ঢাকা ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ছাতকে ইউএনও ওসি’র সাথে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ জগন্নাথপুর উপজেলা উন্নয়ন সংস্থা ইউকে’র উদ্যোগে সেলাই মেশিন বিতরণ উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন -সভাপতি তারা মিয়া, সম্পাদক ফজলুল হক ধর্মপাশায় কনে দেখতে গিয়ে নৌকাডুবি, উকিল ও শিশু কন্যার লাশ উদ্ধার দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে দেশ পিছিয়ে আছে — এডভোকেট মুহাম্মদ শামস উদ্দিন সিলেটের পাথর কুয়ারী লুটপাটে জামায়াত জড়িত নয়: প্রমাণের চ্যালেঞ্জ নেতৃবৃন্দের ছাতকে বিদেশি রিভলভার উদ্ধার সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন মো. সারোয়ার আলম তাহিরপুরে ডা. মির্জা রিয়াদ হাসানের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় : ১১:০১:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 84
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জেলার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতাল। অথচ এই হাসপাতালেই চরম অব্যবস্থাপনা ও নজরদারিহীনতার কারণে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ঘটনা শুধু সরকারি অর্থের অপচয় নয়, বরং হাজারো রোগীর প্রাপ্য চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হওয়ার নির্মম বাস্তবতাও উন্মোচন করেছে।

প্রতিদিন বহির্বিভাগে এক থেকে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন, আর হাসপাতালে ভর্তি থাকেন ৩০০-৫০০ রোগী। কিন্তু অধিকাংশ রোগীকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
বড়পাড়ার হোসনে খা জানান, “হাড় ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, তিনশ’ টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনতে হয়েছে।

নীলপুরের সাফতেরা বেগম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থেকেও ১২০০ টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

আবু হুরায়রা নামের আরেক রোগী অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন না দিয়ে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে বাইরে থেকে।

সম্প্রতি সাংবাদিক ও তদন্ত টিম স্টোর রুমে ঢুকে দেখতে পান, কার্টুন কার্টুন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ স্তূপ হয়ে আছে। কোনটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ মাস আগে, কোনটি ২০২৩ সালের আগস্টে। পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় আরও বিপুল পরিমাণ ওষুধ মজুত পাওয়া যায়, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে থেকে শুরু করে মাত্র দুদিন আগেও।

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে—
Tab. Cefuroxime 250mg (৫০,৭৫০ পিস)
Tab. Bisoprolol 5mg (২২,৩২০ পিস)
Tab. Montelukas 10mg (৬,০০০ পিস)
Tab. Montelukas 4mg (১,০০,০০০ পিস)
Tab. Atorvastatin 10mg (৩,৬৭,০০০ পিস)
Tab. Naproxen 500mg (২,৫২,৪০০ পিস)
Tab. Lopiral Plus 75mg (৮,৯১,০০০ পিস)
Inj. Ceftriaxone 250mg (২২,০০০ পিস)
ওষুধগুলোর বাজারমূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

জানা যায় স্টোর কিপারের দায়িত্বে রয়েছেন রাজন দে, যিনি মূলত একজন অ্যানেসথেসিয়া টেকনিশিয়ান। তার পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন আরও সাতজন সিনিয়র স্টাফ নার্স সোহেল আহমেদ, আতিক আহমদ, মুবিন আনসারী, মেডিকেল টেকনিশিয়ান সাদেক আহমদ, রুম্মান মিয়া ও পিযুষ দেবনাথ।

অন্যদিকে, নবনিযুক্ত স্টোর কিপার রুপম কুমার দাস মার্চ ২০২৫-এ যোগ দিলেও এখনও তার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

হাসপাতালে গিয়ে ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে প্রথমে সাংবাদিকদের নানা অজুহাতে ফেরানোর চেষ্টা করেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম। পরে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দের নির্দেশে স্টোর খোলা হলে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের সত্যতা প্রকাশ্যে আসে।
ডা. বিষ্ণু প্রসাদ বলেন, এটি অস্বাভাবিক ঘটনা। ওষুধগুলোর কোনও ডকুমেন্ট নেই, তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশ ছাড়া রোগীদের দেওয়া হয়নি।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুমন বণিক জানান, একটি ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
সদ্য বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসে যোগদানের সময় এসব ওষুধের হস্তান্তর হয়নি। আমি ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই বদলি হয়ে যাই।
আরও আগে দায়িত্বে থাকা বর্তমান সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনও মন্তব্য দেননি।

দুদক সম্প্রতি জানায়, রোগীদের বিনামূল্যের ওষুধ বাইরে পাচার হয় এমন তথ্য তাদের অনুসন্ধানে মিলেছে। সেই ওষুধ রোগীদের না দেওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বলেই দাবি রোগী ও সাধারণ মানুষের।

সুনামগঞ্জ শহরের ফার্মেসি মালিক মুজাহিদুল ইসলাম মজনু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতো রোগী আসার পরও কোটি টাকার ওষুধ কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হলো? দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই ঘটনা নিয়ে  সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক সমলোচনা,মনিরুল ইসলাম নামে একজন লিখেন হাজার হাজার গরীব মানুষের ঔষধ গুলো যারা নষ্ট করছে তাদের কি শাস্তি হবে?

ফাহিম নামের আইডি থেকে একজন লিখেন, হাওরাঞ্চলের মানুষ ভালো সেবা পাওয়ার আশায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসে কিন্তু এখানে নাপা আর গ্যাসের টেবলেট ছাড়া দামী ঔষধ কিছুই পাওয়া যায় না।

এছাড়াও নিন্দা জানিয়ে, সুনামগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী ও সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট শামসউদ্দিন বলেন,সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য কিন্তু কতিপয় দূর্নীতিবাজরা নিজেদের স্বার্থে চিকিৎসা জিম্মি করে রেখেছে। এদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার।

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে  সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর তোফায়েল আহমদ খান বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ঔষধ নষ্ট করার ঘটনায় আমি হতবাক, বাকরুদ্ধ। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যেখানে অসহায় মানুষ ঔষধ পায়না, সেখানে এতো বড়ো দূর্নীতি।

দেশের অধিকাংশ মানুষকে ঋণ করে চিকিৎসায় যেতে হয়। সেই টাকায় ঔষধ কিনতে হয়। ঔষধ কিনতে গিয়ে দাম শুনে মানুষগুলো আরও অসুস্থ হয়ে যায়। আর ডা*কাতগুলো সেই ঔষধ বাহিরে বিক্রি করে।

আড়াই কোটি টাকার ঔষধ বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট করেছে, চিন্তা করা যায়। বিশ্বাস যোগ্য শক্তিশালী তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি করছি।

আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাটি শুধু অব্যবস্থাপনা নয়, বরং দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার নগ্ন প্রমাণ। যে হাসপাতালে হাজারো মানুষ জীবন বাঁচানোর আশায় ভিড় করেন, সেই হাসপাতালেই বিনামূল্যের ওষুধ মজুত রেখে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকৃত দায়ীরা চিহ্নিত হয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এমন প্রত্যাশা সুনামগঞ্জবাসীর।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ

আপডেট সময় : ১১:০১:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জেলার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতাল। অথচ এই হাসপাতালেই চরম অব্যবস্থাপনা ও নজরদারিহীনতার কারণে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ঘটনা শুধু সরকারি অর্থের অপচয় নয়, বরং হাজারো রোগীর প্রাপ্য চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হওয়ার নির্মম বাস্তবতাও উন্মোচন করেছে।

প্রতিদিন বহির্বিভাগে এক থেকে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন, আর হাসপাতালে ভর্তি থাকেন ৩০০-৫০০ রোগী। কিন্তু অধিকাংশ রোগীকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
বড়পাড়ার হোসনে খা জানান, “হাড় ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, তিনশ’ টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনতে হয়েছে।

নীলপুরের সাফতেরা বেগম বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থেকেও ১২০০ টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

আবু হুরায়রা নামের আরেক রোগী অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন না দিয়ে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে বাইরে থেকে।

সম্প্রতি সাংবাদিক ও তদন্ত টিম স্টোর রুমে ঢুকে দেখতে পান, কার্টুন কার্টুন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ স্তূপ হয়ে আছে। কোনটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৬ মাস আগে, কোনটি ২০২৩ সালের আগস্টে। পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় আরও বিপুল পরিমাণ ওষুধ মজুত পাওয়া যায়, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে থেকে শুরু করে মাত্র দুদিন আগেও।

মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে—
Tab. Cefuroxime 250mg (৫০,৭৫০ পিস)
Tab. Bisoprolol 5mg (২২,৩২০ পিস)
Tab. Montelukas 10mg (৬,০০০ পিস)
Tab. Montelukas 4mg (১,০০,০০০ পিস)
Tab. Atorvastatin 10mg (৩,৬৭,০০০ পিস)
Tab. Naproxen 500mg (২,৫২,৪০০ পিস)
Tab. Lopiral Plus 75mg (৮,৯১,০০০ পিস)
Inj. Ceftriaxone 250mg (২২,০০০ পিস)
ওষুধগুলোর বাজারমূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

জানা যায় স্টোর কিপারের দায়িত্বে রয়েছেন রাজন দে, যিনি মূলত একজন অ্যানেসথেসিয়া টেকনিশিয়ান। তার পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন আরও সাতজন সিনিয়র স্টাফ নার্স সোহেল আহমেদ, আতিক আহমদ, মুবিন আনসারী, মেডিকেল টেকনিশিয়ান সাদেক আহমদ, রুম্মান মিয়া ও পিযুষ দেবনাথ।

অন্যদিকে, নবনিযুক্ত স্টোর কিপার রুপম কুমার দাস মার্চ ২০২৫-এ যোগ দিলেও এখনও তার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

হাসপাতালে গিয়ে ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে প্রথমে সাংবাদিকদের নানা অজুহাতে ফেরানোর চেষ্টা করেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম। পরে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দের নির্দেশে স্টোর খোলা হলে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের সত্যতা প্রকাশ্যে আসে।
ডা. বিষ্ণু প্রসাদ বলেন, এটি অস্বাভাবিক ঘটনা। ওষুধগুলোর কোনও ডকুমেন্ট নেই, তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশ ছাড়া রোগীদের দেওয়া হয়নি।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুমন বণিক জানান, একটি ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
সদ্য বিদায়ী তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসে যোগদানের সময় এসব ওষুধের হস্তান্তর হয়নি। আমি ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই বদলি হয়ে যাই।
আরও আগে দায়িত্বে থাকা বর্তমান সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনও মন্তব্য দেননি।

দুদক সম্প্রতি জানায়, রোগীদের বিনামূল্যের ওষুধ বাইরে পাচার হয় এমন তথ্য তাদের অনুসন্ধানে মিলেছে। সেই ওষুধ রোগীদের না দেওয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বলেই দাবি রোগী ও সাধারণ মানুষের।

সুনামগঞ্জ শহরের ফার্মেসি মালিক মুজাহিদুল ইসলাম মজনু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতো রোগী আসার পরও কোটি টাকার ওষুধ কীভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হলো? দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই ঘটনা নিয়ে  সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক সমলোচনা,মনিরুল ইসলাম নামে একজন লিখেন হাজার হাজার গরীব মানুষের ঔষধ গুলো যারা নষ্ট করছে তাদের কি শাস্তি হবে?

ফাহিম নামের আইডি থেকে একজন লিখেন, হাওরাঞ্চলের মানুষ ভালো সেবা পাওয়ার আশায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসে কিন্তু এখানে নাপা আর গ্যাসের টেবলেট ছাড়া দামী ঔষধ কিছুই পাওয়া যায় না।

এছাড়াও নিন্দা জানিয়ে, সুনামগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী ও সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট শামসউদ্দিন বলেন,সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য কিন্তু কতিপয় দূর্নীতিবাজরা নিজেদের স্বার্থে চিকিৎসা জিম্মি করে রেখেছে। এদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার।

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে  সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর তোফায়েল আহমদ খান বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ঔষধ নষ্ট করার ঘটনায় আমি হতবাক, বাকরুদ্ধ। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যেখানে অসহায় মানুষ ঔষধ পায়না, সেখানে এতো বড়ো দূর্নীতি।

দেশের অধিকাংশ মানুষকে ঋণ করে চিকিৎসায় যেতে হয়। সেই টাকায় ঔষধ কিনতে হয়। ঔষধ কিনতে গিয়ে দাম শুনে মানুষগুলো আরও অসুস্থ হয়ে যায়। আর ডা*কাতগুলো সেই ঔষধ বাহিরে বিক্রি করে।

আড়াই কোটি টাকার ঔষধ বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট করেছে, চিন্তা করা যায়। বিশ্বাস যোগ্য শক্তিশালী তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবি করছি।

আড়াই কোটি টাকার ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাটি শুধু অব্যবস্থাপনা নয়, বরং দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার নগ্ন প্রমাণ। যে হাসপাতালে হাজারো মানুষ জীবন বাঁচানোর আশায় ভিড় করেন, সেই হাসপাতালেই বিনামূল্যের ওষুধ মজুত রেখে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকৃত দায়ীরা চিহ্নিত হয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এমন প্রত্যাশা সুনামগঞ্জবাসীর।