ঢাকা ১০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবি কাজী নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:১০:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / 124
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে বিদ্রোহী কবি নজরুল জন্মগ্রহণ করেন। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’ প্রতিপাদ্য গ্রহণ করে এবার জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।

দ্রোহ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাণীতে বলেন, তিনি এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন যখন গোটা উপমহাদেশ ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কবির বিদ্রোহী সত্তা অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে; ক্ষুরধার লেখনীতে ভাঙতে চায় অত্যাচারীর শৃঙ্খল।

ঔপনিবেশিক শাসকের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় কবি রাজদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দি হন। কবিতাকে বিদ্রোহ এবং প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ায় তিনি পরিচিতি লাভ করেন বিদ্রোহী কবি হিসেবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বছর জানুয়ারিতে কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন।

ড. ইউনূস বলেন, নজরুলের কবিতার মূল বিষয় ছিল মানবতার জয়গান এবং মানুষের ওপর অত্যাচার, সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তার অমর সৃষ্টি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে।

তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, গেয়েছেন নারী-পুরুষের সাম্যের বন্দনা। বাণী ও সুরের অমিয় ধারায় ঋদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে। কবি নজরুলের সংগ্রামী জীবন ও তার সৃষ্টি বাংলার মানুষের জন্য আজীবন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে এবং একটি অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং সমাধি প্রাঙ্গণে স্মরণ সভা। বাংলা বিভাগের উদ্যোগে স্মারক বক্তব্য ও সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নজরুলগীতি পরিবেশন করবেন।

নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, নজরুলবিষয়ক সেমিনার এবং গীতিনাট্য ‘দেখব এবার জগৎটাকে’ পরিবেশনা।

এ ছাড়া জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে, কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিক ও দার্শনিক। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও বেশির ভাগই সুরারোপ করেছেন- যেগুলো নজরুলসংগীত নামে পরিচিত।

তার ডাকনাম দুখু মিয়া। তিনি মাত্র ৯ বছর বয়সে ১৯০৮ সালে পিতৃহারা হন। এক সময় গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি সংগীত রচনা শুরু করেন। ১৯১৭ সালের শেষভাগ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কর্মজীবনের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক করপোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদারের পদে উন্নীত হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন।

১৯২১ সালের মাঝামাঝি কুমিল্লার প্রমীলা দেবীর সঙ্গে প্রণয় থেকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯২২ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সাড়া ফেলেন। একই বছর ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় ও একইদিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে নেওয়া হয় কলকাতায়।

১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে জবানবন্দি দেন। তার এ জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে।

কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যবয়সে পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন ও বাকশক্তি হারান। ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

কবি কাজী নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

আপডেট সময় : ০৮:১০:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে বিদ্রোহী কবি নজরুল জন্মগ্রহণ করেন। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’ প্রতিপাদ্য গ্রহণ করে এবার জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।

দ্রোহ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাণীতে বলেন, তিনি এমন এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন যখন গোটা উপমহাদেশ ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কবির বিদ্রোহী সত্তা অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে; ক্ষুরধার লেখনীতে ভাঙতে চায় অত্যাচারীর শৃঙ্খল।

ঔপনিবেশিক শাসকের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় কবি রাজদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দি হন। কবিতাকে বিদ্রোহ এবং প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ায় তিনি পরিচিতি লাভ করেন বিদ্রোহী কবি হিসেবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বছর জানুয়ারিতে কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন।

ড. ইউনূস বলেন, নজরুলের কবিতার মূল বিষয় ছিল মানবতার জয়গান এবং মানুষের ওপর অত্যাচার, সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তার অমর সৃষ্টি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে।

তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, গেয়েছেন নারী-পুরুষের সাম্যের বন্দনা। বাণী ও সুরের অমিয় ধারায় ঋদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে। কবি নজরুলের সংগ্রামী জীবন ও তার সৃষ্টি বাংলার মানুষের জন্য আজীবন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে এবং একটি অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং সমাধি প্রাঙ্গণে স্মরণ সভা। বাংলা বিভাগের উদ্যোগে স্মারক বক্তব্য ও সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নজরুলগীতি পরিবেশন করবেন।

নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, নজরুলবিষয়ক সেমিনার এবং গীতিনাট্য ‘দেখব এবার জগৎটাকে’ পরিবেশনা।

এ ছাড়া জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে, কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিক ও দার্শনিক। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও বেশির ভাগই সুরারোপ করেছেন- যেগুলো নজরুলসংগীত নামে পরিচিত।

তার ডাকনাম দুখু মিয়া। তিনি মাত্র ৯ বছর বয়সে ১৯০৮ সালে পিতৃহারা হন। এক সময় গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি সংগীত রচনা শুরু করেন। ১৯১৭ সালের শেষভাগ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কর্মজীবনের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক করপোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদারের পদে উন্নীত হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন।

১৯২১ সালের মাঝামাঝি কুমিল্লার প্রমীলা দেবীর সঙ্গে প্রণয় থেকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯২২ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সাড়া ফেলেন। একই বছর ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় ও একইদিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে নেওয়া হয় কলকাতায়।

১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে জবানবন্দি দেন। তার এ জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে।

কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যবয়সে পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন ও বাকশক্তি হারান। ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।