সুনামগঞ্জ ০৯:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলাম রিজেন্ট পার্কে ১৬ তরুণ-তরুণী আটক : অতপর বিয়ে! নেপথ্যে চাঁদাবাজী?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১২৮ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ১৬ জন ছেলে-মেয়েকে আটক করেন স্থানীয়রা। এরপর তাদেরকে সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের এমন অভিযানকে সাধুবাদ জানালেও নেপথ্যে চাঁদাবাজী রয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র আরো জানায়- এবারই প্রথম নয়, বিগত আওমী সরকারের আমলেও চাঁদা না দেয়ায় একাধিকবার রিসোর্টে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

তরুণ-তরুণীদের আটকের সময় রিসোর্টে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ৩০-৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আটককৃতদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর না করে সামাজিকভাবে বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

১৬ জন তরুণ-তরুণীকে আটক করা হলেও ৮ জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অভিভাবক না আসায় ৮জন তরুন-তরুনীকে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মোগলাবাজার থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে জানান, জনতা কর্তৃক কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে আটকের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু স্থানীয়রা পরিবারের কাছে তাদের হস্তান্তর করেছেন বলে শুনেছি। তবে আমি বার বার তাদেরকে বলেছি আটককৃতদের আমাদের জিম্মায় দিয়ে দেন। আমরা প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করবো। কিন্তু তারা তা শুনেন নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রিসোর্ট ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে বিএনপি দাবীদার একাধিক গ্রুপ রিসোর্টের দিকে দৃষ্টি দেন। এতে মালিকপক্ষ বিপাকে পড়ে যান। কোন পক্ষকে চাদা দিবেন তা ঠিক করতে পারেন নি। ফলে কোন পক্ষেরই মন রাখতে পারেননি তারা। সম্প্রতি একটি পক্ষ ক্ষেপে যায়।

এদিকে রোববার বিকেলে স্থানীয় এক বিএনপির নেতার অনুসারী কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী রিসোর্টে গিয়ে হামলা চালায়। তারা রিসোর্টে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে আসবাবপত্রে আগুণ ধরিয়ে দেয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ- দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্কে শুরু থেকেই অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এটি নামে পার্ক হলেও রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্রামের কক্ষ। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকারা এসব কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিরাপদে অসামাজিক কার্যকলাপ করেন।

রোববার বিকেলে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে বঞ্চিত পক্ষের লোকজন পার্কে হানা দিয়ে কক্ষের ভেতরে ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করেন। তাদের বয়স ১৬ থেকে ২১ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মোগলাবাজার থানাপুলিশ। তবে স্থানীয় মুরুব্বিরা পুলিশে সোপর্দ না করে এসব ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকদের খবর দিয়ে বিয়ের বন্দোবস্ত করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের এমডি হেলাল আহমদ বলেন, আমাদের রিসোর্টে পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে বিশ্রাম নিতে দেয়া হয়। রোববারও ছেলে এবং মেয়েরা আলাদাভাবে বিশ্রাম নেয়ার জন্য ভোটার আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

হঠাৎ করে একদল যুবক রিসোর্টে ঢুকে ভাংচুর-লুটপাট চালায়। তারা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগও করে। ম্যানেজারের রুম থেকে ছেলে-মেয়েদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ছিড়ে ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর তাদের আটক করে রিসোর্টের চাবি নিয়ে নেয়। এরপর আটককৃতদের তারা বিয়ে দিয়েছেন বলে শুনেছি। হামলায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুলের নেতৃত্বে এলাকার মুরব্বীগণ মিলে সামাজিকভাবে বিয়ের উদ্যোগ নেয়ার প্রেক্ষিতে ছেলে-মেয়েদের তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের জিম্মায় না দিয়ে এমন বিয়ের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছেলের অভিভাবক জানান, আমাদের কাছে ইজ্জত বড় বিষয়। তাই কোনকিছু না ভেবে সব শর্ত মেনে সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছি। এর বেশী মন্তব্য করতে রাজী হননি তিনি।

 

এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুল দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, স্থানীয় সাধারণ জনতা রিসোর্টটি ঘেরাও করে অনৈতিক অবস্থায় ১৬ জন তরুণ-তরুণীদের আটক করে। তারপর পুলিশের সাথে পরামর্শ করে আমরা ৮জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। আর ৮জনকে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি।

 

এখানে চাঁদাবাজীর কোন ব্যাপার কখনো শুনিনি। এলাকাবাসীর অনুরোধে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আমি এসেছি। তবে ‘সামান্য ভাংচুর’ হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

সূত্র: দৈনিক জালালাবাদ

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সিলাম রিজেন্ট পার্কে ১৬ তরুণ-তরুণী আটক : অতপর বিয়ে! নেপথ্যে চাঁদাবাজী?

আপডেট সময় : ০৪:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ১৬ জন ছেলে-মেয়েকে আটক করেন স্থানীয়রা। এরপর তাদেরকে সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের এমন অভিযানকে সাধুবাদ জানালেও নেপথ্যে চাঁদাবাজী রয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র আরো জানায়- এবারই প্রথম নয়, বিগত আওমী সরকারের আমলেও চাঁদা না দেয়ায় একাধিকবার রিসোর্টে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

তরুণ-তরুণীদের আটকের সময় রিসোর্টে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ৩০-৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আটককৃতদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর না করে সামাজিকভাবে বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

১৬ জন তরুণ-তরুণীকে আটক করা হলেও ৮ জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অভিভাবক না আসায় ৮জন তরুন-তরুনীকে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মোগলাবাজার থানার ওসি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে জানান, জনতা কর্তৃক কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে আটকের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু স্থানীয়রা পরিবারের কাছে তাদের হস্তান্তর করেছেন বলে শুনেছি। তবে আমি বার বার তাদেরকে বলেছি আটককৃতদের আমাদের জিম্মায় দিয়ে দেন। আমরা প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক তাদের অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করবো। কিন্তু তারা তা শুনেন নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রিসোর্ট ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে বিএনপি দাবীদার একাধিক গ্রুপ রিসোর্টের দিকে দৃষ্টি দেন। এতে মালিকপক্ষ বিপাকে পড়ে যান। কোন পক্ষকে চাদা দিবেন তা ঠিক করতে পারেন নি। ফলে কোন পক্ষেরই মন রাখতে পারেননি তারা। সম্প্রতি একটি পক্ষ ক্ষেপে যায়।

এদিকে রোববার বিকেলে স্থানীয় এক বিএনপির নেতার অনুসারী কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী রিসোর্টে গিয়ে হামলা চালায়। তারা রিসোর্টে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে আসবাবপত্রে আগুণ ধরিয়ে দেয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ- দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্কে শুরু থেকেই অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এটি নামে পার্ক হলেও রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্রামের কক্ষ। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকারা এসব কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিরাপদে অসামাজিক কার্যকলাপ করেন।

রোববার বিকেলে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে বঞ্চিত পক্ষের লোকজন পার্কে হানা দিয়ে কক্ষের ভেতরে ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করেন। তাদের বয়স ১৬ থেকে ২১ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মোগলাবাজার থানাপুলিশ। তবে স্থানীয় মুরুব্বিরা পুলিশে সোপর্দ না করে এসব ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকদের খবর দিয়ে বিয়ের বন্দোবস্ত করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের এমডি হেলাল আহমদ বলেন, আমাদের রিসোর্টে পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে বিশ্রাম নিতে দেয়া হয়। রোববারও ছেলে এবং মেয়েরা আলাদাভাবে বিশ্রাম নেয়ার জন্য ভোটার আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

হঠাৎ করে একদল যুবক রিসোর্টে ঢুকে ভাংচুর-লুটপাট চালায়। তারা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগও করে। ম্যানেজারের রুম থেকে ছেলে-মেয়েদের ভোটার আইডি কার্ডের কপি ছিড়ে ফেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর তাদের আটক করে রিসোর্টের চাবি নিয়ে নেয়। এরপর আটককৃতদের তারা বিয়ে দিয়েছেন বলে শুনেছি। হামলায় ৩০-৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুলের নেতৃত্বে এলাকার মুরব্বীগণ মিলে সামাজিকভাবে বিয়ের উদ্যোগ নেয়ার প্রেক্ষিতে ছেলে-মেয়েদের তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের জিম্মায় না দিয়ে এমন বিয়ের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছেলের অভিভাবক জানান, আমাদের কাছে ইজ্জত বড় বিষয়। তাই কোনকিছু না ভেবে সব শর্ত মেনে সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছি। এর বেশী মন্তব্য করতে রাজী হননি তিনি।

 

এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা তাজরুল ইসলাম তাজুল দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, স্থানীয় সাধারণ জনতা রিসোর্টটি ঘেরাও করে অনৈতিক অবস্থায় ১৬ জন তরুণ-তরুণীদের আটক করে। তারপর পুলিশের সাথে পরামর্শ করে আমরা ৮জনকে বিয়ের শর্তে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি। আর ৮জনকে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছি।

 

এখানে চাঁদাবাজীর কোন ব্যাপার কখনো শুনিনি। এলাকাবাসীর অনুরোধে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আমি এসেছি। তবে ‘সামান্য ভাংচুর’ হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

সূত্র: দৈনিক জালালাবাদ