ঢাকা ১১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সুনামগঞ্জ ১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত এমপির পথসভা জনসভায় পরিণত বিশ্বম্ভরপুরে তাহিয়া একাডেমির আয়োজনে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়: মাঠে সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের মানববন্ধন হাওরাঞ্চলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আমূল পরিবর্তন  করা হবে-   তোফায়েল আহমদ খান তাহিরপুরে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এর প্রকল্প অবহিতকরণ সভা সম্পন্ন সুনামগঞ্জে নতুন সিম কেনার সময় অভিনব প্রতারণার ফাঁদ, সতর্ক থাকুন তাহিরপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন জামায়াত নির্বাচিত হলে ছাতক-দোয়ারায় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করব:: দোয়ারাবাজারে মাও. সালাম মাদানি পিআর ছাড়া নির্বাচন হলে দেশ চাঁদাবাজের আড্ডাখানা হবে : পীর সাহেব চরমোনাই

বিলুপ্তির পথে ভ্যাদা মাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • / 286
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভ্যাদা মাছ — যার আঞ্চলিক নাম ভেড়া, মেনি, মিনি, ন্যাদোশ বা রয়না — একসময় বাংলাদেশের হাওর-বাওর, খাল-বিল, পুকুর এমনকি ধান-খেতেও ছিল অবাধ বিচরণ। এখন এ মাছ আর আগের মতো চোখে পড়ে না,সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অথচ এই মাছ শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক উপায়ও হতে পারে।

ভ্যাদা মাছের বৈজ্ঞানিক পরিচয়
বৈজ্ঞানিক নাম: Nandus nandus
চেহারা ও বৈশিষ্ট্য: কালচে হলুদ রঙের, দেখতে অনেকটা কৈ মাছের মতো হলেও, পিঠে ১০-১৫টি কাঁটাযুক্ত পাখনা এবং শরীর অপেক্ষাকৃত চ্যাপ্টা ও অলস প্রকৃতির।

ভ্যাদা মাছের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম ভ্যাদা মাছে থাকে —
প্রোটিন: ১১ মিলিগ্রাম
ফ্যাট: ৫.৩ মিলিগ্রাম
লোহা (Iron): ০.৮ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম: ৩৯০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস: ২৯৮ মিলিগ্রাম
জলীয় অংশ: প্রায় ৭৬%

এই জলীয় উপাদান, ক্যালসিয়াম-ফসফরাস ও হালকা চর্বির অনুপাতের কারণে গরমে এই মাছের ঝোল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। পেট ঠান্ডা রাখতে এবং হজমশক্তি বজায় রাখতে ভ্যাদা মাছ উপকারী। অনেক অঞ্চলেই গরমে ক্লান্তি কমাতে এই মাছের টক ঝোল বা সরষে ভ্যাদা জনপ্রিয় খাবার।

ভ্যাদা মাছের উপকারিতা
1. গরমে ঠান্ডা অনুভূতি দেয়
2. হজমে সহায়ক
3. প্রোটিন ও খনিজে সমৃদ্ধ
4. চাপ ও ক্লান্তি কমায়
5. চর্মরোগ বা জ্বরের পর দুর্বলতা কাটাতে সহায়ক
6. বাচ্চা ও বৃদ্ধদের জন্য হালকা ও পুষ্টিকর খাবার

⚠ বিলুপ্তির কারণ
ভ্যাদা মাছ এখন আগের মতো সহজে পাওয়া যায় না। এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ:

১. কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার
বিশেষ করে ধানক্ষেতে ব্যবহৃত কীটনাশক সরাসরি এই মাছের ডিম ও বাচ্চা ধ্বংস করে দেয়।
২. জলাশয় ভরাট ও পরিবেশ বিপর্যয়:-
প্রাকৃতিক খাল-বিল ও পুকুর শুকিয়ে ফেলা, হাওর বাওড় দখল বা আবর্জনায় ভরে যাওয়া।
৩. অতিরিক্ত মাছ ধরা
পরিণত হওয়ার আগেই ছোট আকারে মাছ ধরা হওয়ায় প্রজনন চক্র ব্যাহত হয়।
৪. দূষণ ও জৈব বৈচিত্র্য হ্রাস
প্লাস্টিক – বর্জ্য ও মলমূত্র মিশে জলজ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, যা ভ্যাদা মাছের জন্য মারাত্মক।
৫. অবহেলা ও পরিচিতির অভাব

রক্ষা ও সংরক্ষণে করণীয়:-
প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ, কীটনাশকের বিকল্প ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ, ভ্যাদা মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রকল্প চালু,জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বাজারে চাহিদা তৈরি, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মসূচি চালানো।

ভ্যাদা মাছ শুধু একটি সুস্বাদু খাদ্য নয়, বরং এটি আমাদের খাদ্য-ঔষধি ঐতিহ্যের অংশ। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে যখন অনেকেই কৃত্রিম উপায়ে ভরসা রাখছেন, তখন সহজেই ভ্যাদা মাছ হতে পারে সস্তা ও প্রাকৃতিক সমাধান। তাই এর পুনরুজ্জীবন ও সংরক্ষণ আজ সময়ের দাবি।

#ভ্যাদা_মাছ #বাংলারঐতিহ্য #জীববৈচিত্র্য #

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

বিলুপ্তির পথে ভ্যাদা মাছ

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

ভ্যাদা মাছ — যার আঞ্চলিক নাম ভেড়া, মেনি, মিনি, ন্যাদোশ বা রয়না — একসময় বাংলাদেশের হাওর-বাওর, খাল-বিল, পুকুর এমনকি ধান-খেতেও ছিল অবাধ বিচরণ। এখন এ মাছ আর আগের মতো চোখে পড়ে না,সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অথচ এই মাছ শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক উপায়ও হতে পারে।

ভ্যাদা মাছের বৈজ্ঞানিক পরিচয়
বৈজ্ঞানিক নাম: Nandus nandus
চেহারা ও বৈশিষ্ট্য: কালচে হলুদ রঙের, দেখতে অনেকটা কৈ মাছের মতো হলেও, পিঠে ১০-১৫টি কাঁটাযুক্ত পাখনা এবং শরীর অপেক্ষাকৃত চ্যাপ্টা ও অলস প্রকৃতির।

ভ্যাদা মাছের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম ভ্যাদা মাছে থাকে —
প্রোটিন: ১১ মিলিগ্রাম
ফ্যাট: ৫.৩ মিলিগ্রাম
লোহা (Iron): ০.৮ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম: ৩৯০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস: ২৯৮ মিলিগ্রাম
জলীয় অংশ: প্রায় ৭৬%

এই জলীয় উপাদান, ক্যালসিয়াম-ফসফরাস ও হালকা চর্বির অনুপাতের কারণে গরমে এই মাছের ঝোল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। পেট ঠান্ডা রাখতে এবং হজমশক্তি বজায় রাখতে ভ্যাদা মাছ উপকারী। অনেক অঞ্চলেই গরমে ক্লান্তি কমাতে এই মাছের টক ঝোল বা সরষে ভ্যাদা জনপ্রিয় খাবার।

ভ্যাদা মাছের উপকারিতা
1. গরমে ঠান্ডা অনুভূতি দেয়
2. হজমে সহায়ক
3. প্রোটিন ও খনিজে সমৃদ্ধ
4. চাপ ও ক্লান্তি কমায়
5. চর্মরোগ বা জ্বরের পর দুর্বলতা কাটাতে সহায়ক
6. বাচ্চা ও বৃদ্ধদের জন্য হালকা ও পুষ্টিকর খাবার

⚠ বিলুপ্তির কারণ
ভ্যাদা মাছ এখন আগের মতো সহজে পাওয়া যায় না। এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ:

১. কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার
বিশেষ করে ধানক্ষেতে ব্যবহৃত কীটনাশক সরাসরি এই মাছের ডিম ও বাচ্চা ধ্বংস করে দেয়।
২. জলাশয় ভরাট ও পরিবেশ বিপর্যয়:-
প্রাকৃতিক খাল-বিল ও পুকুর শুকিয়ে ফেলা, হাওর বাওড় দখল বা আবর্জনায় ভরে যাওয়া।
৩. অতিরিক্ত মাছ ধরা
পরিণত হওয়ার আগেই ছোট আকারে মাছ ধরা হওয়ায় প্রজনন চক্র ব্যাহত হয়।
৪. দূষণ ও জৈব বৈচিত্র্য হ্রাস
প্লাস্টিক – বর্জ্য ও মলমূত্র মিশে জলজ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, যা ভ্যাদা মাছের জন্য মারাত্মক।
৫. অবহেলা ও পরিচিতির অভাব

রক্ষা ও সংরক্ষণে করণীয়:-
প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ, কীটনাশকের বিকল্প ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ, ভ্যাদা মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রকল্প চালু,জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বাজারে চাহিদা তৈরি, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মসূচি চালানো।

ভ্যাদা মাছ শুধু একটি সুস্বাদু খাদ্য নয়, বরং এটি আমাদের খাদ্য-ঔষধি ঐতিহ্যের অংশ। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে যখন অনেকেই কৃত্রিম উপায়ে ভরসা রাখছেন, তখন সহজেই ভ্যাদা মাছ হতে পারে সস্তা ও প্রাকৃতিক সমাধান। তাই এর পুনরুজ্জীবন ও সংরক্ষণ আজ সময়ের দাবি।

#ভ্যাদা_মাছ #বাংলারঐতিহ্য #জীববৈচিত্র্য #