সুনামগঞ্জ ১০:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
একুশে টিভি’র রজতজয়ন্তী উদযাপন গাজীনগর কিংস স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে ঠাকুরভোগ ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাব সেমিফাইনালে সুবিপ্রবি নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবে না ধর্মপাশায় পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু কাঠইর ইউনিয়নের এরালিয়া-ছোয়াপুর রাস্তার কাজ বন্ধ: ভোগান্তিতে চার গ্রামের শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানঘর পরিদর্শনে জগন্নাথপুর উপজেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ – মউবিয়ান’র অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠনের লক্ষ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত ভরারগাও গ্লাক্সি স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়ে পাথারিয়া সুপার স্টার সেমিফাইনালে কোটা ও খুঁটি সুনামগঞ্জ ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রে ত্রুটি, তিনটি ১১ কেভি ফিডার বন্ধ

দাম কমেছে রড-সিমেন্টের, উৎপাদনও নেমেছে অর্ধেকে

আমার সুনামগঞ্জ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৯:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ ৪০ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাজারে রড ও সিমেন্টের দাম কমেছে। উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা কমে যাওয়ার দামে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে রড ও সিমেন্ট শিল্পের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা সংকটের সম্মুখীন বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের প্রথম কোয়ার্টার (জানুয়ারি থেকে মার্চ) কে নির্মাণশিল্পের ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময় রড ও সিমেন্টের মোট চাহিদার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বিক্রি হয়। আর এ মৌসুমকে সামনে রেখেই উৎপাদন ও বিপণন পরিকল্পনা তৈরি করে রড-সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে এবার নির্মাণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই চাহিদা কমে যাওয়ায় বছরের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কমেছে উৎপাদনও। ফলে বাজারে রড ও সিমেন্টের দামও কমেছে ব্যাপক হারে।

মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বিগত সময়ে জানুয়ারি থেকে মার্চ নাগাদ এ তিন মাসে রড ও সিমেন্টের দাম বরাবরই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০২৪ সালের মার্চেও রড বিক্রি হয়েছে টনপ্রতি ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৭ হাজারের মধ্যে।

কিন্তু এ বছর রড টনপ্রতি ৮১ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্মাণশিল্পের আরেক প্রধান উপাদান সিমেন্টের অবস্থাও একই। বর্তমানে সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে কোম্পানি ভেদে প্রতি বস্তা ৪৬৫ টাকা থেকে ৫৩০ টাকা। গত বছর এ সময়ে সিমেন্টের দাম ছিল ৪৯০ থেকে ৫৫০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার উত্তরার কাওলা বাজারের মেসার্স গাউছিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইসমাঈল হোসেন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর থেকে ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে। রড-সিমেন্টের তেমন বিক্রি নেই। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কোনো বড় প্রজেক্টের কাজ নেই।

এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও আগে যারা বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করতেন তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিল্ডার্স কোম্পানিগুলো এবং অর্থ-বিত্তের মালিকও তারা।

জুলাই বিপ্লবের পর থেকে তারা সবাই পলাতক থাকায় নির্মাণকাজে কোনো গতি নেই। বছরের প্রথমদিকে যে হারে নির্মাণ কাজ হতো তা নেই বললেই চলে। এখন ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু কাজ হচ্ছে তাও খুবই কম।

এদিকে উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রায় সব রড এবং সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। নির্মাণশিল্পের ভরা মৌসুমেও ক্রেতাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া নেই। এতে চাহিদা ও উৎপাদনের গ্রাফ দুটিই এখন নিম্নমুখী।

ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারি-বেসরকারি বড় এবং মাঝারি নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ থাকায়, নতুন করে প্রকল্প শুরু না করার প্রভাব পড়েছে এ খাতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চরম সংকটে পড়বে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক কোম্পানি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন।

সিমেন্ট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা ব্যবসায় মন্দার কথা বলছেন। তারা বলেন, সিমেন্ট বিক্রিতে প্রত্যাশিত সাড়া নেই। সরকারি-বেসরকারি নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় সিমেন্ট বিক্রির অবস্থা তলানিতে। ফলে কারখানার উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অথচ এমন ভরা মৌসুমে সিমেন্টের চাহিদা থাকে তুঙ্গে।

দেশের বৃহৎ রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিএমডি) তপন সেন গুপ্ত বলেন, মার্কেটে চাহিদা কম থাকায় ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে এ শিল্প খাত সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। দাম কমার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে কাঁচামালের দাম কম, সে হিসাবে রডের দামও কিছুটা কমেছে।

বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হোসাইন আকবর আলী বলেন, ‘বর্তমানে রড বিক্রির অবস্থা খুবই করুণ। রড তৈরি কারখানা মালিকদের কারোই অবস্থা ভালো নেই। সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলতেই থাকবে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় ইস্পাত কারখানার সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে বড় কারখানা ৫০টি। এতে বছরে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টন রড উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। দেশে বার্ষিক রডের ব্যবহার ৭৫ লাখ টন। এ খাতে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও বছরে লেনদেনের পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

দাম কমেছে রড-সিমেন্টের, উৎপাদনও নেমেছে অর্ধেকে

আপডেট সময় : ০৯:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

বাজারে রড ও সিমেন্টের দাম কমেছে। উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা কমে যাওয়ার দামে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে রড ও সিমেন্ট শিল্পের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা সংকটের সম্মুখীন বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের প্রথম কোয়ার্টার (জানুয়ারি থেকে মার্চ) কে নির্মাণশিল্পের ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময় রড ও সিমেন্টের মোট চাহিদার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বিক্রি হয়। আর এ মৌসুমকে সামনে রেখেই উৎপাদন ও বিপণন পরিকল্পনা তৈরি করে রড-সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

তবে এবার নির্মাণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই চাহিদা কমে যাওয়ায় বছরের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কমেছে উৎপাদনও। ফলে বাজারে রড ও সিমেন্টের দামও কমেছে ব্যাপক হারে।

মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বিগত সময়ে জানুয়ারি থেকে মার্চ নাগাদ এ তিন মাসে রড ও সিমেন্টের দাম বরাবরই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০২৪ সালের মার্চেও রড বিক্রি হয়েছে টনপ্রতি ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৭ হাজারের মধ্যে।

কিন্তু এ বছর রড টনপ্রতি ৮১ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্মাণশিল্পের আরেক প্রধান উপাদান সিমেন্টের অবস্থাও একই। বর্তমানে সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে কোম্পানি ভেদে প্রতি বস্তা ৪৬৫ টাকা থেকে ৫৩০ টাকা। গত বছর এ সময়ে সিমেন্টের দাম ছিল ৪৯০ থেকে ৫৫০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকার উত্তরার কাওলা বাজারের মেসার্স গাউছিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইসমাঈল হোসেন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর থেকে ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে। রড-সিমেন্টের তেমন বিক্রি নেই। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, দেশে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি কোনো বড় প্রজেক্টের কাজ নেই।

এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও আগে যারা বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করতেন তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিল্ডার্স কোম্পানিগুলো এবং অর্থ-বিত্তের মালিকও তারা।

জুলাই বিপ্লবের পর থেকে তারা সবাই পলাতক থাকায় নির্মাণকাজে কোনো গতি নেই। বছরের প্রথমদিকে যে হারে নির্মাণ কাজ হতো তা নেই বললেই চলে। এখন ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু কাজ হচ্ছে তাও খুবই কম।

এদিকে উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রায় সব রড এবং সিমেন্ট কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। নির্মাণশিল্পের ভরা মৌসুমেও ক্রেতাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া নেই। এতে চাহিদা ও উৎপাদনের গ্রাফ দুটিই এখন নিম্নমুখী।

ব্যবসায়ীদের দাবি সরকারি-বেসরকারি বড় এবং মাঝারি নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ থাকায়, নতুন করে প্রকল্প শুরু না করার প্রভাব পড়েছে এ খাতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চরম সংকটে পড়বে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক কোম্পানি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন।

সিমেন্ট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা ব্যবসায় মন্দার কথা বলছেন। তারা বলেন, সিমেন্ট বিক্রিতে প্রত্যাশিত সাড়া নেই। সরকারি-বেসরকারি নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় সিমেন্ট বিক্রির অবস্থা তলানিতে। ফলে কারখানার উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অথচ এমন ভরা মৌসুমে সিমেন্টের চাহিদা থাকে তুঙ্গে।

দেশের বৃহৎ রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিএমডি) তপন সেন গুপ্ত বলেন, মার্কেটে চাহিদা কম থাকায় ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে এ শিল্প খাত সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। দাম কমার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে কাঁচামালের দাম কম, সে হিসাবে রডের দামও কিছুটা কমেছে।

বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হোসাইন আকবর আলী বলেন, ‘বর্তমানে রড বিক্রির অবস্থা খুবই করুণ। রড তৈরি কারখানা মালিকদের কারোই অবস্থা ভালো নেই। সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলতেই থাকবে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় ইস্পাত কারখানার সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে বড় কারখানা ৫০টি। এতে বছরে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ টন রড উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। দেশে বার্ষিক রডের ব্যবহার ৭৫ লাখ টন। এ খাতে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও বছরে লেনদেনের পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা।