মায়ের সাথে উমরা করতে চেয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার আযমী

- আপডেট সময় : ০১:২০:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫ ১১৮ বার পড়া হয়েছে
অ-নে-ক স্বপ্ন ছিল, আশা ছিল, দোয়া করেছিলাম, ইনশাআল্লাহ জীবিত মুক্তি পেলে, আমি আর আম্মা দু’জনেই সুস্থ থাকলে আম্মা, বউ, বাচ্চারাসহ ওমরাহ করবো।
আল্লাহ আমার জীবনের সেরা বন্ধু আম্মাকে নিয়ে গেছেন! অভাগা আমি আমারই ত্রিশ বছরের ঘরবাড়ির (ক্যান্টনমেন্ট) ভিতরে গুমরে গুমরে কেদেছি – জানতেও পারিনি যে, আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান প্রিয় মানুষটি আর নেই!
আমি যালিমদেরকে লিখিত আবেদন করেছিলাম, আমি জীবিত আছি এবং ভাল আছি তা মা-স্ত্রী-সন্তানদের জানানোর জন্য; আর মা-স্ত্রী -সন্তানরা কেমন আছেন সেই খবর আমাকে জানানোর জন্য। জানোয়ারেরা কোন টু শব্দ করেনি। কাবা তাওয়াফ করার সময় সেই কথা মনে করে চোখে পানি আসছিল। অনেক কস্টে সামলিয়েছি।
৭ আগস্ট রাতে মুক্তির পর হাসপাতালের চেক আপ শেষে ফযরের পর বাসায় ফিরে প্রথমেই মা এর (সেই সাথে বাবারও) কবর যিয়ারত করি। বুক ফেটে কান্না আসছিল। ৬টা মা-পাগল ছেলে আমার মা এর; লাশ কবরে নামানোর জন্য একজনও নেই! যালিমরা, নব্য ফেরাউন গংরা বাকি ৫ ভাইকে যুক্তরাজ্য থেকে আসতে দেয়নি। এই যালেমরা আব্বার জানাযার জন্যও বাকি ৫ ভাইকে আসতে দেয়নি। শয়তানও মনে হয় ওদের কাছে হার মানবে।
প্রথমবার মা এর কবর যিয়ারত এর সময়কার মনের কস্টের কথা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। মনে হচ্ছিল কবরটা খুড়ে ছোটবেলার মত মা এর বুকে শুয়ে থাকি, কপালে- গালে চুমু দেই। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, “মা, ও মা, আমার প্রাণপ্রিয় আম্মা, তুমি কি শুনতে পাও আমাকে? তোমার নাড়িছেঁড়া বুকের ধন, তোমার কলিজার টুকরাটা জীবিত আছে, ফিরে এসেছে। তুমিও ফিরে আসো না মা। তোমাকে দেখে চোখ জুড়াই, তোমার গলার আওয়াজ শুনে কান জুড়াই, তোমার হাতের স্পর্শ পেয়ে অন্তরে শান্তি পাই।
তোমাকে পেলে মুহুর্তেই আমার স-ব কস্ট চলে যাবে আম্মা। তোমার যেই চাঁদমুখখানা আমার সারাজীবনের সকল কাজের, সকল প্রাপ্তির শক্তি, সাহস ও প্রেরণার উৎস ছিল, সেই মুখখানা না দেখে আমি থাকবো কি করে? বাঁঁচবো কিভাবে?
আমি শুনেছি, আমাকে যালেমরা অপহরণের পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তুমি আমার শোকে কাদতে কাদতে প্রায় অন্ধই হয়ে গিয়েছিলে। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ক্ষীণ আশা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করেছো! ও মা, আমার নিজের কষ্টের চেয়ে আমার জন্য তোমার কষ্টের কথা ভেবে, তোমার চাদের মতন মুখের মলিন দশা চিন্তা করে বুক ফেটে কান্না আসছে মা।
তোমার আর আব্বার কাছ থেকে শেখা কুরআনের শিক্ষা, “ইন্নাল্লাহামায়াস সোয়াবিরিন”, “ওয়াবাশশিরিস সোয়াবিরিন” ই একমাত্র শক্তি এখন। ছোট দুটাকে দেখে তোমাদের শোক ভুলে থাকার চেষ্টা করছি।
আশা করি ইনশাআল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌসে দেখা হবে”। “হে আল্লাহ, তুমি আব্বা- আম্মাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে মিলিত কর। আমাদেরকে এমনভাবে পরিচালিত কর যেন আমরা সবাই আব্বা-আম্মার সাথে জান্নাতুল ফেরদৌসে মিলিত হতে পারি, আমীন!”