সুনামগঞ্জ ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ড. আ জ ম ওবায়েদ ভাই : ঘুমিয়ে আছেন মাটির মানুষ মাটির গহীন অন্তরে

ড. আহসান হাবীব ইমরোজ
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৫:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫ ৭০ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাত্র ৩৮ সেকেন্ড আলাপন। ওবায়েদ ভাই গত ৫ই মে রাত পৌনে ৯টায় আড়ষ্টকণ্ঠে জানালেন, গায়ে বেশ জ্বর উত্তরণের আজকের প্যারেন্টিং-উদ্বোধনীতে হয়তো থাকা সম্ভব হবে না। অবাক এক দায়িত্বশীল, কষ্টের চূড়ান্ত তবু আয়োজকদের অবহিত করতে ভুললেন না ।

৮ তারিখ নিজেই হেঁটে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি হলেন। ৯ তারিখ আইসিইউতে; ভাবি জানালেন অবস্থা ভালো নয়। আবার ১০ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্তও ভালোই ছিলেন। হঠাৎ রাত ১০টা হতে খারাপ । বাংলাদেশ যখন গভীর ঘুমে রাত ১২.৫০-এ তিনিও চলে গেলেন চির ঘুমেরদেশে। গত ৩৮ বছর আমার মাথার ওপর যে দিঘল-বটবৃক্ষ ছিলো নিমেষেই তা হারিয়ে গেলো।

আমি ১১ তারিখ সকালে ড. মনোয়ারের হোয়াটসঅ্যাপে চূড়ান্ত মেসেজটি দেখলাম, যেটি সে মধ্যরাতেই লিখেছে, শ্রদ্ধেয় ভাই আর নেই।

কোনভাবেই সকাল ১১টায় চট্রগামের জানাযা ধরা সম্ভব হলো না, এমনকি ফ্লাইট টিকেটও নেই ।

ইউসুফ ভাইসহ ছুটলাম লঞ্চের সন্ধানে, মাঝপথেই নাইম ভাই জানালেন শেষ লঞ্চটিও ছেড়ে গেছে। অতঃপর রাজারবাগ হতে গ্রীনলাইনে বরিশাল হয়ে ভোলা; শেষে চরফ্যাশনে পৌঁছলাম। প্রতিটা স্টপেজে মুহিবুল্লাহ ভাই, জামাল ভাই এবং সবার নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল ভাই সহযোগিতা ও আপ্যায়নের এন্তেজাম করে রেখেছেন।

রাত সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় ঈদগা মাঠে চরফ্যাশনের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জানাযা । রুচিশীল টিপটপ সোনার ভাইটিকে সবাই মিলে মাটির ঘরে শেষ বিছানায় শুইয়ে দিলেন।

ব্যবহারে তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। আজ ঘুমিয়ে আছেন মাটির মানুষটি মাটির গহীন অন্তরে।

কবি মতিউর রহমান মল্লিক-এর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ আবর্তিত তৃণলতা। এ গ্রন্থের প্রথম কবিতাটির নাম ‘মিনার’। এখানে কবি বলেন-
জীবনের মত
মৃত্যু কামনা করি।
বেঁচে রবো আমি ইতিহাস ভালবেসে।
অমরত্বের
মিনার কিছুটা গড়ি
কবিতার মত উদার তেপান্তরে।
… … … … … … … … …
আমিতো পালাবো উধাও ধূসর রাতে
বাঁচার দলিল বেঁচে রবে প্রাণে প্রাণে।

ড. ওবায়েদ ভাইয়ের সারাটি মাসের ডায়েরি ছিলো প্রোগ্রামে ঠাসা। কিন্তু এরই মাঝে কখনো ভুলে যাননি মুচকি হাসা কিংবা দেলখোলা ভালোবাসা।

তার প্রিয় কবি ছিলেন কবি মল্লিক। ওবায়েদ ভাই মল্লিকের কবিতার মতোই ধুসর রাতে চিরতরে পালিয়ে গেলেন। আজকে হয়তো মৃত্যু যবনিকার ওপারে নিবেন বিশ্রাম নিরবধি।

ওগো পরম প্রভূ দাও তাকে মাগফিরাত; দাও পরম প্রশান্তি। হয়তো তার বাচাঁর দলিল বেচেঁ রবে শত বছর লক্ষ প্রাণে প্রাণে।

আহসান হাবীব ইমরোজ ✍️

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ড. আ জ ম ওবায়েদ ভাই : ঘুমিয়ে আছেন মাটির মানুষ মাটির গহীন অন্তরে

আপডেট সময় : ০৫:৪৫:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

মাত্র ৩৮ সেকেন্ড আলাপন। ওবায়েদ ভাই গত ৫ই মে রাত পৌনে ৯টায় আড়ষ্টকণ্ঠে জানালেন, গায়ে বেশ জ্বর উত্তরণের আজকের প্যারেন্টিং-উদ্বোধনীতে হয়তো থাকা সম্ভব হবে না। অবাক এক দায়িত্বশীল, কষ্টের চূড়ান্ত তবু আয়োজকদের অবহিত করতে ভুললেন না ।

৮ তারিখ নিজেই হেঁটে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি হলেন। ৯ তারিখ আইসিইউতে; ভাবি জানালেন অবস্থা ভালো নয়। আবার ১০ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্তও ভালোই ছিলেন। হঠাৎ রাত ১০টা হতে খারাপ । বাংলাদেশ যখন গভীর ঘুমে রাত ১২.৫০-এ তিনিও চলে গেলেন চির ঘুমেরদেশে। গত ৩৮ বছর আমার মাথার ওপর যে দিঘল-বটবৃক্ষ ছিলো নিমেষেই তা হারিয়ে গেলো।

আমি ১১ তারিখ সকালে ড. মনোয়ারের হোয়াটসঅ্যাপে চূড়ান্ত মেসেজটি দেখলাম, যেটি সে মধ্যরাতেই লিখেছে, শ্রদ্ধেয় ভাই আর নেই।

কোনভাবেই সকাল ১১টায় চট্রগামের জানাযা ধরা সম্ভব হলো না, এমনকি ফ্লাইট টিকেটও নেই ।

ইউসুফ ভাইসহ ছুটলাম লঞ্চের সন্ধানে, মাঝপথেই নাইম ভাই জানালেন শেষ লঞ্চটিও ছেড়ে গেছে। অতঃপর রাজারবাগ হতে গ্রীনলাইনে বরিশাল হয়ে ভোলা; শেষে চরফ্যাশনে পৌঁছলাম। প্রতিটা স্টপেজে মুহিবুল্লাহ ভাই, জামাল ভাই এবং সবার নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল ভাই সহযোগিতা ও আপ্যায়নের এন্তেজাম করে রেখেছেন।

রাত সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হয় ঈদগা মাঠে চরফ্যাশনের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জানাযা । রুচিশীল টিপটপ সোনার ভাইটিকে সবাই মিলে মাটির ঘরে শেষ বিছানায় শুইয়ে দিলেন।

ব্যবহারে তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। আজ ঘুমিয়ে আছেন মাটির মানুষটি মাটির গহীন অন্তরে।

কবি মতিউর রহমান মল্লিক-এর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ আবর্তিত তৃণলতা। এ গ্রন্থের প্রথম কবিতাটির নাম ‘মিনার’। এখানে কবি বলেন-
জীবনের মত
মৃত্যু কামনা করি।
বেঁচে রবো আমি ইতিহাস ভালবেসে।
অমরত্বের
মিনার কিছুটা গড়ি
কবিতার মত উদার তেপান্তরে।
… … … … … … … … …
আমিতো পালাবো উধাও ধূসর রাতে
বাঁচার দলিল বেঁচে রবে প্রাণে প্রাণে।

ড. ওবায়েদ ভাইয়ের সারাটি মাসের ডায়েরি ছিলো প্রোগ্রামে ঠাসা। কিন্তু এরই মাঝে কখনো ভুলে যাননি মুচকি হাসা কিংবা দেলখোলা ভালোবাসা।

তার প্রিয় কবি ছিলেন কবি মল্লিক। ওবায়েদ ভাই মল্লিকের কবিতার মতোই ধুসর রাতে চিরতরে পালিয়ে গেলেন। আজকে হয়তো মৃত্যু যবনিকার ওপারে নিবেন বিশ্রাম নিরবধি।

ওগো পরম প্রভূ দাও তাকে মাগফিরাত; দাও পরম প্রশান্তি। হয়তো তার বাচাঁর দলিল বেচেঁ রবে শত বছর লক্ষ প্রাণে প্রাণে।

আহসান হাবীব ইমরোজ ✍️