সুনামগঞ্জের সাবেক এসডিও এ.জে.এম শামসুল আলম স্মরণে
“দেখেছি সোনার মানুষ, যে মানুষ আর পাব না” পর্ব-২

- আপডেট সময় : ০৩:৫০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
- / 2
এ.জেড.এম শামসুল আলম কি রকম মানুষ ছিলেন তা বর্ণনা করা আমার এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। যিনি তাকে দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখেছেন লেখার সামর্থপূর্ণ কেবল সেরকম লোকের লোকের পক্ষেই এ রকম বহুমুখী প্রতিভার বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্র বিশ্লেষণ করা সম্ভব। আর পারবেন যিনি গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁর জীবনকে অনুসন্ধান করবেন তিনি। আমি তাঁর কিছু খন্ডচিত্র উত্থাপন করেছি যা বিচ্ছিন্নভাবে আমার জানার সুযোগ হয়েছিল।
নি¤েœাক্ত ঘটনাগুলো তাঁর কর্মস্থল আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের। সবাই জানেন তিনি এ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এ ব্যাংকে স্যারের সাথে কাজ করেছিলেন আমার ভাই মাহমুদুর রহমান। এ সময় স্যার ছিলেন ব্যাংকটির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আর মাহমুদ ছিলেন পরিচালনা বোর্ডের সচিব! স্যারের অফিস সময়ের কোন শেষ সীমা ছিলনা। ফলে মাহমুদকেও দীর্ঘসময় অফিসে থাকতে হতো। তবে, স্যার মাহমুদের প্রতি খুবই সহানুভুতিশীল ছিলেন।
এ সময়ে শামসূল আলম স্যার ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে লিখিত কিছু অনুশাসন জারি করতেন। এগুলো উপদেশ আকারে ব্যাংকের এমডির মাধ্যমে সবার টেবিলে পৌঁছে যেত। সাধারণতঃ অফিস সময়ের পরে এগুলো সম্পাদনা করা ছিল সচিবের অন্যতম একটি কাজ। ব্যাংকের শুরু থেকে (১৯৯৫) মাহমুদের কর্মকাল পর্যন্ত এসব উপদেশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ব্যাংকের কর্মকর্তারা স্যারকে খুশি করার জন্য এগুলোর কিছু মেনে চলতেন। অধিকাংশই তেমন গুরুত্বের সাথে নিতেন না। নতুনদের কেউ কেউ আবার এসব নিয়ে কিছু মজাও করতেন। যেমন স্যার হয়তো একদিন উপদেশ দিলেন ‘পাগড়ি পড়া’ উত্তম। পরের দিন কয়েকজন অফিসার পাগড়ি পরে স্যারের সামনে ঘুরাফেরা করে গেলেন। আরেক দিন তিনি লিখলেন, ‘মস্তক মুন্ডন করা’ খুবই সওয়াবের কাজ। পরদিন বেশ কয়েকজন অফিসার অফিসে মস্তক মুন্ডন করে ব্যাংকে আসলেন। এগুলো ভান, তামাসা কিংবা আন্তরিক কিনা এ নিয়ে স্যার কখনো মাথা ঘামাতেন না।
মাহমুদ এতে মনে কষ্ট পেতেন। একদিন অফিসের পরে মাহমুদ স্যারকে জানালেন, তিনি যেসব উপদেশ দিচ্ছেন সেগুলো কেউ মানছেন না। বরং এগুলো নিয়ে অফিসের অনেকেই হাসি-তামাসা করছেন। স্যার অবাক হয়ে বললেন, কই আমি তো দেখলাম সবাই সবকিছু খুশিমনে নিচ্ছেন এবং মেনেও চলছেন। অতপরঃ স্যারকে কিছু উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বুঝাতে সক্ষম হলে তিনি সেদিন থেকে সে অনুশাসনের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। মাহমুদ ব্যাংক পরিচালনা সংক্রান্ত কোন সমস্যা এবং তার সমাধানের প্রস্তাব সরাসরি ব্যাংক ম্যানেজার কাছ থেকে সংগ্রহ করে খোলামেলা আলোচনার কথা বললে স্যার জানতে চান সে কোথা থেকে এ ধারণা পেয়েছে। মাহমুদ তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করলে স্যার সেটি আল আরাফা ব্যাংকে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বিশ^স্ত সূত্রে জানা যায় এ.জেড.এম শামসুল আলম তাঁর ব্যক্তিগত সকল সম্পত্তি জনহিতকর কাজের জন্য “আবু জর গিফারি” ট্রাস্টে দান করে গেছেন। নিজ সম্পতির কোন অংশ পরিবারের কাউকে না দেয়ায় পরিবারের সদস্যগণ তাঁর উপর সন্তষ্ট ছিলেন না। জীবনের শেষ কয়েক বছর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালের বিছানায় কাটিয়ে সর্বশেষ ল্যাব এইড হাসপাতালে তিনি গত ২৬.০৬.২৫ তারিখ ভোর রাতে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহে … রাজিউন)। হাসপাতালের চিকিৎসার ব্যয় আবু জর গিফারি ট্রাস্ট থেকে বহন করা হয়েছে বলে জানা যায়।