তাহিরপুরে ইজারা ছাড়া চার বাজার ও ঘাটে খাস আদায়
ইউএনওর মৌখিক অনুমতিতে চলছে অর্থ উত্তোলন, নেই দরপত্র বা সরকারি আদেশ

- আপডেট সময় : ১১:২৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ১০৫ বার পড়া হয়েছে
তাহিরপুর উপজেলায় চলতি বাংলা সনে ইজারা না হওয়া চারটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও নৌঘাটে নিয়মবহির্ভূতভাবে খাস আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান কিংবা সরকারি আদেশ ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম স্থানীয় কয়েকজনকে মৌখিকভাবে এসব বাজার ও ঘাটের খাস আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার ডাম্পের বাজার নৌঘাট, শ্রীপুর বাজার নৌঘাট, পাতারগাঁও বাজার নৌঘাট ও বাদাঘাট বাজার মামলাজটের কারণে ইজারা হয়নি।
বছরের শুরুতে এসব বাজার ও ঘাট তদারকি করছিলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। তবে সম্প্রতি ইউএনও নিজেই ব্যক্তিগতভাবে কিছু লোককে দায়িত্ব দেন। এর মধ্যে একজনকে লিখিত অনুমতি দেওয়া হলেও, বাকি তিনটি স্থানে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় এমন শ্রীপুর বাজার নৌঘাট মৌখিকভাবে দেওয়া হয়েছে ভাটি তাহিরপুর গ্রামের গোলাম মওলাসহ পাঁচজনকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মওলা বলেন, “আমরা তহশিলদারের সঙ্গে আছি। ইউএনও সাহেব বলেছেন পাশে থাকতে।” কত টাকায় দায়িত্ব পেয়েছেন, তা তিনি জানাননি।
ডিহিবাটি ইউনিয়নের অধীন ডাম্পের বাজারেও একইভাবে কয়েকজন খাস আদায় করছেন। ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, “কারা আদায় করছেন, সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানেন।”
পাতারগাঁও এলাকায় ছোট্ট একটি নৌঘাট কালীপুর গ্রামের আবদুস সামাদকে লিখিতভাবে ১৪ মে খাস আদায়ের জন্য দেওয়া হয়েছে। তিনিও ঘাটটির টাকার অংক জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বাদাঘাট বাজার ও ঘাট সর্বশেষ ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছিল। এবার সেটি ইজারা না হওয়ায় বুধবার রাতে ইউএনও স্থানীয় পাঁচজনকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেন।
এদের সঙ্গে আরও ২০ জন যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আদায়কারীদের মধ্যে বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নজরুল শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদও রয়েছেন। হারুন বলেন, “বাজারের নেতারা ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে খাস আদায়ে যুক্ত হয়েছেন। তবে তহশিলদার সব দেখছেন।”
এ বিষয়ে ইউএনও আবুল হাসেম বলেন, “বাজারের ব্যবসায়ীরা আমার কাছে এসে আবেদন করেছিলেন। আমি তাঁদের প্রতি মাসে চার লাখ টাকা রাজস্ব জমা দেওয়ার শর্তে মৌখিক অনুমতি দিয়েছি। একইভাবে অন্য ঘাটগুলোর ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তবে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ইজারা না হওয়া বাজার ও ঘাট খাস আদায়ের দায়িত্ব প্রশাসনের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করার কথা, অথবা প্রকাশ্য দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা কনজ্যুমার রাইটস বাংলাদেশের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, “খাস আদায়ের পুরো প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কে কত দিল, সরকার কত পেল—তা কেউ জানে না। সব কিছুই হচ্ছে আড়ালে।”
ইউএনওর বক্তব্য, “সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর স্বার্থে কিছু লোককে দায়িত্ব দিয়েছি। আমার তো অত জনবল নেই। তবে আদায়ের তদারকি করছেন তহশিলদাররা।”
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে গোপনে এমন দায়িত্ব প্রদান প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত ও পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।