বর্ণাঢ্য এক জীবনের অধিকারী প্রফেসর খুরশিদ আহমাদ রহ..

- আপডেট সময় : ০৬:১৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
আমার জানামতে, উপমহাদেশে জামায়াতের সবগুলো ফোরামের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে প্রবীণ দায়িত্বশীল। অনেক বছর যাবৎ তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও বহু বছর তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন। তারপরও দলের আমীর যিনি হোন না কেন, তারা সবাই খুরশিদ আহমাদকে ওস্তাদের আসনেই রেখেছেন।
প্রফেসর খুরশিদ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩২ সালের ২৩ মার্চ। তিনি জামায়াতের প্রবীণ নেতা ও বুদ্ধিজীবী ছাড়াও একজন সফল অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও কর্মী হিসেবে পরিচিত। ইসলামী অর্থনীতির রূপ কেমন হতে পারে- এ বিষয়ে তিনি ফান্ডামেন্টাল কিছু কাজ করে গেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের লেস্টারে অবস্থিত দ্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সিনেটে সদস্য ছিলেন।
খুরশিদ আহমদ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লেস্টার থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল ইসলামিক অর্থনীতি। ১৯৮০-এর দশকে জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে পাকিস্তানের ইসলামায়ন প্রক্রিয়ার সময় তিনি একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৮ সালে তিনি ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজ’ এবং ১৯৯০ সালে ‘কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর সার্ভিস টু ইসলাম’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রফেসর খুরশিদ আহমাদ দ্বীন ইসলামের খেদমত ও যুক্তরাজ্যের লেস্টারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার জন্য এই কিং ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রফেসর আহমদ পাকিস্তানে ইসলামিক অর্থনৈতিক গবেষণার আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এর পাশাপাশি, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির বৈজ্ঞানিক পরিষদে তাঁর অসাধারণ অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি পাকিস্তানের অন্যতম ইসলামী নেতৃবৃন্দের একজন এবং পাকিস্তানি ইসলামি আন্দোলনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বক্তব্য ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন এবং ইসলামের চিন্তাধারা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
একাডেমিক লাইফে খুরশিদ আহমদ আইন ও ফিকাহ বিষয়ে দুটি স্নাতক ডিগ্রি, অর্থনীতি ও ইসলামিক স্টাডিজে দুটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, এবং শিক্ষা ও ইসলামিক অর্থনীতিতে দুটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন পণ্ডিত ও ইসলামী কর্মী হিসেবে, প্রফেসর খুরশিদ আহমদ ৭০টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন—যার মধ্যে ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় সমান সংখ্যক ৩৫টি করে বই রয়েছে। এছাড়াও, তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী অন্তত ১০০টিরও বেশি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। মাওলানা মওদূদী রহ. এর সিলসিলা হিসেবে তিনি ‘তর্জুমানুল কুরআন’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রফেসর খুরশিদ ইসলামি ধর্মীয়, একাডেমিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংবিধানিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি করাচি ও লাহোরের ইসলামিক রিসার্চ একাডেমির ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং ইসলামাবাদের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, জর্ডানের রয়্যাল একাডেমি ফর ইসলামিক সিভিলাইজেশন এবং নাইজেরিয়ার জারিয়ায় অবস্থিত ইসলামিক সেন্টারের বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের ফেডারেল মন্ত্রী (পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়), করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এরকম ঈর্ষনীয় ক্যারিয়ারের নেতা ইসলামী আন্দোলনের কাঠামোতে খুবই দুর্লভ। আল্লাহর কাছে দুআ করি, আল্লাহ পাক যেন এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের যাবতীয় নেক আমল কবুল করে তাকে জান্নাত নসীব করেন। একইসাথে দুআ করি, ইসলামী আন্দোলনের পথে এরকম সফল ও ডায়নামিক নেতা বারবার দান করুন। আমিন।