আমার দেখা সবচাইতে জেন্টলম্যান ছিলেন তিনি: মীর্জা গালিব

- আপডেট সময় : ১২:০৪:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / 82
এক,
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। ঠিক কবে কোথায় প্রথম দেখা হয়েছিল, ঠিক ঠাক মনে নাই। কিন্তু উনার চেম্বারে আমার অসংখ্যবার যাওয়া হইছে, বহুবার বহু ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা হইছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অনেকগুলো ডিবেট এর প্রোগ্রামে উনি সভাপতিত্ব করেছিলেন। আইআরডি নামে একটা রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ছিল, ডা. রবি ভাই ওইটার কোঅরডিনেটর ছিলেন।আইআরডির অনেকগুলো প্রোগ্রামে রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে খুব ক্লোজলি কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, আমাদের। ২০০৯ সালে যখন আমি কানাডাতে চলে যাই, আসাদ ভাই তখন আমেরিকাতে চলে যান। আমাদের যাওয়ার আগে রাজ্জাক ভাই আইআরডিতে ছোট করে একটা অনুষ্ঠান করেছিলেন আমাদের নিয়ে। এর আগে নিজামী ভাইয়ের একটা টেলেভিশান বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট লেখার কাজেও উনার সাথে একবার কাজ করেছিলাম আমি। এইরকম অনেক অনেক স্মৃতি আমার উনার সাথে।
দুই,
রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে এইসব কাজ করার সময় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের শেষের দিকের এবং মাস্টার্সের ছাত্র ছিলাম। উনি তখন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা আইনজীবী। ইটিভির মামলা জেতার পরে অনেকটা রকস্টার আইনজীবী। জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন তখন। প্রফেশনাল লাইফে এতটা সফল একজন মানুষ, আমাদের মত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উঠতি তরুণদের সাথে যেইরকম ভাবে মিশেছেন, কথা শুনেছেন, অনেক উদ্ধত উলটাপালটা আচরণ সয়ে গেছেন – তখন এইটাকে তেমন কিছু মনে হয় নাই। কিন্তু জীবনের এতটা সময় পথ চলার পরে এখন নিজেই যখন প্রফেশনাল লাইফে আছি, এখন মনে হয়, অনেক বড় হৃদয়ের মানুষ না হলে, অনেক যোগ্যতম মানুষ না হলে এই আচরণ সম্ভব না। রাজ্জাক ভাই পারফেক্ট জেন্টেলম্যান ছিলেন। খুব সম্ভবত আমার দেখা সবচাইতে জেন্টেলম্যান তিনি।
তিন,
রাজ্জাক ভাইর পড়াশুনা ছিল অনেক। ইসলাম, রাজনীতি, সমাজ নিয়ে উনার উপলব্ধি অত্যন্ত গভীর ছিল। প্রায়ই, সূরা ইউসুফ কোট করে বলতেন, আল্লাহর উপর ভরসা হারানো কোন মুসলমানের কাজই হইতে পারে না। একসময় লন্ডনের ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়ে দেশে চলে আসছিলেন। রাজনৈতিক কারনে পরে আবার এক সময় দেশে থাকতে পারেন নাই, আবার লন্ডনে চলে যাইতে হইছে। কিন্তু কখনোই তাঁকে এইগুলো নিয়ে তেমন হাহুতাশ বা দুশ্চিন্তা করতে দেখি নাই। বরং দেশে ফিরে উনার আইনজীবী স্কিল দিয়ে যে কিছু কাজ করতে পেরেছিলেন, এইজন্য ব্যক্তিগত হিসাবের বাইরে উঠে কন্ট্রিবিউশান করার আনন্দে আনন্দিত ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে দৈন্যতা, এইটা নিয়ে তাকে উদগ্রীব থাকতে দেখেছি বহুদিন।
চার,
আমাদের জেনারেশানে আমরা যাদেরকে দেখে বড় হইছি, প্রেরনা পাইছি, রাজ্জাক ভাই তার মধ্যে অন্যতম। একই সাথে ক্যারিয়ারে সাক্সেসফুল হওয়া আবার ইসলামী আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকা, নিজের মোরালিটি ঠিক রেখে আইন পেশায় ভাল করা, প্রফেশনাল সাকসেস এর পাশাপাশি দেশ-সমাজের জন্য কন্ট্রিবিউশান করা, এইরকম অনেকগুলো বিরল প্রতিভার সম্মিলন ছিলেন উনি। গত ডিসেম্বারে যখন উনার সাথে আমার দেখা হইছিল ঢাকায়, তখনও উনার আলোচনার বিষয় ছিল উনার কাজের প্রায়োরিটি লিস্ট, জীবনের যে টুকু সময় বাকী আছে এইটুকুকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়। আমার সৌভাগ্য আমি এমন একজন মানুষের সাথে কিছুটা কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।আরো বহুদিন আমি আমার জীবনে উনার মত বিনয়ী “পারফেক্ট জেন্টেলম্যান” হওয়ার জন্য সাধনা করে যাব। আল্লাহ সুবহানু তায়লা উনার ত্রুটি দূর্বলতা মাফ করে পরকালীন জীবনে সম্মানিত করুক – এই দোয়া করি।