সীমান্তে আবারও বর্বরতা, বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল বিএসএফ

- আপডেট সময় : ০৯:২৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে
আবারও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এবার ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পলিয়ানপুর সীমান্তে ওয়াসিম নামে এক বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএসএফ। হত্যার পর তার লাশ ইছামতি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। শুক্রবার ওই যুবকের লাশ ভেসে ওঠে। এদিকে লাশটি বাঘাডাঙ্গার গ্রামের বুনোপাড়ার ওয়াসিমের বলে প্রথম থেকেই সন্দেহ করে আসছিল তার পরিবার। নিহত ওয়াসিম বাঘাডাঙ্গা গ্রামের রমজান আলীর ছেলে।
বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য ওবাইদুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুরে হুদাপাড়া গ্রামের এক কৃষক মাঠে যাওয়ার পথে লাশ ভাসতে দেখে। খবর পেয়ে বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তবে লাশ নদীতে থাকায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তার নাম পরিচয় অজানা ছিল। কিন্তু ধুড় পাচারের সময় ভারতের অভ্যন্তরে ওয়াসিমের সঙ্গে যাওয়া মহেশপুরের সলেমানপুর গ্রামের আব্দুস সোবহান, কাঞ্চনপুর গ্রামের রাজু,বাগাডাংগা গ্রামের শাাবুদ্দিন, মানিক ও আব্দুল ওয়াহেদ পালিয়ে আসে তারা লাশটি ওয়াসিমের বলে জানায়।
ওয়াসিমের বড় ভাই বুনোপাড়ার মেহেদী হাসান দাবি করেন, তার ভাই ওয়াসিম ৩/৪ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। মাঝেমধ্যে তিনি ভারতে যাতায়াত করতো বলে শুনেছি। গত ৮ এপ্রিল ওয়াসিমসহ ক’জন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যায়। ভারত থেকে ফেরার সময় বিএসএফ তাদের ধাওয়া করলে অন্যান্যরা পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে ওয়াসিম। তাকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওয়াসিমের পিতা রমজান আলী শুক্রবার রাতে জানান, বিভিন্ন সূত্রে তিনি জানতে পারছেন লাশটি তার ছেলে ওয়াসিমের। তিনি দ্রুত লাশটি উদ্ধারের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে খালিশপুর ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে কর্নেল রফিকুল আলম জানান, লাশটি ইছামতি নদীর ভারতীয় অংশে থাকায় উদ্ধার করা যায়নি। তবে বিএসএফকে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, লাশটি বাংলাদেশি না ভারতীয় তা এখনো আমরা জানতে পারিনি। এছাড়া কোন পরিবার তাদের কোন সদস্য নিখোঁজ থাকার বিষয়েও জানায়নি।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন মনিরা জানান, ইছামতি নদীর ভারতীয় অংশে একটি লাশ ভাসছে এটা শুনেছি। তবে লাশের পরিচয় মেলেনি।
মহেশপুর থানার ওসি ফয়েজ উদ্দিন মৃধা বলেন, ইছামতী নদীর ভারতীয় অংশে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে একটি লাশ পড়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি কাজ করছে। বিএসএফের সঙ্গে বিজিবি যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিবেন। কাজেই বিজিবি না জানানো পর্যন্ত আমরা কোনো কিছু নিশ্চিত করে বলতে পরছি না।
এর আগে গত মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে মুরাদুর রহমান মুন্না নামে এক বাংলাদেশি যুবককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার পরিবারের। চলতি বছর ৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের পাশে পাহাড়ি ছড়ায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি যুবক সাইদুল ইসলাম। এছাড়া ১২ জানুয়ারি লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বিএসএফের গুলিতে শহিদুল ইসলাম (৪২) নামে এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এর কয়েকদিন পর আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত হন বাংলাদেশি যুবক হাবিল উদ্দিন।
গত এক দশক ধরে সীমান্তে এভাবেই বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে ভারতীয়রা। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) জানায়, গত এক দশকে সীমান্তে ২৯৩ বাংলাদেশিকে শুধু গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।