পল্লী বিদ্যুতের নিয়োগ : বহিস্কার ১২০

- আপডেট সময় : ০৮:২৩:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে মিটার রিডার কাম—ম্যাসেঞ্জার পদে চাকুরির জন্য এমসিকিউ পরীক্ষায় কৌশলে ডিভাইস ব্যবহার করে উত্তর লেখার সময় ১২০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল চারটায় সুনামগঞ্জ শহরের পাঁচটি নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চুক্তিভিত্তিতে ২৫ জন মিটার রিডার কাম—ম্যাসেঞ্জার নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল । শহরের পাঁচটি কেন্দ্রে ১৩শ’ আগ্রহী অংশ নেয় পরীক্ষায়। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ, সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
৬০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় সময় ছিল ৫০ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই হলে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা বুঝতে পারেন কোন কোন শিক্ষার্থী বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করে উত্তরপত্র পূরণ করছে। পরে ডিভাইসসহ হাতে নাতে ধরে পাঁচ কেন্দ্রে ১২০ জন নিয়োগ পরীক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়। সবচেয়ে বেশি বহিস্কার হয় এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রের ২৬৯ জন নিয়োগ পরীক্ষার্থীর ৫৬ জন বহিস্কার হয়।
সরেজমিনে এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেলো, ডিভাইসের একটি অংশ ব্যাংকের কার্ডের মতো, আরেকটি অংশ একেবারেই ছোট্ট কডলেস এয়ারফোনের মতো; যা কানের ভেতরে ঢুকাতে হয়। কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা অনেক নিয়োগ পরীক্ষার্থীর কানের ভেতর থেকে চিমটি জাতীয় যন্ত্র দিয়ে এই অংশ বের করে এনেছেন। অন্য অংশ সার্টের পেছন দিকে কলারে, কেউবা বেল্ট দিয়ে হাতের কনুইয়ের উপরে রাখে।
ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা নিয়োগ পরীক্ষার্থী পাবনার নাঈম হোসেন বলেন, ‘ডিভাইসে নিজেদের সিম ব্যবহার করতে হয়। পরীক্ষা শুরু হবার ১৫ মিনিট পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বলতে থাকে এভাবে— “এক নম্বরের ‘ক’, দুই নম্বরের ‘গ’ তিন নম্বরের ‘খ’।’’ দ্রুত বলে যায়, নিয়োগ পরীক্ষার্থী কেবল দাগ দেয়। এই পরীক্ষার্থী জানালো, এই ডিভাইস সিন্ডিকেটের সঙ্গে অনেকে আগে চুক্তি করেছে। কেউ কেউ পাঁচ ছয় লাখ টাকা চুক্তি করে এক দুই লাখ টাকা দিয়েও দিয়েছে।
কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল আটককৃত নিয়োগ পরক্ষার্থীদের পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে। কয়েকজন নিয়োগ পরীক্ষার্থী নিজেদের আটক হওয়া সিম নেবার জন্য এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্থাৎ কেন্দ্র সচিব ইনচান মিঞার কক্ষে ঢুকে কাকুতি মিনতি করছে। এসময় তিনি ওদের ধমকাতেও শুনা যায়।
ওখানে উপস্থিত ফরিদপুরের নিয়োগ পরীক্ষার্থী সামায়ুন আহমদ বলেন, সুনামগঞ্জ শহরে পরীক্ষা দিতে এসে বাসস্টেশনে নামার পরই একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, সে তাকে জানায়— ‘তুমি চাইলে এভাবে ডিভাইস নিতে পারো, এই ডিভাইস এমসিকিউয়ের উত্তরে কোনটা তুমি দাগাবে বলে দেবে। তাকে বলা হয়েছে এমসিকিউ পরীক্ষায় ফাঁস করার পর অন্যরা যেভাবে টাকা দেয়, তুমি সেভাবে দিতে হবে। আগে টাকা দেওয়া লাগবে না।’
পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় তালুকদার বললেন, প্রশ্ন পেয়েই কিছু পরীক্ষার্থী উত্তর দাগাতে শুরু করলে আমাদের সন্দেহ হয়। একজনকে সন্দেহ করে আটক করে ডিভাইস উদ্ধারের পর ১০—১৫ মিনিটের মধ্যেই আরও অনেক ডিভাইস পাওয়া যায়।’
এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রেমানন্দ বিশ্বাস বলেন, সুনামগঞ্জে কোন নিয়োগ পরীক্ষায় এই প্রথম ডিভাইস পাওয়া গেল। পরীক্ষার্থীদের কেউ—ই সুনামগঞ্জের নয়। এরা একটি বিশেষ চক্রের মাধ্যমে এই কাজ করেছে বলে জানা গেছে। ডিভাইস ব্যবহারকারী কতজন ছিল, বা সকলকে আটক করা গেছে কী—না, এটা নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি।
এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনচান মিঞা বলেন, বহিস্কৃত নিয়োগ পরীক্ষার্থীদের তারা আটক রেখে পল্লী বিদ্যুৎ কতৃর্পক্ষকে জানিয়েছিলাম।
পল্লী বিদ্যুতের জিএম মিলন কুমার কুন্ডু বললেন, ২৫ জন মিডার রিডার কাম—ম্যাসেঞ্জার নিয়োগের জন্য পাঁচ কেন্দ্রে ১৩শ’ জন অংশ নিয়েছিল। আগে থেকেই দায়িত্ব পালনকারী পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। সুনামগঞ্জের পাঁচটি কেন্দ্রে ১২০ জনকে বহিস্কার করা হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি আবুল কালাম জানান, পল্লী বিদ্যুৎ কতৃর্পক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বহিস্কৃত সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।