তাহিরপুরে খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

- আপডেট সময় : ০৩:২২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
- / 77
তাহিরপুরে দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ চালের ডিলার নিয়োগকে ঘিরে চলছে ভয়াবহ অনিয়ম ও আর্থিক বাণিজ্য। লটারি নয়, বরং দরকষাকষি আর গোপন চুক্তির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিতরণ করা হয়েছে নিয়োগপত্র এমন গুরুতর অভিযোগ করেছেন বাদ পড়া আবেদনকারী ও সচেতন এলাকাবাসী।
সরকারি ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ এবং ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) এর আওতায় তাহিরপুর উপজেলার ১৪টি পয়েন্টে ডিলার নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে চরম বিতর্ক ও ক্ষোভ। অভিযোগ উঠেছে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং লটারির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে গোপনে চলেছে টাকা লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাবের খেলা।
গেল বছরের পাঁচ নভেম্বর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ সায়েদুল ইসলাম। বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলার ১৪ পয়েন্টে ৭৮ জন ডিলার নিয়োগের জন্য আবেদন আহবান করা হয়।
তাহিরপুর সদর,উত্তর বড়দল, বাদাঘাট, ও উত্তর শ্রীপুরসহ বিভিন্ন বাজার এলাকার আবেদনকারীরা অভিযোগ করেছেন, কোন সাক্ষাৎকার বা যাচাই-বাছাই ছাড়াই রাতারাতি নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে।
শ্রীপুর বাজারের আবেদনকারী লাবনী ট্রেডার্স এর মালিক তামিম আহমদ জানান, “লটারির দিনক্ষণ কিছুই জানানো হয়নি। আমাদের অন্ধকারে রেখে পছন্দের লোকদেরই ডিলার বানানো হয়েছে।
একইভাবে তাহিরপুরে বাজারের ব্যাবসায়ী আব্দুল আলিম ইমতিয়াজ বলেন, “সব নিয়ম মেনেও বাদ পড়েছি এটা দুর্নীতির জলজ্যান্ত প্রমাণ। আমাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি।
বাদাঘাট বাজার পয়েন্টে ডিলার হতে চাওয়া আল আমিন বলেন, “আমি আবেদন করেছিলাম, কিন্তু কোনো ধরনের তথ্য না দিয়ে চুপিচুপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
একই অভিযোগ করে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা বাজারের আবেদনকারী মো. নজির হোসেন বলেন, টাকা খরচ করে দৌড়াদৌড়ি করে অনেক দিন আগে আবেদন করেছি। এখন শুনি ডিলার নিয়োগ হয়ে গেছে। আমাদেরকে জানানোই হয় নি।
ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এনে জেলা বিএনপির সাবেক সহ—তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ভাষ্কর রায় ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা জানি যে, একজন ডিলার নিয়োগ দিতে গেলে সরকারিভাবে দরখাস্ত নিয়ে লটারি অথবা উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নিয়োগ দিতে হয়, অথচ তাহিরপুর উপজেলার ডিলার হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে দরখাস্ত নিলেও, নিয়োগের সময় কাউকে অবগত না করে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম গোপনে ডিলার নিয়োগ দেন। পরস্পর শুনতে পাচ্ছি যে, বড় অংকের টাকার বিনিময়ে নাকি এমন নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুমোদন করেছেন।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক সায়েদুল ইসলাম দাবি করেছেন, “সব প্রক্রিয়া নিয়ম মেনেই হচ্ছে, তালিকা যাচাই শেষে প্রকাশ করা হবে।
একাধিক আবেদনকারীর বলছেন, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে এমন অনিয়ম সরাসরি দরিদ্র শ্রেণির খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। তাঁরা বলেন, “ওএমএস নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা না গেলে সরকারের কল্যাণমূলক উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
বাদ পড়া আবেদনকারীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিতর্কিত ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ লটারির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি।