সুবিপ্রবি স্থায়ী ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ শহরের কাছাকাছি স্থাপনে সহযোগিতার আশ্বাস

- আপডেট সময় : ০৫:১৭:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১১৬ বার পড়া হয়েছে
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি) ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ জেলা সদরের নিকটবর্তী অঞ্চলে স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগীতার আশ্বাস প্রদান করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পৌদ্দার।
সুনামগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎকালে এই আশ্বাস প্রদান করেন মাননীয় উপদেষ্টা।
এসময় গেল ১৫ বছরে সুনামগঞ্জবাসী কীভাবে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তা তুলে ধরেন সাবেক বিচারপতি মিফতাহ্ উদ্দিন চৌধুরী রুমি। এছাড়া বিশ্ব বিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলনের পক্ষ থেকেও তাকে নানা বিষয় অবহিত করেন নেতৃবৃন্দ। পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকাল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত উপদেষ্টার দপ্তরে এই বৈঠক ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে প্রস্তাবিত তিনটি স্থান উল্লেখ করে বলা হয়, এইসব জায়গার যে কোনো একটিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হলে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কম। হাওর বিনষ্টের সর্বনাশা প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি, বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. রবিউল লেইস রোকেস, বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সৈয়দ মুহিবুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির সভাপতি অ্যাড. এনাম আহমদ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মুনাজ্জির হোসেন সুজন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা কেন্দ্রীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব অনিক রায়, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আবিদুল হক, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মাহদিন চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. মাহবুবুল হাসান শাহীন, দৈনিক সংগ্রামের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি অ্যাড. মহসিন রেজা মানিক, সুনামগঞ্জ জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক ইমন দ্দোজা আহমদ, বিএনপি নেতা আসম খালিদ প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সুনামগঞ্জে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন আছে। এ লক্ষ্যে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় আইন, ২০২০ (২০২০ সনের ২৩ নং আইন) প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
উপযুক্ত আইনের ৩ (১) ধারায় বিবিদ্যালয় স্থাপনের স্থান হিসাবে ‘দেখার হাওর পাড়’ উল্লেখ আছে। শুরু থেকেই বিশ্বিবদ্যালয়ের স্থান নিয়ে জেলাবাসীর প্রবল আপত্তি বলবৎ ছিলো।
তৎকালে এ নিয়ে বিভিন্ন আকারে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। জেলাবাসীর দাবি ছিলো উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি জেলা সদরের নিকটবর্তী কোনো অঞ্চলে স্থাপন করা হোক।
কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করতে যেয়ে নিজের সরকারি পদের অপব্যবহার করে সমস্ত বড় বড় উন্নয়ন কার্যক্রম তাঁর নিজ উপজেলা ও বাড়ির নিকটবর্তী শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছাকাছি নিয়ে যান।
উপেক্ষা করা হয় জেলা সদরসহ অপর ১০টি উপজেলাকে। একটি উপজেলার ছোট্ট একটি অঞ্চলে সমন্ত বড় বড় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়টি জেলাবাসীকে বৈষম্যবোধে তাড়িত করেছে।
এখন যেহেতু সব ধরনের বৈষম্যের অবলোপন ঘটিয়ে সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ শাসন করছে তখন আমাদের মনে এই আশাবাদ সঞ্চরিত হয়েছে যে, এখন বঞ্চনা ও অবহেলার হাত থেকে জেলাবাসী রক্ষা পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বা নির্ধারিত দেখার হাওরটি অত্র জেলার একটি সুবিশাল হাওর। এই হাওর সদর, শান্তিগঞ্জ ও ছাতক উপজেলার বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। এই হাওরে উৎপাদিত হয় বিপুল পরিমাণ বোরো ধান। এই হাওর মিঠা পানির মাছের বড় উৎস।
দেখার হাওরে সুবিশাল বিশ্বিবদ্যালয়ের ভবনাদি নির্মিত হলে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় সাংঘাতিক বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশাল হাওরটি জায়গায় জায়গায় জলাবদ্ধতার শিকার যেমন হবে তেমনি কিছু অঞ্চলে পানি নিষ্কাশনের তীব্র সংকট দেখা দিবে। এর ফলে ধান ও মাছ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাসপ্রাপ্তি ঘটবে। কৃষি জমির চরিত্র অপরিবর্তিত রাখা ও হাওরের কোনো ক্ষতি না করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। দেখার হাওরে বিশ্বিবদ্যালয় স্থাপন করা হলে সরকারের এই লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে।
এছাড়া সুনামগঞ্জ—সিলেট সড়কটি দেখার হাওরের পাশ ঘেঁষেই অবস্থিত। এই সড়কের পাশে ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখন এই সড়কের পাশে নতুন করে সুবিশাল বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মিত হলে একটি ছোট এলাকার উপর জনসংখ্যার চাপ বাড়বে। সুনামগঞ্জ—সিলেট সড়কটি নানা মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হবে।
তাই বিশিষ্টজন ও বিশেষজ্ঞরা বিশ্বিবদ্যালয় ক্যাম্পাস দেখার হাওরের পরিবর্তে অন্যত্র, প্রধানত জেলা শহরের সন্নিকটে স্থাপন করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে জেলার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ সুবিপ্রবি ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ শহর সন্নিকটে স্থাপন করার বিষয়ে দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেন। ওই মতবিনিময় সভায় জেলা শহরের নিকটবর্তর্ী নন—হাওর তথা খাসজমি আছে এমন এলাকায় সুবিপ্রবি ক্যাম্পাস স্থাপনের জোরালো দাবি উত্থাপন করা হয়।
এখানে এমন বৈশিষ্টসম্পন্ন তিনটি স্থানের উল্লেখ করা হলো যেগুলো জেলা শহরের নিকটবর্তী। সবচাইতে ভালো খবর এই যে, প্রস্তাবিত এই তিনটি জায়গায়ই রয়েছে সরকারের বিপুল পরিমাণ খাস জমি। ফলে দেখার হাওরে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে এই তিন স্থানের যে কোনো একটিতে বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে। প্রস্তাবিত স্থানগুলো হলো—
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রতনশ্রী মৌজার জে.এল. নং : ১৪ এর ৫০১ নং দাগে ৫৪৪ একর ০৬ শতাংশ (লায়েক পতিত রকম ভূমি), একই দাগে ৫৪৪ শতক ০৬ শতাংশ (লায়েক জঙ্গল রকম ভূমি), ২৫৬৩ দাগে ৩৩৪ একর ৫৪ শতাংশ ভূমি (লায়েক পতিত রকম ভূমি)। এই মৌজাধীন বর্ণিত জে.এল নম্বরের আওতায় বিভিন্ন দাগে আরও বহু খাস জায়গা আছে।
সদর উপজেলার রসুলপুর মৌজার জে.এল. নং : ৮২ এর ৬৩, ৬৪, ৮০, ৮৩, ৮৬, ৮৭, ৮৯, ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ১০০, ১২৩, ১২৮, ১৩৮, ১৪০, ১৬৪ ও ১৭২ দাগে মোট জমি ৯৬ একর ৬৩ শতাংশ এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জুগীরগাঁও মৌজার জে.এল. নং : ১১৩ এর বিভিন্ন দাগে ২১৮.৫৯ একর জায়গা আছে যার অধিকাংশই পতিত রকমের সরকাারি খাস ভূমি।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রস্তাবিত ১ নম্বর জায়গাটিতে বিপুল পরিমাণ খাস জমি আছে এবং এটি সুনামগঞ্জ—বিশ্ম্ভবরপুর—তাহিরপুর সড়কের গৌরারং ইউনিয়নের পাশে এবং জায়গাটি জেলা শহরের নিকটবর্তী।
এই জায়গাটি জামালগঞ্জ, শাল্লা, দিরাই, শান্তিগঞ্জ, সদর, বিশ্ম্ভবরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা, ছাতক, দোয়ারাবাজারসহ সমগ্র জেলার জন্য সুবিধাজনক ও সহজগম্য একটি স্থান।
প্রস্তাবিত ২ নম্বর জায়গাটি জেলা শহরের একেবারে নিকটবর্তী এবং এখানে বিশ্বিবদ্যালয় স্থাপন করা হলে মৃতপ্রায় সুনামগঞ্জ জেলা শহরের বহুমুখী উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটবে।
২ নম্বর স্থানে বিশ্বিবদ্যালয় স্থাপনের জন্য আরও জায়গার প্রয়োজন হলে অধিগ্রহণের সুযোগ আছে। এই জায়গাটিও সমগ্র জেলার জন্য সুগম একটি অঞ্চল।
তৃতীয় প্রস্তাবিত স্থানটিও জেলা শহরের নিকটবর্তী এবং এখানে প্রচুর সরকারি খাস জমি রয়েছে। এইসব জায়গার যেকোনো একটিতে বিশ্বিবদ্যালয় ক্যাম্পাস হলে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কম। হাওর বিনষ্টের সর্বনাশা প্রক্রিয়ায় যেতে হবে না।
জেলা শহর হলো সমগ্র জেলার একটি মিলনস্থল। পেশাগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সমগ্র উপজেলার অনেক মানুষের বসবাস এই শহরে। জেলা শহরে বিশ^বদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা গেলে সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়া সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষা—ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জেলার সকল উপজেলার লোকজনও চান জেলা শহরের কাছাকাছি এই বিশ্বিবদ্যালয়টি স্থাপন করা হোক।
এমতাবস্থায় সুনামগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের মানুষের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী স্থান দেখার হাওর পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত তিনটি স্থানের যেকোনো একটি নির্ধারণের লক্ষ্যে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও নতুন করে জায়গা নির্ধারণ ও অধিগ্রহণের বিধিগত প্রক্রিয়া অগ্রসর করার জন্য আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করা হলো।
স্মারকলিপির অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টা, বিশ্বিবদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।