সুনামগঞ্জ ০৩:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫, ২৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

কসাই কাদের এবং আব্দুল কাদের মোল্লা এক ছিল না

ফরিদ আহমদ রেজা
  • আপডেট সময় : ১১:০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ ৮২ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমরা জানি, কসাই কাদের এবং আব্দুল কাদের মোল্লা এক ছিল না। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পরিবারের দাবি : বিচার বিভাগের ঘাড়ে বন্ধুক রেখে কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হয়েছে।

দার্শনিক সক্রেটিসকে হ্যামলক বিষ প্রয়োগে হত্যার রায় দিয়েছিল আদালত। আদালতই যিশু খ্রিস্টকে (হযরত ঈসা আ.) শূলে চড়িয়ে হত্যার রায় দিয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় আদালতের নির্দেশেই। হাজার বছর পর এসে প্রমাণিত হয়েছে তিনটি রায়ই ভুল রায় ছিল। বিচার-ইতিহাসে এ ধরনের রায়ের অসংখ্য নজির রয়েছে- যার ভিত্তিতে কথিত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হত্যার পর প্রমাণিত হয়েছে, আদালতের দেয়া রায়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ছিল না।

জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিষয়েও হয়তো ভবিষ্যতে এমনটি বলা হতে পারে- যে রায়ের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে তা সঠিক ছিল না। এমনই মন্তব্য করেছেন কাদের মোল্লার আইনজীবী, পরিবারের সদস্য, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল ও বিভিন্ন সংস্থা।

কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এসিন্টেম্লট সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগের দ্বিধাবিভক্ত রায়ের ভিত্তিতে গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে তড়িঘড়ি করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকেই জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা রায়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তা কার্যকর করা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের কথিত অভিযোগে আটক, বিচার প্রক্রিয়া, সরকার পক্ষের অনুসন্ধান ও তথ্য-প্রমাণ, তদন্ত কর্মকর্তা ও সরকারি আইনজীবীদের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, বারবার আইন সংশোধন করে ফাঁসির উপযোগী করা, অপরাধ নয় আওয়ামী লীগ ও শাহবাগিদের দাবিই বিচার্য বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করা, সাক্ষী নিয়ে সরকার পক্ষের লুকোচুরি খেলাসহ ফাঁসির রায় আদালতে সরকার পক্ষের জবরদস্তিমূলক আচরণে বিচারের মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

ফরিদপুরের আবদুল কাদের মোল্লাকে মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদের রূপ দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর আইনজীবীরা আদালত ও সরকার পক্ষের কাছে যেসব প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাননি সেগুলো হলো- আদালতে মোমেনা পরিচয় দিয়ে যে মহিলা কাদের মোল্লার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি একাত্তরে নির্যাতিতা ও স্বজন হারানো মোমেনা নন। প্রকৃত মোমেনা আদালতে সাক্ষ্য দিতেই আসেননি। মিরপুরের ‘কসাই কাদের’ ও ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারের বাসায় থাকা কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নন।

কাদের মোল্লা যদি মিরপুরের বহুল আলোচিত ‘কসাই কাদের’ হন তাহলে তিনি কি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে থেকে পড়া লেখা করে ৭২ সালে পাস করে বের হন? মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতির পর কি করে সরকার তাকে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে উদয়ন স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দেন? মাত্র এক বছর পর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদায় তাকে কি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক পদে চাকরি দেয়া হয়? কোনো সাক্ষীই নিজ চোখে আবদুল কাদের মোল্লাকে একাত্তরে অপরাধ করা তো দূরের কথা, মিরপুর এলাকাতেই দেখেননি। শোনা কথার ভিত্তিতে ও ধারণামূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে কাউকে ফাঁসি দেয়া যায় কি? এসব প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায়নি।

আলোচিত সাক্ষী মোমেনা
গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি পুরনো হাইকোর্ট ভবনে দেশীয় ও দলীয় লোকবল দিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে ৫টি অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে আদালত মিরপুরে হযরত আলী হত্যা মামলা সংক্রান্ত সরকারের ৬নং অভিযোগটি প্রমাণিত না হওয়ায় এ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। ওইদিনই ভারতের প্রত্যক্ষ মদতে শাহবাগে কিছু তরুণ জমায়েত হয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ করলে এতে সুর মেলায় প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা। ১৮ ফেব্রুুয়ারি আইন সংশোধন করে কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রার্থনা জানিয়ে সরকার পক্ষ আপিল করে। ৬নং অভিযোগ হচ্ছে হযরত আলী লস্কর পরিবার হত্যাকাণ্ড। ঘটনার একমাত্র সাক্ষী হজরত আলীর মেয়ে মোমেনা বেগম। তার সাক্ষ্য ও জবানবন্দিকে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে এ অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে বেকসুর খালাস দিলেও আপিল বিভাগ বিভক্ত রায়ে এ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়। যা পরে কার্যকর করা হয়।

আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, সরকার পক্ষের দেয়া নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধের সময় একাত্তরে মোমেনা বেগমের বয়স ছিল ১৩ বছর। বর্তমানে তার বয়স হওয়ার কথা ৫২ বা ৫৩ বছর। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে যিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন তার বয়স কোনো অবস্থায় ৪০ বছরের বেশি নয়। প্রকৃত মোমেনাকে আদালতে না এনে দলীয় একজন মহিলাকে মোমেনা সাজিয়ে আদালতের নির্জন কক্ষে এনে সাক্ষ্য ও জবানবন্দি প্রদান করা হয়। তাছাড়া হয়রত আলী লস্করের মেয়ে সরকারের স্বাক্ষী মোমেনা বেগম প্রথমে ২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মিরপুরের জল্লাদখানায় মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের জাহেদা খাতুন তামান্নার কাছে দেয়া সাক্ষাত্কারের কোথাও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আবদুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি।

সাক্ষাৎকারে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ঘটনার সময় তিনি তার কেরানীগঞ্জের শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন এবং ঘটনার পরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। জল্লাদখানার কাগজপত্র আপিল বিভাগে উপস্থাপন করার পরও এমন একজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য বিবেচনায় এনে কিভাবে এই ফাঁসির রায় দেয়া হলো?

এ প্রশ্ন করে কাদের মোল্লার আইনজীবীরা বলেন, বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, এই মোমেনা বেগম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট দেয়া জবানবন্দিতে কোথাও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী হিসেবে আবদুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি ।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে দ্বিতীয় বারের মত নিজ পরিবারের হত্যাকাণ্ডের কথা বলতে এসে মোমেনা বেগম কেন একটিবারের জন্যও আবদুল কাদের মোল্লার নাম বললেন না, এটা চরম অবাক করার ব্যাপার। আরও হতবাক করা ব্যাপার এই যে, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জবানবন্দির ভিত্তিতে কিভাবে আপিল বিভাগ ফাঁসির সাজা দিলেন?

এ মোমেনা বেগমই ২০১২ সালের ১৭ জুলাই ট্রাইবুনাল-২ এ এসে আবদুল কাদের মোল্লার নাম হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত করে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য দেয়ার পর মোমেনা বেগমকে ডিফেন্স পক্ষের জেরায় আবদুল কাদের মোল্লাকে তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে দেখেছেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দেখিনি, শুনেছি। এখানেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন মোমেনা বেগম। এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচারকরা কিভাবে ফাঁসির আদেশ দিলেন? এই প্রশ্নও করেছিলেন কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে।

 

তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দি ও জেরা থেকে জানা যায় মোমেনা বেগমকে ৩নং অভিযোগে উল্লিখিত সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। অথচ মোমেনা বেগম এসে সাক্ষী দিলেন ৬নং অভিযোগের বিষয়ে।

এদিকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়া মোমেনা বেগম প্রকৃত মোমেনা বেগম নন বলে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেছেন কাদের মোল্লার ছেলে। তিনি বলেন, আদালতে যে মোমেনা বেগম এসেছেন তিনি হজরত আলী লস্করের মেয়ে নন। সরকার মোমেনা বেগমের নামে একজন ভুয়া মহিলাকে সাক্ষী সাজিয়ে আদালতে এনে জবানবন্দি দিয়েছে। প্রকৃত মোমেনা বেগম আদালতে আসেননি।

 

সময় ও সুযোগ হলে প্রকৃত মোমেনা বেগম এ বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরবেন। প্রকৃত মোমেনা আদালতে এসে তার নামে মিথ্যা সাক্ষী তৈরির বিষয়ে জবানবন্দি দেয়া ইচ্ছা থাকলেও হয়তো সুখরঞ্জন বালীর পরিণতির কথা চিন্তা করে আসেননি। কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয় যে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পর সরকার সমর্থক ও শাহবাগে কিছু তরুণ উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করলেও মোমেনা বেগম কোথাও কোনো বক্তব্য দেননি। যার জবানবন্দির ভিত্তিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো সেই মোমেনা সাংবাদিকদের কাছে তার ক্ষোভ বেশি করে প্রকাশ করার কথা।

 

কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের কাছে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। সাংবাদিকরাও তার কাছে প্রতিক্রিয়ার জন্য যাননি। সরকারও তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করেনি। মূলত মোমেনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হওয়ার ভয়ে সরকার তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির হতে দেয়নি। এতেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে, আদালতে কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে জবানবন্দি দেয়া মহিলা প্রকৃত মোমেনা নন। বিষয়টি অদূর ভবিষ্যতেই পরিষ্কার হবে বলেও জানান কাদের মোল্লার আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে কাদের মোল্লার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মোমেনা বেগম তিনবার জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রথম ও দ্বিতীয়বার তিনি হযরত আলী ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কাদের মোল্লার নামটিও উচ্চারণ করেননি। তৃতীয়বার ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিলেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এ ধরনের সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের নজির বিশ্বে নেই। কিন্তু আপিল বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ এ জবানবন্দির ভিত্তিতেই কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিলেন।

বিচারকদের নিয়ে প্রশ্ন
আপিল বিভাগের বিচারপতি এসকে সিনহা ও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে বিচারের শুরুতেই আপত্তি পেশ করেন কাদের মোল্লার আইনজীবীরা। আলোচিত স্কাইপ কথপোকথন থেকে জানা যায় যে, বিচারপতি এসকে সিনহা বিচারবহির্ভূতভাবে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রভাবিত করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে ফাঁসির রায় দেয়ার বিনিময়ে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়ারও আশ্বাস দেন।

স্কাইপ কথোপকথনের মাধ্যমে প্রকাশিত বিচারপতি এসকে সিনহার এ ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। সেই সঙ্গে এ কথোপকথন প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনোমিস্ট-এ প্রকাশ করে।

প্রসঙ্গত, সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে পদত্যাগের জন্য বঙ্গভবনে চায়ের দাওয়াত পেয়েছিলেন এ বিচারপতি। অপরদিকে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে সভা-সমাবেশও করেছেন। জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় তিনি বক্তব্যও দিয়েছেন। যা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে আপিল বিভাগে আপত্তি দেয়ার পরও বিচার কাজে অংশ নেন আলোচিত এ দুই বিচারপতি।

আইনজীবীরা বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একজন বিচারককের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখপূর্বক ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করে আবেদন করলে সেই বিচারক নিজ থেকেই সরে পড়েন। ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সংসদ ভবনের বিশেষ কোর্টে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের সময়ও আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট বিচারকের প্রতি ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে অনাস্থা আবেদন করেছিলেন। বিচারক তাত্ক্ষণিকভাবেই বিচারকাজ থেকে সরে দাঁড়ান। সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে অনাস্থা দেয়ার পরও বিচারপতি এসকে সিনহা ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার আপিল শুনানিতে অংশ নেন। পরে আপিলের রায়ে দেখা যায় যে, এই দুজনই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পক্ষে মত দেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কাদের মোল্লা শুধু ন্যায় বিচার থেকেই বঞ্চিত হননি। হত্যাণ্ডের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
মিরপুরের কসাই কাদের আর ফরিদপুরের কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নন। ফদিরপুরের কাদের মোল্লা আর মিরপুরের কসাই কাদের এক ব্যক্তি নন। তথ্য প্রমাণসহ আইনজীবীরা এ দাবি করেন।

 

আদালতে তাদের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সানাউল্লাহ মোল্লা ও দাদার নাম আবু মোল্লা। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন ১৯৬৯ সালে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে ৭ মার্চের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামের বাড়িতে চলে যান ও যুদ্ধের পুরো সময় তিনি গ্রামেই অবস্থান করেন। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেন।

 

মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় কমান্ডারের বাড়িতেই পুরো যুদ্ধের সময় অবস্থান করেন। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে তিনি পুনরায় ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন অব্যাহত রাখেন ও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা অবস্থায়ই তিনি ১৯৭৪-৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবের খুনি হলে কী করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেন। এ প্রশ্ন কাদের মোল্লার পরিবারের।

 

ওই সময়ে তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি পরপর দুইবার ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে ঐক্যবদ্ধ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সত্যিই যদি যুদ্ধাপরাধী হতেন, তাহলে কী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার তাকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতেন? ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে লক্ষাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়, ৩৭ হাজার ৪৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, কিন্তু তখন আবদুল কাদের মোল্লার নামে কোথাও একটি জিডি বা একটি মামলাও করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিংবা যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধে কাদের মোল্লার নামটিও নেই।

কাদের মোল্লা দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ, জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখ জাতীয় নেতাদের সঙ্গে লিয়াঁজো কমিটিতে ছিলেন, কেয়ারটেকার আন্দোলনে তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের আগে ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তখনও দেশের কোনো সাংবাদিক কিংবা কোনো ব্যক্তিও জানেননি, কাদের মোল্লা মিরপুরের কসাই কাদের ছিলেন।

আইনজীবীরা বলেন, সরকারের সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান (সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবের ছেলে), কবি কাজী রোজী (শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী), সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম, শফিউদ্দিন মোল্লা প্রমুখ আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৪২ বছরের মধ্যে কোনো মামলা করল না কেন? কবি কাজী রোজী শহীদ মেহেরুন্নেসা সংক্রান্ত লেখা তার বিভিন্ন বইয়ে আবদুল কাদের মোল্লার নাম কেন উল্লেখ করল না? কেন খন্দকার আবুল আহসান ও তার বোন সখিনা খন্দকার মিরপুরের জল্লাদ খানায় ২০০৭-০৮ সালে দেয়া সাক্ষাত্কারে আবদুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করল না? কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কোনো কোনো সংস্থা ও দেশ একে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছে।

হাসবে মিরপুরের কসাই কাদের
‘আমি ফরিদপুরের কাদের মোল্লা। সরকার আমাকে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করতে যাচ্ছে। আমার হত্যাকাণ্ডের পর আমি কিয়ামত পর্যন্ত কাঁদতে থাকব। আর হাসবে মিরপুরের কসাই কাদের’। কথাগুলো আবদুল কাদের মোল্লার। আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনির মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেয়া একটি ছোট্ট চিঠিতে এমন অনুভূতিই প্রকাশ করেছিলেন কাদের মোল্লা। সরকার তাকে মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদের সাজিয়ে হত্যা করতে যাচ্ছে এমন কথাই বলেছেন তিনি। গোলাম মওলা রনি তার এ চিঠিটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার পর বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায় তা। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার দিন স্বজনদের হাতে দেয়া শেষ চিঠিতে কাদের মোল্লা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। শুধু ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধেই আমাকে হত্যা করা হচ্ছে। শাহাদাত মৃত্যু সবার নসিবে হয় না। আল্লাহ তায়ালা যাকে শহিদী মৃত্যু দেন সে সৌভাগ্যবান। আমি শহিদী মৃত্যুর অধিকারী হলে তা হবে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমি আমার জানামতে কোনো অন্যায় করিনি। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলনের জন্য আমি আমার জীবন উত্সর্গ করেছি। আমি অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, কখনও করব না। দুনিয়ার কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জীবনের মালিক আল্লাহ। কিভাবে আমার মৃত্যু হবে তা আল্লাহই নির্ধারণ করবেন। কোনো ব্যক্তির সিদ্ধান্তে আমার মৃত্যু কার্যকর হবে না। আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ীই আমার মৃত্যুর সময় ও তা কার্যকর হবে। সুতরাং আমি আল্লাহর ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেব।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

কসাই কাদের এবং আব্দুল কাদের মোল্লা এক ছিল না

আপডেট সময় : ১১:০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

আমরা জানি, কসাই কাদের এবং আব্দুল কাদের মোল্লা এক ছিল না। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও পরিবারের দাবি : বিচার বিভাগের ঘাড়ে বন্ধুক রেখে কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হয়েছে।

দার্শনিক সক্রেটিসকে হ্যামলক বিষ প্রয়োগে হত্যার রায় দিয়েছিল আদালত। আদালতই যিশু খ্রিস্টকে (হযরত ঈসা আ.) শূলে চড়িয়ে হত্যার রায় দিয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকেও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় আদালতের নির্দেশেই। হাজার বছর পর এসে প্রমাণিত হয়েছে তিনটি রায়ই ভুল রায় ছিল। বিচার-ইতিহাসে এ ধরনের রায়ের অসংখ্য নজির রয়েছে- যার ভিত্তিতে কথিত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হত্যার পর প্রমাণিত হয়েছে, আদালতের দেয়া রায়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ছিল না।

জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিষয়েও হয়তো ভবিষ্যতে এমনটি বলা হতে পারে- যে রায়ের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে তা সঠিক ছিল না। এমনই মন্তব্য করেছেন কাদের মোল্লার আইনজীবী, পরিবারের সদস্য, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল ও বিভিন্ন সংস্থা।

কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এসিন্টেম্লট সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন সংশোধন করে আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগের দ্বিধাবিভক্ত রায়ের ভিত্তিতে গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে তড়িঘড়ি করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকেই জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা রায়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তা কার্যকর করা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের কথিত অভিযোগে আটক, বিচার প্রক্রিয়া, সরকার পক্ষের অনুসন্ধান ও তথ্য-প্রমাণ, তদন্ত কর্মকর্তা ও সরকারি আইনজীবীদের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, বারবার আইন সংশোধন করে ফাঁসির উপযোগী করা, অপরাধ নয় আওয়ামী লীগ ও শাহবাগিদের দাবিই বিচার্য বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করা, সাক্ষী নিয়ে সরকার পক্ষের লুকোচুরি খেলাসহ ফাঁসির রায় আদালতে সরকার পক্ষের জবরদস্তিমূলক আচরণে বিচারের মানদণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

ফরিদপুরের আবদুল কাদের মোল্লাকে মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদের রূপ দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর আইনজীবীরা আদালত ও সরকার পক্ষের কাছে যেসব প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাননি সেগুলো হলো- আদালতে মোমেনা পরিচয় দিয়ে যে মহিলা কাদের মোল্লার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি একাত্তরে নির্যাতিতা ও স্বজন হারানো মোমেনা নন। প্রকৃত মোমেনা আদালতে সাক্ষ্য দিতেই আসেননি। মিরপুরের ‘কসাই কাদের’ ও ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডারের বাসায় থাকা কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নন।

কাদের মোল্লা যদি মিরপুরের বহুল আলোচিত ‘কসাই কাদের’ হন তাহলে তিনি কি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে থেকে পড়া লেখা করে ৭২ সালে পাস করে বের হন? মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্বীকৃতির পর কি করে সরকার তাকে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে উদয়ন স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দেন? মাত্র এক বছর পর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদায় তাকে কি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক পদে চাকরি দেয়া হয়? কোনো সাক্ষীই নিজ চোখে আবদুল কাদের মোল্লাকে একাত্তরে অপরাধ করা তো দূরের কথা, মিরপুর এলাকাতেই দেখেননি। শোনা কথার ভিত্তিতে ও ধারণামূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে কাউকে ফাঁসি দেয়া যায় কি? এসব প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায়নি।

আলোচিত সাক্ষী মোমেনা
গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি পুরনো হাইকোর্ট ভবনে দেশীয় ও দলীয় লোকবল দিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে ৫টি অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে আদালত মিরপুরে হযরত আলী হত্যা মামলা সংক্রান্ত সরকারের ৬নং অভিযোগটি প্রমাণিত না হওয়ায় এ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। ওইদিনই ভারতের প্রত্যক্ষ মদতে শাহবাগে কিছু তরুণ জমায়েত হয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ করলে এতে সুর মেলায় প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা। ১৮ ফেব্রুুয়ারি আইন সংশোধন করে কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রার্থনা জানিয়ে সরকার পক্ষ আপিল করে। ৬নং অভিযোগ হচ্ছে হযরত আলী লস্কর পরিবার হত্যাকাণ্ড। ঘটনার একমাত্র সাক্ষী হজরত আলীর মেয়ে মোমেনা বেগম। তার সাক্ষ্য ও জবানবন্দিকে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে এ অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে বেকসুর খালাস দিলেও আপিল বিভাগ বিভক্ত রায়ে এ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়। যা পরে কার্যকর করা হয়।

আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, সরকার পক্ষের দেয়া নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধের সময় একাত্তরে মোমেনা বেগমের বয়স ছিল ১৩ বছর। বর্তমানে তার বয়স হওয়ার কথা ৫২ বা ৫৩ বছর। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে যিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন তার বয়স কোনো অবস্থায় ৪০ বছরের বেশি নয়। প্রকৃত মোমেনাকে আদালতে না এনে দলীয় একজন মহিলাকে মোমেনা সাজিয়ে আদালতের নির্জন কক্ষে এনে সাক্ষ্য ও জবানবন্দি প্রদান করা হয়। তাছাড়া হয়রত আলী লস্করের মেয়ে সরকারের স্বাক্ষী মোমেনা বেগম প্রথমে ২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মিরপুরের জল্লাদখানায় মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের জাহেদা খাতুন তামান্নার কাছে দেয়া সাক্ষাত্কারের কোথাও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আবদুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি।

সাক্ষাৎকারে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ঘটনার সময় তিনি তার কেরানীগঞ্জের শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন এবং ঘটনার পরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। জল্লাদখানার কাগজপত্র আপিল বিভাগে উপস্থাপন করার পরও এমন একজন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য বিবেচনায় এনে কিভাবে এই ফাঁসির রায় দেয়া হলো?

এ প্রশ্ন করে কাদের মোল্লার আইনজীবীরা বলেন, বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, এই মোমেনা বেগম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট দেয়া জবানবন্দিতে কোথাও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী হিসেবে আবদুল কাদের মোল্লার নাম বলেননি ।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে দ্বিতীয় বারের মত নিজ পরিবারের হত্যাকাণ্ডের কথা বলতে এসে মোমেনা বেগম কেন একটিবারের জন্যও আবদুল কাদের মোল্লার নাম বললেন না, এটা চরম অবাক করার ব্যাপার। আরও হতবাক করা ব্যাপার এই যে, এই সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জবানবন্দির ভিত্তিতে কিভাবে আপিল বিভাগ ফাঁসির সাজা দিলেন?

এ মোমেনা বেগমই ২০১২ সালের ১৭ জুলাই ট্রাইবুনাল-২ এ এসে আবদুল কাদের মোল্লার নাম হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত করে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য দেয়ার পর মোমেনা বেগমকে ডিফেন্স পক্ষের জেরায় আবদুল কাদের মোল্লাকে তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে দেখেছেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দেখিনি, শুনেছি। এখানেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন মোমেনা বেগম। এই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচারকরা কিভাবে ফাঁসির আদেশ দিলেন? এই প্রশ্নও করেছিলেন কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে।

 

তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দি ও জেরা থেকে জানা যায় মোমেনা বেগমকে ৩নং অভিযোগে উল্লিখিত সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। অথচ মোমেনা বেগম এসে সাক্ষী দিলেন ৬নং অভিযোগের বিষয়ে।

এদিকে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়া মোমেনা বেগম প্রকৃত মোমেনা বেগম নন বলে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেছেন কাদের মোল্লার ছেলে। তিনি বলেন, আদালতে যে মোমেনা বেগম এসেছেন তিনি হজরত আলী লস্করের মেয়ে নন। সরকার মোমেনা বেগমের নামে একজন ভুয়া মহিলাকে সাক্ষী সাজিয়ে আদালতে এনে জবানবন্দি দিয়েছে। প্রকৃত মোমেনা বেগম আদালতে আসেননি।

 

সময় ও সুযোগ হলে প্রকৃত মোমেনা বেগম এ বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরবেন। প্রকৃত মোমেনা আদালতে এসে তার নামে মিথ্যা সাক্ষী তৈরির বিষয়ে জবানবন্দি দেয়া ইচ্ছা থাকলেও হয়তো সুখরঞ্জন বালীর পরিণতির কথা চিন্তা করে আসেননি। কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয় যে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পর সরকার সমর্থক ও শাহবাগে কিছু তরুণ উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করলেও মোমেনা বেগম কোথাও কোনো বক্তব্য দেননি। যার জবানবন্দির ভিত্তিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো সেই মোমেনা সাংবাদিকদের কাছে তার ক্ষোভ বেশি করে প্রকাশ করার কথা।

 

কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের কাছে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। সাংবাদিকরাও তার কাছে প্রতিক্রিয়ার জন্য যাননি। সরকারও তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করেনি। মূলত মোমেনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হওয়ার ভয়ে সরকার তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির হতে দেয়নি। এতেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে, আদালতে কাদের মোল্লাকে জড়িয়ে জবানবন্দি দেয়া মহিলা প্রকৃত মোমেনা নন। বিষয়টি অদূর ভবিষ্যতেই পরিষ্কার হবে বলেও জানান কাদের মোল্লার আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে কাদের মোল্লার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, মোমেনা বেগম তিনবার জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রথম ও দ্বিতীয়বার তিনি হযরত আলী ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কাদের মোল্লার নামটিও উচ্চারণ করেননি। তৃতীয়বার ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিলেও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এ ধরনের সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের নজির বিশ্বে নেই। কিন্তু আপিল বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ এ জবানবন্দির ভিত্তিতেই কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিলেন।

বিচারকদের নিয়ে প্রশ্ন
আপিল বিভাগের বিচারপতি এসকে সিনহা ও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে বিচারের শুরুতেই আপত্তি পেশ করেন কাদের মোল্লার আইনজীবীরা। আলোচিত স্কাইপ কথপোকথন থেকে জানা যায় যে, বিচারপতি এসকে সিনহা বিচারবহির্ভূতভাবে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রভাবিত করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমকে ফাঁসির রায় দেয়ার বিনিময়ে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়ারও আশ্বাস দেন।

স্কাইপ কথোপকথনের মাধ্যমে প্রকাশিত বিচারপতি এসকে সিনহার এ ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। সেই সঙ্গে এ কথোপকথন প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনোমিস্ট-এ প্রকাশ করে।

প্রসঙ্গত, সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে পদত্যাগের জন্য বঙ্গভবনে চায়ের দাওয়াত পেয়েছিলেন এ বিচারপতি। অপরদিকে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে সভা-সমাবেশও করেছেন। জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় তিনি বক্তব্যও দিয়েছেন। যা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে আপিল বিভাগে আপত্তি দেয়ার পরও বিচার কাজে অংশ নেন আলোচিত এ দুই বিচারপতি।

আইনজীবীরা বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একজন বিচারককের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখপূর্বক ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করে আবেদন করলে সেই বিচারক নিজ থেকেই সরে পড়েন। ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সংসদ ভবনের বিশেষ কোর্টে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের সময়ও আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট বিচারকের প্রতি ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে অনাস্থা আবেদন করেছিলেন। বিচারক তাত্ক্ষণিকভাবেই বিচারকাজ থেকে সরে দাঁড়ান। সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে অনাস্থা দেয়ার পরও বিচারপতি এসকে সিনহা ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার আপিল শুনানিতে অংশ নেন। পরে আপিলের রায়ে দেখা যায় যে, এই দুজনই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের পক্ষে মত দেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কাদের মোল্লা শুধু ন্যায় বিচার থেকেই বঞ্চিত হননি। হত্যাণ্ডের শিকারে পরিণত হয়েছেন।
মিরপুরের কসাই কাদের আর ফরিদপুরের কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নন। ফদিরপুরের কাদের মোল্লা আর মিরপুরের কসাই কাদের এক ব্যক্তি নন। তথ্য প্রমাণসহ আইনজীবীরা এ দাবি করেন।

 

আদালতে তাদের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সানাউল্লাহ মোল্লা ও দাদার নাম আবু মোল্লা। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন ১৯৬৯ সালে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে ৭ মার্চের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামের বাড়িতে চলে যান ও যুদ্ধের পুরো সময় তিনি গ্রামেই অবস্থান করেন। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেন।

 

মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় কমান্ডারের বাড়িতেই পুরো যুদ্ধের সময় অবস্থান করেন। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে তিনি পুনরায় ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন অব্যাহত রাখেন ও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা অবস্থায়ই তিনি ১৯৭৪-৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবের খুনি হলে কী করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেন। এ প্রশ্ন কাদের মোল্লার পরিবারের।

 

ওই সময়ে তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি পরপর দুইবার ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে ঐক্যবদ্ধ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সত্যিই যদি যুদ্ধাপরাধী হতেন, তাহলে কী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার তাকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতেন? ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে লক্ষাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়, ৩৭ হাজার ৪৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, কিন্তু তখন আবদুল কাদের মোল্লার নামে কোথাও একটি জিডি বা একটি মামলাও করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিংবা যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধে কাদের মোল্লার নামটিও নেই।

কাদের মোল্লা দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ নাসিম, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ, জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখ জাতীয় নেতাদের সঙ্গে লিয়াঁজো কমিটিতে ছিলেন, কেয়ারটেকার আন্দোলনে তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের আগে ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তখনও দেশের কোনো সাংবাদিক কিংবা কোনো ব্যক্তিও জানেননি, কাদের মোল্লা মিরপুরের কসাই কাদের ছিলেন।

আইনজীবীরা বলেন, সরকারের সাক্ষী খন্দকার আবুল আহসান (সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবের ছেলে), কবি কাজী রোজী (শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী), সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম, শফিউদ্দিন মোল্লা প্রমুখ আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৪২ বছরের মধ্যে কোনো মামলা করল না কেন? কবি কাজী রোজী শহীদ মেহেরুন্নেসা সংক্রান্ত লেখা তার বিভিন্ন বইয়ে আবদুল কাদের মোল্লার নাম কেন উল্লেখ করল না? কেন খন্দকার আবুল আহসান ও তার বোন সখিনা খন্দকার মিরপুরের জল্লাদ খানায় ২০০৭-০৮ সালে দেয়া সাক্ষাত্কারে আবদুল কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ করল না? কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কোনো কোনো সংস্থা ও দেশ একে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছে।

হাসবে মিরপুরের কসাই কাদের
‘আমি ফরিদপুরের কাদের মোল্লা। সরকার আমাকে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করতে যাচ্ছে। আমার হত্যাকাণ্ডের পর আমি কিয়ামত পর্যন্ত কাঁদতে থাকব। আর হাসবে মিরপুরের কসাই কাদের’। কথাগুলো আবদুল কাদের মোল্লার। আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনির মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেয়া একটি ছোট্ট চিঠিতে এমন অনুভূতিই প্রকাশ করেছিলেন কাদের মোল্লা। সরকার তাকে মিরপুরের কুখ্যাত কসাই কাদের সাজিয়ে হত্যা করতে যাচ্ছে এমন কথাই বলেছেন তিনি। গোলাম মওলা রনি তার এ চিঠিটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার পর বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায় তা। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার দিন স্বজনদের হাতে দেয়া শেষ চিঠিতে কাদের মোল্লা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। শুধু ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধেই আমাকে হত্যা করা হচ্ছে। শাহাদাত মৃত্যু সবার নসিবে হয় না। আল্লাহ তায়ালা যাকে শহিদী মৃত্যু দেন সে সৌভাগ্যবান। আমি শহিদী মৃত্যুর অধিকারী হলে তা হবে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমি আমার জানামতে কোনো অন্যায় করিনি। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলনের জন্য আমি আমার জীবন উত্সর্গ করেছি। আমি অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি, কখনও করব না। দুনিয়ার কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জীবনের মালিক আল্লাহ। কিভাবে আমার মৃত্যু হবে তা আল্লাহই নির্ধারণ করবেন। কোনো ব্যক্তির সিদ্ধান্তে আমার মৃত্যু কার্যকর হবে না। আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ীই আমার মৃত্যুর সময় ও তা কার্যকর হবে। সুতরাং আমি আল্লাহর ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেব।”