ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্ষমা করে দিস ভাই আমার-পীর মিসবাহ এমপি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:১৭:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 308
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাসায় আসলে বাড়ীতে স্বজনদের নিয়ে চলত বিরামহীন আড্ডা। দুজন বের হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে গল্প আড্ডায় মেতে থাকতাম। মনি ভাবী -দীনাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন রান্নার আয়োজনে। মতি ভাই বাজার থেকে তোমার পছন্দের মাছ নিয়ে আসতেন প্রচুর। বাড়ীতে যেন উৎসবের আয়োজন।

গভীর রাতে বাইরে থেকে দুজন এসে টেবিলে খেতে বসতাম। দীর্ঘ আড্ডার পরেও আমাদের যেন কথা থেকে যেত। রুমে বসে দুজনের কত গল্প। সবাই তখন ঘুমে। চা এর নেশা পেয়ে বসত। নিরবে গিয়ে দুজনের জন্য চা বানিয়ে এনে কখনো রুমে কখনো বারান্দায়। বারান্দায় থাকা বাবার ইজি চেয়ার আর দোলনা বড় প্রিয় ছিল তোমার। গভীর রাতে বারান্দায় সময় খুব উপভোগ করতাম। কতদিন ভোর হয়ে গেছে হিসাব নেই তার।

তোমার মুত্যুতে ভেতরে ভেতরে প্রাণহীন হয়ে গেছে আমাদের জন্মের ঘর। শূণ্য লাগে।

শরীরে যখন প্রথম অসুখ ধরা পরে যা থেকে সুস্থ হয়ে গিয়েছিলে তার আগে হঠাৎ বাড়ী আসলে।কয়েকদিন বাসা এবং শহরে তুমুল আড্ডা দিলে। যে শহরকে জল-জোছনার শহর, প্রেমের শহর, কবিতার শহর হিসাবে পরিচিত করেছিলে।

বাসায় জানালে ভোর রাতে ঢাকায় রওয়ানা হবে।সবাই সেই রাতকে উৎসবে পরিনত করলো। রান্নার আয়োজন হলো। বিস্ময় – রোদশী ক্যারম বোর্ড সাজিয়ে নিলো।তোমাকেও বোর্ডে নিয়ে আসলো। ভোর রাতে গরম পানির ফ্লাস্কে চা ভরে গাড়িতে দেয়া হলো। বিস্ময়- রোদশী ও তোমাকে বিদায় দিয়ে ঘুমাতে গেল।

তোমার মৃত্যুর পর আমি ঢাকায় আসার আগের রাতে ঘুমানোর সময় বিস্ময় বলে,ছোট চাচ্চুকে ঢাকায় গিয়ে পেয়ে যাবে বাবা। বিস্ময় ছিল তোমার এক ভালবাসার আনন্দ।

আমিও বাচ্চা মানুষের কথায় ভাবি আহারে! যদি সত্যি তোমাকে ঢাকায় এসে পেয়ে যেতাম!

বাবা -মা, আট ভাই বোনের মধ্যে বাবা – মা, চার ভাইবোন আগেই চলে গিয়েছিলেন। তুমি বাঁচতে ছেয়েছিলে। অসুখের বিরুদ্ধে কষ্টকর চিকিৎসা সহ্য করেছিলে। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে হাসপাতালের বেডে দুহাত উপরে তুলে বলেছিলে, আমার কষ্ট হচ্ছে মিসবাহ। আমার বুকেও তখন ভীষন কষ্ট হচ্ছিল।

অসহায় আমি ডাক্তারদের জড়ো করেছিলাম।মাথায়, পীঠে, পায়ে হাত বুলিয়ে কষ্ট দুর করার চেষ্টা করেছিলাম। ব্যর্থ চেষ্টা।

চা এর খুব নেশা ছিল। হঠাৎ বললে দীনাকে বল আদা দিয়ে চা বানিয়ে পাঠাতে।ফ্লাস্ক ভর্তি চা আনালাম।হলোনা। চা টেবিলে থেকে গেলো। আমার তখন কান্না পাচ্ছিল।

কষ্ট কমানোর চেষ্টায়, সুস্থ হবার আশায় বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলাম অন্তরকে নিয়ে। সব যখন তৈরি তখন দেরী হয়ে গেছে। তোমার শরীর আর যাবার মত অবস্থায় নেই।

কেন আগে এটি করলামনা! এই আক্ষেপ সারজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। ক্ষমা করে দিস ভাই আমার। সারাজীবন অসাধারণ ভালোবাসায় শুধু আমাকে দিয়েই গেলি।

তোমার মৃত্যুতে আমাদের বাড়ীর সবুজ প্রাণহীন। বাগান বিলাসের যে গাছটি অদ্ভুত লাল রঙ ছড়িয়ে দিত এবার সেটি রঙ ছড়ায়নি।

অনন্তকালের যাত্রায় কেমন আছিস জানিনা। কবরে শুইয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত শান্ত মুখটি পশ্চিম দিকে রেখে চলে এসেছিলাম। সেই রেখে আসাও কয়েকদিন হয়ে গেল।

পরম দয়ালু ক্ষমাশীল আল্লাহ আমার ভাইকে দয়ার চাঁদরে ঢেকে রাখুন।

—-

অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি

বিরোধী দলীয় হুইপ ও

মাননীয় সংসদ সদস্য, সুনামগঞ্জ-৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

ক্ষমা করে দিস ভাই আমার-পীর মিসবাহ এমপি

আপডেট সময় : ০৩:১৭:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বাসায় আসলে বাড়ীতে স্বজনদের নিয়ে চলত বিরামহীন আড্ডা। দুজন বের হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে গল্প আড্ডায় মেতে থাকতাম। মনি ভাবী -দীনাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন রান্নার আয়োজনে। মতি ভাই বাজার থেকে তোমার পছন্দের মাছ নিয়ে আসতেন প্রচুর। বাড়ীতে যেন উৎসবের আয়োজন।

গভীর রাতে বাইরে থেকে দুজন এসে টেবিলে খেতে বসতাম। দীর্ঘ আড্ডার পরেও আমাদের যেন কথা থেকে যেত। রুমে বসে দুজনের কত গল্প। সবাই তখন ঘুমে। চা এর নেশা পেয়ে বসত। নিরবে গিয়ে দুজনের জন্য চা বানিয়ে এনে কখনো রুমে কখনো বারান্দায়। বারান্দায় থাকা বাবার ইজি চেয়ার আর দোলনা বড় প্রিয় ছিল তোমার। গভীর রাতে বারান্দায় সময় খুব উপভোগ করতাম। কতদিন ভোর হয়ে গেছে হিসাব নেই তার।

তোমার মুত্যুতে ভেতরে ভেতরে প্রাণহীন হয়ে গেছে আমাদের জন্মের ঘর। শূণ্য লাগে।

শরীরে যখন প্রথম অসুখ ধরা পরে যা থেকে সুস্থ হয়ে গিয়েছিলে তার আগে হঠাৎ বাড়ী আসলে।কয়েকদিন বাসা এবং শহরে তুমুল আড্ডা দিলে। যে শহরকে জল-জোছনার শহর, প্রেমের শহর, কবিতার শহর হিসাবে পরিচিত করেছিলে।

বাসায় জানালে ভোর রাতে ঢাকায় রওয়ানা হবে।সবাই সেই রাতকে উৎসবে পরিনত করলো। রান্নার আয়োজন হলো। বিস্ময় – রোদশী ক্যারম বোর্ড সাজিয়ে নিলো।তোমাকেও বোর্ডে নিয়ে আসলো। ভোর রাতে গরম পানির ফ্লাস্কে চা ভরে গাড়িতে দেয়া হলো। বিস্ময়- রোদশী ও তোমাকে বিদায় দিয়ে ঘুমাতে গেল।

তোমার মৃত্যুর পর আমি ঢাকায় আসার আগের রাতে ঘুমানোর সময় বিস্ময় বলে,ছোট চাচ্চুকে ঢাকায় গিয়ে পেয়ে যাবে বাবা। বিস্ময় ছিল তোমার এক ভালবাসার আনন্দ।

আমিও বাচ্চা মানুষের কথায় ভাবি আহারে! যদি সত্যি তোমাকে ঢাকায় এসে পেয়ে যেতাম!

বাবা -মা, আট ভাই বোনের মধ্যে বাবা – মা, চার ভাইবোন আগেই চলে গিয়েছিলেন। তুমি বাঁচতে ছেয়েছিলে। অসুখের বিরুদ্ধে কষ্টকর চিকিৎসা সহ্য করেছিলে। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে হাসপাতালের বেডে দুহাত উপরে তুলে বলেছিলে, আমার কষ্ট হচ্ছে মিসবাহ। আমার বুকেও তখন ভীষন কষ্ট হচ্ছিল।

অসহায় আমি ডাক্তারদের জড়ো করেছিলাম।মাথায়, পীঠে, পায়ে হাত বুলিয়ে কষ্ট দুর করার চেষ্টা করেছিলাম। ব্যর্থ চেষ্টা।

চা এর খুব নেশা ছিল। হঠাৎ বললে দীনাকে বল আদা দিয়ে চা বানিয়ে পাঠাতে।ফ্লাস্ক ভর্তি চা আনালাম।হলোনা। চা টেবিলে থেকে গেলো। আমার তখন কান্না পাচ্ছিল।

কষ্ট কমানোর চেষ্টায়, সুস্থ হবার আশায় বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলাম অন্তরকে নিয়ে। সব যখন তৈরি তখন দেরী হয়ে গেছে। তোমার শরীর আর যাবার মত অবস্থায় নেই।

কেন আগে এটি করলামনা! এই আক্ষেপ সারজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। ক্ষমা করে দিস ভাই আমার। সারাজীবন অসাধারণ ভালোবাসায় শুধু আমাকে দিয়েই গেলি।

তোমার মৃত্যুতে আমাদের বাড়ীর সবুজ প্রাণহীন। বাগান বিলাসের যে গাছটি অদ্ভুত লাল রঙ ছড়িয়ে দিত এবার সেটি রঙ ছড়ায়নি।

অনন্তকালের যাত্রায় কেমন আছিস জানিনা। কবরে শুইয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত শান্ত মুখটি পশ্চিম দিকে রেখে চলে এসেছিলাম। সেই রেখে আসাও কয়েকদিন হয়ে গেল।

পরম দয়ালু ক্ষমাশীল আল্লাহ আমার ভাইকে দয়ার চাঁদরে ঢেকে রাখুন।

—-

অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি

বিরোধী দলীয় হুইপ ও

মাননীয় সংসদ সদস্য, সুনামগঞ্জ-৪