সুনামগঞ্জ ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন এক্টিভিজম, সামাজিক উন্মাদনার দুয়ার

আবু তালহা বিন মনির 
  • আপডেট সময় : ০৭:১০:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিশ্ব আজ আর পিছিয়ে নেই।কালের বিবর্তনে প্রাগৈতিহাসিক যুগ ধাপে ধাপে আজকের আধুনিক যুগে গমন করেছে।এনালগ সিস্টেম হতে ডিজিটাল সিস্টেমে পরিণত হয়েছে।একসময়ের অভাবনীয় বিশ্ব আজ আমাদের হাতের মুঠোয়।বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া গ্রামের ছেলেটা,মেয়েটাও বিশ্ব হাতের মুঠোয় পুড়ে নিয়েছে।একটা স্মার্ট ফোন আছে মানে পুরো বিশ্ব তার হাতের নাগালে।ঠিক তাই।হাওরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও আমার ভাইয়েরা,বোনেরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের পরিচিত কিবা নিকটাত্মীয়ের সাথে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই যোগাযোগ রাখতে পারছে।বিশ্বের প্রসিদ্ধ,খ্যাতনামা ব্যক্তির মতামত,আলোচনা-পর্যালোচনা শুনতে, দেখতে পারছে।ইচ্ছে করলেই হিমালয় পর্বত হতে আমাজন জঙ্গল পর্যন্ত সামগ্রিক নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকনসহ বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারছে।এর সবই সম্ভব হচ্ছে কেবলমাত্র ইন্টারনেটের অভাবনীয় সাফল্যের ফলে।

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও ইন্টারনেটের অভাবনীয় সাফল্যের সাথে হাঁটছে।নিত্য সামগ্রী পণ্যের মতো ইন্টারনেটেও এখন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে।ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের এক মূহুর্তও চলছে না।আমাদের যাপিত জীবনের বড় একটা অংশ ইন্টারনেটের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।আর এর সিংহভাগ দখলে নিয়েছে স্যোসাল সাইট।এর মধ্যে ফেসবুক উল্লেখযোগ্য।এছাড়াও ওয়াটসএপ,টিকটক,ইন্সট্রগ্রাম,লাইকি’র দৌরাত্ম্য রয়েছে।স্যোসাল সাইট ফেসবুক আমাদের জনজীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে।ঘুম হতে উঠে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত এমনকি মাঝরাতে কোনো কারণে আকস্মিক ঘুম ভাঙলে সে সময়টুকু পর্যন্ত দখলে নিয়েছে ফেসবুক।আর ফেসবুকের বড় অংশটা দখলে নিয়েছে অনলাইন এক্টিভিজম।এই অনলাইন এক্টিভিজম বর্তমান বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে আমাদের উন্মাদ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে।ফেসবুক স্ক্রোলের সিংহভাগ অনলাইন একটিভিস্ট বা অনলাইন এক্টিভিজমের দখলে।আমার বেশ কয়েক মাসের পর্যবেক্ষণের পর এই উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছি যে,অনলাইন এক্টিভিজম একটা মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।যা আমাদের মানসিক ভাবে চাপ কিবা উন্মাদ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে।এক্টিভিজম বা সক্রিয়তাবাদ একটি ইতিবাচক দিক।যদিও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এক্টিভিজম বা সক্রিয়তাবাদ জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করি।অনলাইন এক্টিভিজম বা অনলাইন সক্রিয়তাবাদ হচ্ছে- “সমাজের ও রাষ্ট্রের উন্নতির উদ্দেশ্যে কোনও সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত সংস্কারকে সমর্থন,বাধাদান বা দিক নির্দেশনার প্রচেষ্টাকে বুঝায়।যারা এই প্রচেষ্টায় অংশ নেন,তাদেরকে সক্রিয়তাবাদী,আন্দোলনকর্মী বা ইংরেজিতে এক্টিভিস্ট বলে।”
এর সঙ্গাগত দিক থেকে পজিটিভ কিবা ইতিবাচক দিক মনে হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আমাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি।এক্টিভিজম জন সম্পৃক্ত ইতিবাচক দিকের কথা বললেও বর্তমান বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে তা বিপরীত। বাংলাদেশের সকল এক্টিভিস্ট জন মানুষের আবেগ পুঁজি করে রাজনৈতিক কিবা ব্যক্তিগত ফায়দা লুটে ব্যস্ত।একজন কিবা একদল এক্টিভিস্ট একটি জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন বাস্তবায়নের পাথেয় হিসেবে কাজ করতে পারে।কিন্তু বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এর ভিন্ন রূপ।বাংলাদেশের সকল অনলাইন এক্টিভিস্ট কিবা এক্টিভিজম জন আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে কাজ করছে।একটি প্রানবন্ত চমৎকার স্থিতিশীল পরিবেশের পরিবর্তে উন্মাদ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম অধঃপতনের দিকে ধাবিত।বাংলাদেশের রাজনৈতিক মূল পঁচে গিয়েছে।আর পঁচে যাওয়া এই পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অনলাইন এক্টিভিস্টগণ।আপনার স্যোসাল সাইট ফেসবুকে যদি আপনি বিশ জন এক্টিভিস্ট,বিশটি এক্টিভিজম গ্রুপকে ফলো দিয়ে থাকেন তবে নিশ্চিত থাকেন আপনার হাতের সম্পূর্ণটা দিন তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।একটা এক্টিভিস্ট দিনে কম হলেও তিনটি পোস্ট আপলোড দিয়ে থাকে,একটি সক্রিয় গ্রুপে প্রতিদিন আনলিমিডেট পোস্ট আপলোড হয়।আর এই পোস্টগুলো ঘিরেই আপনার হাতেগোনা সময় অতিবাহিত হয়।আপনি যা চান না,আপনাকে তাই গিলানো হয়।আপনি যদি একজন মধ্যম পন্থার হয়ে থাকেন তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিটা হচ্ছে আপনার।অনলাইন এক্টিভিজম আপনার কি ক্ষতি করছে তার কয়েকটি দিক হলো-:
১. আপনি না চাইলেও চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আপনাকে যুক্ত করছে।
২. অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংযুক্তি আপনার নিকটতম ব্যক্তি বা পরিচিতজনদের থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি করছে।
৪. বাংলাদেশের সকল এক্টিভিস্টদের স্বভাব সিদ্ধ জাত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও হিংসা লেপন।যাহাতে আপনাকেও সংযুক্ত করা হচ্ছে।
৫. আপনি না চাইলেও অসুস্থ ধারার বিনোদন আপনার সঙ্গ দিচ্ছে।
৬. টাইমলাইনের মাত্রাতিরিক্ত এক্টিভিজম আপনার নিকটজনের সুন্দর মূহুর্তগুলো হতে দূরে রাখছে।
৭. স্যোসাল একাউন্ট আপনার,অথচ এতে আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই।এক্টিভিজম যা দিচ্ছে আপনাকে তাই গিলতে হচ্ছে।

আপনি যদি বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করেন তাহলে এর কুফল সম্পর্কে আপনার ধারণা স্বচ্ছ হবে।আপনার টাইমলাইনে শতকরা ৯০% এক্টিভিস্ট রাজনৈতিক আলাপে দিনভর মশগুল থাকে।একজন এক্টিভিস্ট যদি গড়ে প্রতিদিন তিনটি পোস্ট আপলোড করে থাকে তবে আপনার অনুসরণ করা বিশজন এক্টিভিস্টের আপলোডকৃত পোস্ট দ্বারায় মোট ষাটটি।প্রতিটি পোস্ট-ই আপনি পড়েন।এর সবগুলো পোস্ট বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে।আপনি একজন সাধারণ মানুষ।সহজসরল চালচলন।তবুও আপনার টাইমলাইনে আগত এসকল পোস্ট আপনাকে উন্মাদ করছে।আপনি তাদের আপলোডকৃত পোস্টের লেখা পড়ছেন,ভিডিও দেখছেন,শুনছেন।লাইক,কমেন্ট,শেয়ার করছেন।এভাবে একটার পর একটা আছেই।এক এক্টিভিস্টের পর আরেক,এক এক্টিভ গ্রুপের পর আরেক গ্রুপ আছেই।এভাবেই অনলাইন এক্টিভিজম আপনাকে দিনভর মাতিয়ে রাখছে।আপনি,আমি এভাবেই তাদের ফাঁদে পা রেখে দিন কাটাচ্ছি।তারা যা ভাবছে,তারা যা চিন্তা করছে আমাদের তাই লালন করতে হচ্ছে।এটা মূলত একটা ফাঁদ।আমাদের আবেগ,আমাদের সময় পুঁজি করে তাদের সক্রিয়তা বাড়ছে।বাংলাদেশ ইস্যু প্রধান দেশ।প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইস্যু বের হবেই।এই ইস্যু ফুসলে দেয় এক্টিভিস্টরা।আর নাগিনীর মতো ফনা তুলে ইস্যু নিয়ে চরম মেতে উঠি আমরা।এখানে মূলত বীণ বাজিয়ে সাপুড়ের ভূমিকা পালন করে অনলাইন এক্টিভিজম,আর নেচে নেচে নাগিনীর ভূমিকা পালন করি আমি,আপনি,জন সাধারণ।

বাংলাদেশের অস্থিতিশীল প্রেক্ষাপট আমাকে নাড়া দেয়।আমি দীর্ঘদিন ধরে চাচ্ছিলাম যে,চলমান পরিস্থিতি হতে দূরে থাকবো।কিন্তু সেটা কোনো ক্রমেই সম্ভব হচ্ছিলো না।এক্টিভিজম আমাকে সংযুক্ত করছে।পূর্বে কোনো এক্টিভিস্ট বা ভালো কোনো এক্টিভ গ্রুপ হলেই নিজে থেকেই ফলো দিয়ে রাখতাম বা এড হতাম।যেনো ভালো কোনো লেখা বা তথ্য সামনে আসে।কিন্তু দিনদিন তাদের অসুস্থ রাজনৈতিক আলাপন আর রেষারেষি আমায় উন্মাদ করে তুলে।দিনভর যেনো তাদের প্রেসক্রাইভ আমায় গিলতে হচ্ছে।আমি যেনো তাদের প্রেসক্রিপশনে ডুবে যাচ্ছি।একটু অবসর হলেই যেনো মনে হয়- যাই,ফোনটা খুলে দেখি অমুক এক্টিভিস্ট কি লিখছে,কি করছে।খোলা হয়,দেখা হয়।শুধু উন্মাদনা,শুধু রেষারেষি আর হিংস্রতা।
উপরের কথাগুলো আমার একার নয়।এ কথাগুলো আপনার,আপনাদেরও।যিনি এখনো আমার এই কলামের পাঠক।
স্যোসাল সাইটট একটি সামাজিক প্লাটফর্ম।এখানে সুস্থ ধারার চর্চা হবে এটাই স্বাভাবিক।আপনি আপনার সুন্দর মূহুর্তগুলো শেয়ার করবেন,আপনার পরিচিতজন তাদের প্রাণবন্ত মূহুর্তগুলো শেয়ার করবে।কারো বিপদে,সমস্যায়,সম্ভাবনায় সামাজিক ভাবে প্লাটফর্ম তৈরী করা হবে এটাই ঠিক।আমরা মানুষ,আল্লাহ তা”য়ালা আমাদের বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন।সামজিক ভাবে আমাদের সহাবস্থান থাকাটা জরুরি।সামাজিক প্লাটফর্ম আমাদের সহাবস্থানের জায়গা হোক।উন্মাদনা,অস্থিতিশীলতা,রেষারেষি নিয়ে মাতোয়ারা হতে মুক্ত হতে অনলাইন এক্টিভিজম আজই এড়িয়ে চলুন।

লেখক, আবু তালহা বিন মনির শিক্ষার্থী, (ইতিহাস বিভাগ), জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ,জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

অনলাইন এক্টিভিজম, সামাজিক উন্মাদনার দুয়ার

আপডেট সময় : ০৭:১০:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্ব আজ আর পিছিয়ে নেই।কালের বিবর্তনে প্রাগৈতিহাসিক যুগ ধাপে ধাপে আজকের আধুনিক যুগে গমন করেছে।এনালগ সিস্টেম হতে ডিজিটাল সিস্টেমে পরিণত হয়েছে।একসময়ের অভাবনীয় বিশ্ব আজ আমাদের হাতের মুঠোয়।বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া গ্রামের ছেলেটা,মেয়েটাও বিশ্ব হাতের মুঠোয় পুড়ে নিয়েছে।একটা স্মার্ট ফোন আছে মানে পুরো বিশ্ব তার হাতের নাগালে।ঠিক তাই।হাওরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও আমার ভাইয়েরা,বোনেরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের পরিচিত কিবা নিকটাত্মীয়ের সাথে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই যোগাযোগ রাখতে পারছে।বিশ্বের প্রসিদ্ধ,খ্যাতনামা ব্যক্তির মতামত,আলোচনা-পর্যালোচনা শুনতে, দেখতে পারছে।ইচ্ছে করলেই হিমালয় পর্বত হতে আমাজন জঙ্গল পর্যন্ত সামগ্রিক নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকনসহ বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারছে।এর সবই সম্ভব হচ্ছে কেবলমাত্র ইন্টারনেটের অভাবনীয় সাফল্যের ফলে।

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও ইন্টারনেটের অভাবনীয় সাফল্যের সাথে হাঁটছে।নিত্য সামগ্রী পণ্যের মতো ইন্টারনেটেও এখন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে।ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের এক মূহুর্তও চলছে না।আমাদের যাপিত জীবনের বড় একটা অংশ ইন্টারনেটের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।আর এর সিংহভাগ দখলে নিয়েছে স্যোসাল সাইট।এর মধ্যে ফেসবুক উল্লেখযোগ্য।এছাড়াও ওয়াটসএপ,টিকটক,ইন্সট্রগ্রাম,লাইকি’র দৌরাত্ম্য রয়েছে।স্যোসাল সাইট ফেসবুক আমাদের জনজীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে।ঘুম হতে উঠে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত এমনকি মাঝরাতে কোনো কারণে আকস্মিক ঘুম ভাঙলে সে সময়টুকু পর্যন্ত দখলে নিয়েছে ফেসবুক।আর ফেসবুকের বড় অংশটা দখলে নিয়েছে অনলাইন এক্টিভিজম।এই অনলাইন এক্টিভিজম বর্তমান বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে আমাদের উন্মাদ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে।ফেসবুক স্ক্রোলের সিংহভাগ অনলাইন একটিভিস্ট বা অনলাইন এক্টিভিজমের দখলে।আমার বেশ কয়েক মাসের পর্যবেক্ষণের পর এই উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছি যে,অনলাইন এক্টিভিজম একটা মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।যা আমাদের মানসিক ভাবে চাপ কিবা উন্মাদ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে।এক্টিভিজম বা সক্রিয়তাবাদ একটি ইতিবাচক দিক।যদিও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এক্টিভিজম বা সক্রিয়তাবাদ জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করি।অনলাইন এক্টিভিজম বা অনলাইন সক্রিয়তাবাদ হচ্ছে- “সমাজের ও রাষ্ট্রের উন্নতির উদ্দেশ্যে কোনও সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক বা পরিবেশগত সংস্কারকে সমর্থন,বাধাদান বা দিক নির্দেশনার প্রচেষ্টাকে বুঝায়।যারা এই প্রচেষ্টায় অংশ নেন,তাদেরকে সক্রিয়তাবাদী,আন্দোলনকর্মী বা ইংরেজিতে এক্টিভিস্ট বলে।”
এর সঙ্গাগত দিক থেকে পজিটিভ কিবা ইতিবাচক দিক মনে হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আমাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি।এক্টিভিজম জন সম্পৃক্ত ইতিবাচক দিকের কথা বললেও বর্তমান বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে তা বিপরীত। বাংলাদেশের সকল এক্টিভিস্ট জন মানুষের আবেগ পুঁজি করে রাজনৈতিক কিবা ব্যক্তিগত ফায়দা লুটে ব্যস্ত।একজন কিবা একদল এক্টিভিস্ট একটি জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন বাস্তবায়নের পাথেয় হিসেবে কাজ করতে পারে।কিন্তু বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এর ভিন্ন রূপ।বাংলাদেশের সকল অনলাইন এক্টিভিস্ট কিবা এক্টিভিজম জন আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে কাজ করছে।একটি প্রানবন্ত চমৎকার স্থিতিশীল পরিবেশের পরিবর্তে উন্মাদ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম অধঃপতনের দিকে ধাবিত।বাংলাদেশের রাজনৈতিক মূল পঁচে গিয়েছে।আর পঁচে যাওয়া এই পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অনলাইন এক্টিভিস্টগণ।আপনার স্যোসাল সাইট ফেসবুকে যদি আপনি বিশ জন এক্টিভিস্ট,বিশটি এক্টিভিজম গ্রুপকে ফলো দিয়ে থাকেন তবে নিশ্চিত থাকেন আপনার হাতের সম্পূর্ণটা দিন তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।একটা এক্টিভিস্ট দিনে কম হলেও তিনটি পোস্ট আপলোড দিয়ে থাকে,একটি সক্রিয় গ্রুপে প্রতিদিন আনলিমিডেট পোস্ট আপলোড হয়।আর এই পোস্টগুলো ঘিরেই আপনার হাতেগোনা সময় অতিবাহিত হয়।আপনি যা চান না,আপনাকে তাই গিলানো হয়।আপনি যদি একজন মধ্যম পন্থার হয়ে থাকেন তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিটা হচ্ছে আপনার।অনলাইন এক্টিভিজম আপনার কি ক্ষতি করছে তার কয়েকটি দিক হলো-:
১. আপনি না চাইলেও চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আপনাকে যুক্ত করছে।
২. অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংযুক্তি আপনার নিকটতম ব্যক্তি বা পরিচিতজনদের থেকে দূরত্ব বৃদ্ধি করছে।
৪. বাংলাদেশের সকল এক্টিভিস্টদের স্বভাব সিদ্ধ জাত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও হিংসা লেপন।যাহাতে আপনাকেও সংযুক্ত করা হচ্ছে।
৫. আপনি না চাইলেও অসুস্থ ধারার বিনোদন আপনার সঙ্গ দিচ্ছে।
৬. টাইমলাইনের মাত্রাতিরিক্ত এক্টিভিজম আপনার নিকটজনের সুন্দর মূহুর্তগুলো হতে দূরে রাখছে।
৭. স্যোসাল একাউন্ট আপনার,অথচ এতে আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই।এক্টিভিজম যা দিচ্ছে আপনাকে তাই গিলতে হচ্ছে।

আপনি যদি বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করেন তাহলে এর কুফল সম্পর্কে আপনার ধারণা স্বচ্ছ হবে।আপনার টাইমলাইনে শতকরা ৯০% এক্টিভিস্ট রাজনৈতিক আলাপে দিনভর মশগুল থাকে।একজন এক্টিভিস্ট যদি গড়ে প্রতিদিন তিনটি পোস্ট আপলোড করে থাকে তবে আপনার অনুসরণ করা বিশজন এক্টিভিস্টের আপলোডকৃত পোস্ট দ্বারায় মোট ষাটটি।প্রতিটি পোস্ট-ই আপনি পড়েন।এর সবগুলো পোস্ট বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে।আপনি একজন সাধারণ মানুষ।সহজসরল চালচলন।তবুও আপনার টাইমলাইনে আগত এসকল পোস্ট আপনাকে উন্মাদ করছে।আপনি তাদের আপলোডকৃত পোস্টের লেখা পড়ছেন,ভিডিও দেখছেন,শুনছেন।লাইক,কমেন্ট,শেয়ার করছেন।এভাবে একটার পর একটা আছেই।এক এক্টিভিস্টের পর আরেক,এক এক্টিভ গ্রুপের পর আরেক গ্রুপ আছেই।এভাবেই অনলাইন এক্টিভিজম আপনাকে দিনভর মাতিয়ে রাখছে।আপনি,আমি এভাবেই তাদের ফাঁদে পা রেখে দিন কাটাচ্ছি।তারা যা ভাবছে,তারা যা চিন্তা করছে আমাদের তাই লালন করতে হচ্ছে।এটা মূলত একটা ফাঁদ।আমাদের আবেগ,আমাদের সময় পুঁজি করে তাদের সক্রিয়তা বাড়ছে।বাংলাদেশ ইস্যু প্রধান দেশ।প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইস্যু বের হবেই।এই ইস্যু ফুসলে দেয় এক্টিভিস্টরা।আর নাগিনীর মতো ফনা তুলে ইস্যু নিয়ে চরম মেতে উঠি আমরা।এখানে মূলত বীণ বাজিয়ে সাপুড়ের ভূমিকা পালন করে অনলাইন এক্টিভিজম,আর নেচে নেচে নাগিনীর ভূমিকা পালন করি আমি,আপনি,জন সাধারণ।

বাংলাদেশের অস্থিতিশীল প্রেক্ষাপট আমাকে নাড়া দেয়।আমি দীর্ঘদিন ধরে চাচ্ছিলাম যে,চলমান পরিস্থিতি হতে দূরে থাকবো।কিন্তু সেটা কোনো ক্রমেই সম্ভব হচ্ছিলো না।এক্টিভিজম আমাকে সংযুক্ত করছে।পূর্বে কোনো এক্টিভিস্ট বা ভালো কোনো এক্টিভ গ্রুপ হলেই নিজে থেকেই ফলো দিয়ে রাখতাম বা এড হতাম।যেনো ভালো কোনো লেখা বা তথ্য সামনে আসে।কিন্তু দিনদিন তাদের অসুস্থ রাজনৈতিক আলাপন আর রেষারেষি আমায় উন্মাদ করে তুলে।দিনভর যেনো তাদের প্রেসক্রাইভ আমায় গিলতে হচ্ছে।আমি যেনো তাদের প্রেসক্রিপশনে ডুবে যাচ্ছি।একটু অবসর হলেই যেনো মনে হয়- যাই,ফোনটা খুলে দেখি অমুক এক্টিভিস্ট কি লিখছে,কি করছে।খোলা হয়,দেখা হয়।শুধু উন্মাদনা,শুধু রেষারেষি আর হিংস্রতা।
উপরের কথাগুলো আমার একার নয়।এ কথাগুলো আপনার,আপনাদেরও।যিনি এখনো আমার এই কলামের পাঠক।
স্যোসাল সাইটট একটি সামাজিক প্লাটফর্ম।এখানে সুস্থ ধারার চর্চা হবে এটাই স্বাভাবিক।আপনি আপনার সুন্দর মূহুর্তগুলো শেয়ার করবেন,আপনার পরিচিতজন তাদের প্রাণবন্ত মূহুর্তগুলো শেয়ার করবে।কারো বিপদে,সমস্যায়,সম্ভাবনায় সামাজিক ভাবে প্লাটফর্ম তৈরী করা হবে এটাই ঠিক।আমরা মানুষ,আল্লাহ তা”য়ালা আমাদের বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন।সামজিক ভাবে আমাদের সহাবস্থান থাকাটা জরুরি।সামাজিক প্লাটফর্ম আমাদের সহাবস্থানের জায়গা হোক।উন্মাদনা,অস্থিতিশীলতা,রেষারেষি নিয়ে মাতোয়ারা হতে মুক্ত হতে অনলাইন এক্টিভিজম আজই এড়িয়ে চলুন।

লেখক, আবু তালহা বিন মনির শিক্ষার্থী, (ইতিহাস বিভাগ), জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ,জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।