:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মীর কাশেম আলীর সাথে আমার কারাগারে অনেকবার সাক্ষাত হয়েছে। উনি ডিভিশন প্রাপ্ত বন্দী ছিলেন। উনার সাথে সাক্ষাতে বিশেষ কথা হয়নি। তিনি বেশ সৌখিন মানুষ এবং কথাবার্তা বেশি বলতেন না। তবে একটা কথা তিনি সুযোগ পেলেই বলেছেন, ‘তাঁর নিজের পুত্র ব্যারিস্টার আরমান তাঁর হয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন।’ আমি সেই পুত্রকে চিনতাম না।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমীকে যেদিন চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, সেদিন আমি চাকুরীরত ক্যাপ্টেন। সামরিক বাহিনীতে রাজনীতি নিয়ে আলাপের সুযোগ তখন নেই। আমি মনে প্রানে বাংলাদেশের ইতিহাস ও জাতীয়তাবাদের যে বিষয়গুলো বিশ্বাস করি, সেগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কখনও শব্দ উচ্চারন করি না। আমাদেরকে মিলিটারি একাডেমীতে শিখানো হয়েছে, সামরিক অফিসারের কাছে দেশ এবং দেশের মানুষ সবার আগে। এর বাইরে কিছু নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।

আমি সেদিন ঢাকা সেনানিবাস ট্রাষ্ট ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময়ে তদকালীণ একজন কর্নেলের ফোন কল পেলাম।

স্যার আমাকে স্নেহ করতেন। তিনি আমার পিতামাতার পরিচয় জানতেন। আমি তাঁকে অন্তর থেকেই শ্রদ্ধা করতাম। স্যার আমার সাথে ফোনে কথা বলার সমইয়ে আচানক কোন রকমের ভূমিকা ছাড়াই বলেন, “জানো রাজীব, আজকে ব্রিগেডিয়ার আজমিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।”

আমি ব্রিগেডিয়ার সাহেবের পিতার পরিচয় জানতাম। আমি ব্রিগেডিয়ার সাহেবের সামরিক ক্যারিয়ারের খবর জানতাম। কিন্তু কোন অবস্থাতেই আশা করি নাই, কর্নেল সাহেব এতো উল্লসিত হয়ে আরেকজন অফিসারের চাকুরিচ্যুতির সংবাদ উদযাপন করবেন!

সেই দিয়ে শুরু।

(পরবর্তীতে সেই উল্লসিত কর্নেল পদোন্নতি পেয়ে ব্রিগেডিয়ার হন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তারেক সিদ্দিকির খাস লোক ছিলেন। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ পরবর্তী “ধামাচাপা অপারেশন” এ তিনি প্রত্যক্ষ অংশ নেন।)

কারাগারে পিতার মৃত্যুর পর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমি সাহেবকে ২০১৬ সালে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকে তাঁর আর কোন সন্ধান মিলে নাই।

ব্যরিস্টার আরমান গুম হন তাঁর বাবার ফাঁসি হবার অল্প কিছুদিন আগেই । তাঁর আর খোঁজ মিলে নাই।

হেলাল মুহম্মদ খান, রেজাউল করিম, খান সুবায়েল বিন রফিক, ফুয়াদ খান, খন্দকার রাজীব হোসেন, ২০০৯ এর শেষ থেকে প্রায় বছরখানেক নিখোঁজ ছিলেন। সেই সময়ে তাঁরা ইউনিফর্ম পড়তেন। চাকুরীরত অফিসার ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁদের গাপিস করে দেয়া হয়। এই অপহরণের অগ্রভাগে যে সকল অফিসার ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়- তাঁরা তারিক সিদ্দিকির কাছের অফিসার। সামরিক বাহিনীর উর্দি পড়া অপহরণকারী, খুনি অফিসার।

গুম হওয়া পাঁচ অফিসারকে যে সিক্রেট টর্চার সেলে রাখা হয়েছিল, তাঁর কোন কোড নাম নেই। এই ধরনের সেলের “কোড নেইম” হয় না। এই সেলে কাউকে পারতপক্ষে নেয়া হয় না। যাদের নেয়া হয়, তাঁরা কেউ কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। এক মাসের অধিক সময়ে সেই গোপন টর্চার সেলে পাঁচ অফিসারকে নির্যাতন করা হয়। এবং তাঁরা প্রত্যেকে তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড র‍্যাংকের অফিসার ছিল। “ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার” ।

বহুদিন পর এক সন্ধ্যায় গোপনে তাঁদেরকে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তাঁদের সহকর্মী সকলে জানতে পারেন, এরা বেঁচে আছেন। এর আগে পর্যন্ত কিচ্ছু জানা যায় না। ইন সার্ভিস অফিসারদের মানবাধিকার থাকতে নেই কিনা!

২০১৪ সালে কারামুক্ত হবার প্রায় ৩ বছর পর, ২০১৭ সালে একবার আমাকে গোয়েন্দা সংস্থা ‘কফি পানের’ জন্য আবার তুলে নিয়ে যায়। মাঝে মাঝেই এরকম হতো। (আমাদের সান্নিধ্যে ‘কফির স্বাদ’ সম্ভবত বেড়ে যায়।” এরকম এক ‘কফি পানের আসরে’ আমি তাঁদের কথা প্রসঙ্গে একটা সূত্র পাই। যার অর্থ- ‘ব্রিগেডিয়ার আজমি বেঁচে আছেন।’ সম্ভবত কোন সেফ হাউসে আটক। আমার সেই মুহূর্তে চোখ ভিজে গিয়েছিল।

আমার ধারনা ছিল, ব্যারিস্টার আরমান বেঁচে নাই।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমি, ব্যারিস্টার আরমান গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান, জুলাই বিল্পবের পর। হাজারো কারনের ভিতর এই একটা কারণ, যার জন্যে আমি জুলাই বিল্পবের কাছে ঋণী।

আমি জুলাই বিপ্লবের কাছে ঋণী, কারণ এই কথাগুলো আমি লিখতে পারছি।

আমি জুলাই বিল্পব এবং তরুন প্রজন্মের কাছে ঋণী কারণ আমি শেষ পর্যন্ত “মুক্ত” হয়েছি।

হ্যাঁ এটা সত্যি, আজ প্রধান উপদেষ্টা যে সিক্রেট প্রিজন “আয়নাঘর” পরিদর্শনে গেছেন, সেখানে অনেক রকমের পরিবর্তন করা হয়েছে। গুম কমিশনের রিপোর্টে এই তথ্য এসেছে। দেয়ালে লেখা মানুষের আকুতি গুলো পেইন্ট করে ঢেকে দেয়া হয়েছে। অনেক কুকর্মের আলামত ধ্বংস করা হয়েছে। ছয় মাস নিজেদের কুকর্ম ঢাকার জন্য অনেক সময়। তাও তো প্রধান উপদেষ্টা গেছেন। অবশিষ্টাংশ দেখেছেন! দুনিয়াকে জানিয়েছেন।

এই ধরনের সিক্রেট প্রিজন এবং টর্চার সেন্টার যারা পরিচালনা করতেন, সেই সকল সামরিক অফিসার কিংবা পুলিশ অফিসার কিংবা কর্মকর্তা- এদের সিংহভাগ এখন বহাল তবিয়তে চাকুরীতে আছে। দুই একজনকে লোক দেখানো চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। সার্ভিসে থাকা এই প্রতিজন রাক্ষস, ঘাপটি মেরে আছে। তবে, বর্তমান কার্যক্রম তাদেরকে একটা মেসেজ দিবে। ভবিষ্যতে যে কেউ রাক্ষস হবার আগে যেন পরিণতি চিন্তা করে।

পিতার পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয়, ব্যক্তি পরিচয়, যেই রেফারেন্স দিন না কেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজমি, ব্যারিস্টার আরমান এবং আর অসংখ্য গুম হওয়া মানুষদের সাথে যা ঘটেছে, তা অমার্জনীয় অপরাধ।

পিলখানায় যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তাঁর বিচার না করা, ধামাচাপা দেয়া, পরিবারের জবান চেপে ধরে রাখা- অমার্জনীয় অপরাধ।

বহু বছর পর ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে হাজার কিশোর, তরুন, জনতা হত্যা করা- অমার্জনীয় অপরাধ।

যেহেতু এই কোন ঘটনাকেই আপনাদের কাছে ধর্তব্য বলে মনে হয় না, সেহেতু প্রিয় আওয়ামী সমর্থক বাহিনী- বাংলাদেশের আপনাদের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই।

যেহেতু এই সকল অপকর্মের হোতা আপনি এবং তাঁর প্রমান বিদ্যমান, জনাব শেখ হাসিনা, আমরা আপনার বিচার করবো এবং সেই দণ্ড কার্যকর করবো।

আর হেলাম মুহম্মদ খান, রেজাউল করিম, খান সুবায়েল বিন রফিক, ফুয়াদ খান এবং খন্দকার রাজীব হোসেন- এদের গল্পের কি হবে? সে গল্প তো চলবেই ভাই। তাঁদের সেই গোপন নির্যাতন কেন্দ্রের ছবি আমরা দেখবো না, গল্প শুনব না। কিন্তু গল্পগুলো তো থেকে যাবেই।

শেখ হাসিনা, আমরা সকলে শকুনের মতো অধীর আগ্রহে আপনার চূড়ান্ত পরিণতির অপেক্ষা করছি।

রাজীব হোসেন
ব্যারিস্টার তাপস হত্যাচেস্টা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫