শিক্ষকের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের কেমন হওয়া উচিত আমাদের সোশ্যাল পলিসি?

- আপডেট সময় : ০৮:৩৬:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / 150
শিক্ষক হচ্ছেন সমাজের soft power নির্মাতা। তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শুধুই বেতন বা পদোন্নতি যথেষ্ট নয়— সমাজ ও রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। বাংলাদেশের মত একটি বৈচিত্র্যময় ও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা যদি জোরালো হয়, তবে সেটি একটি বৃহত্তর সামাজিক ঐক্য গঠনের অন্যতম ভিত্তি হতে পারে।
একটি টেকসই, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গঠনে শিক্ষাবিষয়ক সামাজিক নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক নীতি শুধু একটি পলিসি ডকুমেন্ট নয়; এটি একটি সমাজের মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যতের প্রতিফলন। বাংলাদেশের মতো একটি বৈচিত্র্যময় ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শিক্ষাকে কেবল দক্ষতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে না দেখে সমাজগঠনের প্রধান ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা জরুরি।
শিক্ষাকে শুধুমাত্র চাকরি বা অর্থনৈতিক সাফল্যের উপকরণ হিসেবে দেখলে এর গভীর মানবিক দিক অবহেলিত হয়। একটি ভ্যালু-ভিত্তিক শিক্ষানীতি এই বিশ্বাসে দাঁড়িয়ে থাকে যে শিক্ষা মানুষের নৈতিক গঠন, দেশপ্রেম, সহনশীলতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার মাধ্যম। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নৈতিকতা, মানবিকতা, সহানুভূতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা শেখানো হয়—পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠায় নয়, বরং শিক্ষার্থীর মননে।
পাঠ্যক্রমে মানবতা, সামাজিক ঐক্য ও দায়িত্ববোধের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা, কেবল রচনা বা প্রবন্ধে সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যবহারিক শিক্ষা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে শেখানো উচিত। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজের ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে উঠবে। সামাজিক বিভাজন, হিংসা ও অসহিষ্ণুতার পরিবর্তে তখন গড়ে উঠবে সহানুভূতিশীল, সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক সমাজ।
একটি কার্যকর সামাজিক শিক্ষানীতির চূড়ান্ত স্তম্ভ হওয়া উচিত শিক্ষক—কারণ তাঁরাই এই নীতির বাস্তব রূপকার। অথচ প্রায়শ দেখা যায়, নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের মতামত অবহেলিত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি। শিক্ষকদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা উচিত, যাতে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সমস্যা নির্ভর পরামর্শ উঠে আসে।
Teacher unions বা শিক্ষক সংগঠনগুলোকে শুধুমাত্র দাবি-দাওয়া তোলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে না দেখে, বরং শিক্ষানীতি প্রণয়নের অংশীদার হিসেবে দেখা প্রয়োজন। তাঁদের পরামর্শ নিলে, সিদ্ধান্তগুলো হবে বাস্তববাদী, প্রয়োগযোগ্য এবং শিক্ষক সমাজে গ্রহণযোগ্য। এর ফলে শিক্ষকদের মধ্যে মালিকানার বোধ তৈরি হবে এবং নীতির সফল বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে।
একটি টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা তখনই সম্ভব, যখন তা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হয়—বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। গ্রামাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল কিংবা শহরের বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের শিক্ষা অধিকারের নিশ্চয়তা না থাকলে সামাজিক বৈষম্য শুধু আরও বাড়বে। এজন্য শিক্ষাবিষয়ক সামাজিক নীতিতে ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’কে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করতে হবে, যেখানে প্রত্যেক শিশু, তাদের অবস্থান, জাতিসত্তা বা আর্থসামাজিক পটভূমি নির্বিশেষে মানসম্মত শিক্ষা পাবে।
শিক্ষাকে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব মনে করলে স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তাগুলো অনেক সময় উপেক্ষিত হয়। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্থানীয় নাগরিকদের—বিশেষ করে অভিভাবক, সমাজসেবী ও জনপ্রতিনিধিদের—সক্রিয়, জবাবদিহিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে সমাজ-নির্ভর, সমাজ-উপযোগী।
এই কাঠামোর একটি উন্নত উদাহরণ হলো “কমিউনিটি স্কুল” ধারণা, যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকে। এমন স্কুল শুধু পড়াশোনার কেন্দ্র নয়, বরং সামাজিক সংহতি, সাংস্কৃতিক চর্চা ও সচেতনতার কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। এতে করে বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে জনগণের মালিকানা তৈরি হয় এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে সবাই সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেন।
এছাড়া, শিক্ষকতার পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং একটি লিঙ্গ-সাম্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করাও গুরুত্বপূর্ণ। নারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক রোল মডেল হিসেবে কাজ করেন, বিশেষ করে ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে। তাই এই পেশায় নারীদের আগমন এবং স্থায়িত্বে সহায়ক নীতিমালা তৈরি অপরিহার্য।
শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি শুধু সমাজে শিক্ষকদের অবস্থান উন্নত করাই নয়, বরং শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের পূর্বশর্ত। এই মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম পথ হলো পেশাগত মর্যাদা ও বেতন কাঠামোর উন্নয়ন। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশা অনেক সময়ই অন্যান্য সরকারি চাকরির তুলনায় কম মর্যাদাপূর্ণ বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ফলে মেধাবী তরুণরা এ পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষাব্যবস্থার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই শিক্ষকতাকে অন্যান্য সরকারি চাকরির মতোই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, যাতে সমাজে শিক্ষকরা তাদের প্রাপ্য সম্মান ফিরে পান এবং নতুন প্রজন্ম এই পেশায় গর্বভরে প্রবেশ করতে চায়।
একইসাথে, ‘সহকারী শিক্ষক’ টাইপের পদবির প্রচলন শিক্ষকতার মান ক্ষুণ্ণ করে। এসব পদবিকে আপাততঃ বিলুপ্ত করে ‘শিক্ষক’ পদকেই একটি অভিন্ন, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসা উচিত, যাতে পদবির মাধ্যমেই সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শিক্ষক সমাজের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এই জাতি সামাজিক মর্যাদাকে অত্যন্ত সেন্সিটিভ দৃষ্টিতে দেখে। তাই এই বিষয়ে সতর্কতা দরকার।
পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বর্তমানে অনেক শিক্ষক দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থাকেন, যা তাঁদের পেশাগত অগ্রগতি ও উদ্যমকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ ও দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। এতে শিক্ষকরা নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নে আগ্রহী হবেন এবং তাদের মাঝে পেশাগত প্রতিযোগিতা ও উৎকর্ষের মনোভাব জন্মাবে।
অন্যদিকে, শহর ও গ্রামের স্কুলগুলোর মধ্যে সুযোগ-সুবিধার মারাত্মক পার্থক্য রয়েছে। ফলে অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষকরা সাধারণত শহরের স্কুলেই থাকতে চান, যা গ্রামীণ শিক্ষার মানকে পিছিয়ে দেয়। এই বৈষম্য নিরসনের জন্য গ্রামাঞ্চলে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য ইনসেনটিভ চালু করা যেতে পারে—যেমন অতিরিক্ত বেতন, আবাসন সুবিধা, প্রমোশনে অগ্রাধিকার, যানবাহন (কার, মোটরসাইকেল ইত্যাদি) প্রদান ইত্যাদি। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে আগ্রহী হবেন এবং দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।
শিক্ষকের মর্যাদা কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; তাদের সামাজিক স্বীকৃতিও জরুরি। এজন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নিয়মিতভাবে শিক্ষক পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে। এমন পুরস্কার শিক্ষক সমাজের মধ্যে উৎসাহ বাড়াবে এবং তাঁদের অবদানকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেবে। এতে শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং সমাজেও তাঁদের মর্যাদা সুসংহত হবে।
একইসাথে, গণমাধ্যমে শিক্ষকদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। নাটক, সিনেমা, সংবাদ ও অন্যান্য গণমাধ্যমে যখন শিক্ষকদের ত্যাগ, নিষ্ঠা ও মানবিক দিকগুলো তুলে ধরা হয়, তখন তা সমাজে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। শিক্ষকের ইতিবাচক চিত্র দেখে তরুণ সমাজে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকর্ষণ জন্মায় এবং সামাজিকভাবে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠে। তাছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হলে, সমাজে তাঁদের গুরুত্ব ও অবস্থান দৃশ্যমান হয়, যা মর্যাদা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উপায় হলো মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ। অনেক শিক্ষক তাঁদের পেশাগত জীবনে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই বছরের পর বছর পাঠদান করে চলেন, যা শিক্ষার গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে তাঁরা কেবল পাঠদানের কৌশলই নয়, বরং নেতৃত্ব, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা, মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের দিকগুলোতেও দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। একজন শিক্ষক যেন শুধুমাত্র জ্ঞানের উৎস না হয়ে, শিক্ষার্থীর মানবিক ও সামাজিক বিকাশের পথপ্রদর্শকও হয়ে উঠতে পারেন—এই লক্ষ্য সামনে রেখে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা উচিত।
প্রযুক্তির এই যুগে প্রশিক্ষণ শুধু অফলাইনে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। অনলাইন এবং অফলাইন—উভয় মাধ্যমেই ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষকরা আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি, ডিজিটাল টুলস ও ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন। এতে তাঁরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীদেরও প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারবেন। একজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিন্তাশীলতা, সৃজনশীলতা ও নৈতিকতা গড়ে তুলতে, যা একটি প্রগতিশীল সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে, শিক্ষাপ্রক্রিয়া একপেশে ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হলে, শিক্ষার পরিবেশ আরও ফলপ্রসূ হয়। এজন্য বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদে শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগানো যায়। শিক্ষকরাই বিদ্যালয়ের কেন্দ্রবিন্দু; তাই তাঁদের প্রশাসনিক অংশগ্রহণ কেবল যৌক্তিক নয়, বরং আবশ্যক।
এছাড়া, জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা সংক্রান্ত যে কোনো নীতি বা কারিকুলাম প্রণয়নের সময় শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। তাঁরা সরাসরি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কাজ করেন, তাই কোন বিষয় বাস্তবসম্মত বা সময়োপযোগী, তা তাঁরাই সবচেয়ে ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেন। এই অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও গ্রহণযোগ্য ও দক্ষ করে তুলবে এবং শিক্ষকরা তাঁদের ভূমিকা নিয়ে গর্ববোধ করবেন, যা শেষ পর্যন্ত তাদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
বাংলাদেশের ক্ষীয়মাণ সামাজিক সংহতির প্রেক্ষাপটে শিক্ষাবিষয়ক সামাজিক নীতিকে এমনভাবে প্রেক্ষাপস্থ করা উচিত, যাতে শিক্ষা ব্যবস্থাই সমাজের বিভাজন, বৈষম্য ও অসহিষ্ণুতা দূরীকরণের মূল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমে জাতিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গভিত্তিক বৈচিত্র্যকে সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে উৎসাহিত করা, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি “কমিউনিটি স্কুল” মডেলের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে স্কুলের কার্যকর সংযোগ স্থাপন, অভিভাবক ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে স্কুল পরিচালনায় যুক্ত করা, এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী-সমাজের মধ্যে সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে এই নীতিকে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যেতে পারে, যা ক্রমে একটি সংহত সমাজ নির্মাণে সহায়ক হবে।
সমাজের উচিত শিক্ষা দান পেশা এবং শিক্ষকদের এমন মর্যাদার চোখে দেখা, যেন এটি কেবল জীবিকা নির্বাহের একটি উপায় নয়, বরং একটি মহৎ ব্রত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় পেশায় পরিণত হয়। কারণ শিক্ষক শুধু পাঠদাতা নন, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তা, নীতি ও নৈতিকতা গঠনের কারিগর। একজন শিক্ষক যে মেধা, নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করেন, তার সামাজিক স্বীকৃতি যদি অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে আগ্রহ হারান, যা দীর্ঘমেয়াদে জাতির মানসিক কাঠামো দুর্বল করে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে সামাজিক বৈষম্য, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রকট, সেখানে শিক্ষকের ভূমিকা কেবল পাঠদান নয়, বরং সামাজিক সংহতি ও ন্যায়ের ধারক হিসেবে অপরিহার্য। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও প্রেরণা দিয়ে সমাজ যদি এই ব্রতকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে, তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই একটি প্রগতিশীল, সমতা ও সংহতিতে পরিপূর্ণ জাতি গঠন সম্ভব হবে—এবং এই লক্ষ্য অর্জনে এর কোনো বিকল্প নেই।