ঝড়ে উড়ে গেল ভূমিহীন পরিবারের ঘর, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই

- আপডেট সময় : ১১:১০:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ৮৩ বার পড়া হয়েছে
নিভৃত অঞ্চলের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুছ (৬৫) নিজের নেই জায়গা জমি। আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের ভিটায়। সেখানে একটি জরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস। কাটে দুর্বিষহ জীবনযাপন। এরই মধ্যে ঝড় হাওয়ায় উড়ে গেছে তার সেই ঘরের চালা। ভেঙ্গে পড়ে ঘরের দেওয়াল এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস এই ভূমিহীন পরিবারের।
সম্প্রতি এমনি এক অদ্ভূত চিত্র দেখা গেছ,সুনামগঞ্জ জেলা শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ গ্রামে।
এখানে উড়ে যাওয়া ভাঙা ঘরে নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন ভূমিহীন আব্দুল কুদ্দুছ ও তার পরিবার। চরম হতাশায় যেন আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠছে তার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গনিগঞ্জ গ্রামের মৃত আব্দুল মগ্নীর ছেলে দিন মজুর আব্দুল কুদ্দুছ। যুব বয়সে বিয়ে হলেও সেই সংসারে উপার্জন করার মত সে ছাড়া আর কেউ নেই। পৈতৃক সূত্রে কোন সহায় সম্বল বা জমিজমা না থাকায় দিন মজুরী করে সংসার চালাতে হয়। স্ত্রী, ৬ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তবে বাঁশঝাড়ের মধ্যে এ বাড়িতে নেই কোন টিউবয়েল ও টয়লেট সুবিধা। আর বিদ্যুৎবিহীন ভূতরে বসবাস। জীবিকার তাগিতে বিক্রি করেন কচুশাক। যে শাক রাস্তার ধারে অযন্তে অবহেলায় বড় হয় সেই শাক সংগ্রহ করে বিভিন্ন হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন আব্দুল কুদ্দুছ।যখন যে কাজ পান সেই কাজ করে অর্থ উপার্জন করে এ থেকে কোনমতে জীবিকা চলে তার। সারাদিন হারভাঙা পরিশ্রম করে ঘরে একটু ভালোভাবে ঘুমাবেন তাও হয় না।গ্রামের একপাশে হাওয়রের পাশে জরাজীর্ণ ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে এই ভূমিহীন পরিবারের ।
গত ৮ এপ্রিল রাতের বেলায় হঠাৎ তুফান এসে সব কিছু তছনছ করেছে। উড়ে গেছে সেই মাটির ঘরের চালা। এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস। সন্তানকে নিয়ে বেড়েছে আরও দুর্দশা।বৈশাখের বৃষ্টিতে রাত্রীযাপন করতে হচ্ছে ভেজা বিছানায়।আর সন্তান নিয়ে শরীর ভিজে যবুথবু হয়ে থাকছেন এই আব্দুল কদ্দুছ এর পরিবার। নেই খাবারের ব্যবস্থাও। এখন কি হবে কই যাবে, সব শেষ হয়ে গেছে তার।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী নুরিয়া বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, তুফানে আমাদের ঘর উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় আমরা সন্তানদেরকে নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। অনেক কষ্ট করে অল্প জমিতে একটি ঘর তুলে বসবাস করতাম। সেটাও আবার বাতাসে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত মেলেনি প্রশাসনের কিংবা জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা। সরকারিভাবে আমাকে একটি যদি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে হয় কিছু আরামে থাকতে পারতাম।
পাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, ৭নং ওয়ার্ডের গনিগনঞ্জ গ্রামের দিন মজুর আব্দুল কদ্দুছের ঘর তুফানে উড়ে গেছে সেটি তাকে জানানো হয়েছে।এটা খতিয়ে দেখে তাকে সহযোগীতার চেষ্টা করবো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল কুদ্দুছ ব্যাপারটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া হবে। সম্ভব হলে তাকে সহযোগীতা করা যেতে পারে।