স্বামীর ফাঁসির দিন ঘনিয়ে আসছে

- আপডেট সময় : ১২:৫৩:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২০৫ বার পড়া হয়েছে
এক.
জন্মদাতা পিতার ফাঁসির রায় হয়েছে। আর কিছুদিন পরেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। ফাল্গুনের এক বিকেলে পিতার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন তার ব্যারিস্টার সন্তান। কলিজার টুকরো সন্তানকে ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়া পিতা ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করিয়ে ব্যারিস্টার বানিয়েছেন। সন্তান তার মেধা ও যোগ্যতার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে জন্মদাতা পিতাকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে তিনি আইন-আদালত নিয়ে মশগুল! জীবনের একটাই চাওয়া— আইনী প্রক্রিয়ায় পিতাকে কারামুক্ত করা।
দুই.
একদিন রাতে দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। কালো পোষাকের মানুষগুলো ব্যারিস্টার সাবকে নিতে এসেছে। তাকে নাকি এখনই তাদের সাথে যেতে হবে। নিজের পোষাক পরিবর্তনেরও সুযোগ নাই। দুই কন্যা জেগেই আছে। বাবার কোলে এসে আর নামতেই চায় না। ব্যারিস্টার সাবের স্ত্রীর কোনো কথায় শুনতে চায় না কালো পোষাকধারীরা। টেনে-হিঁচড়ে ব্যারিস্টার সাবকে গাড়িতে তুলে নিলো ওরা।
তিন.
স্বামীর ফাঁসির দিন ঘনিয়ে আসছে। স্ত্রী বুঝে গেছেন, কদিন বাদেই প্রিয়তম দুনিয়ার সফর শেষ করবেন। তিনি বড্ড পেরেশান। ব্যারিস্টার সন্তানই এতদিন আইন-আদালত সামলে নিতেন। আজ রাতে সেই সন্তান কালো পোষাকধারীদের হেফাজতে। ভদ্রমহিলা সাতপাঁচের কিছুই জানতেন না। স্বামীর গ্রেফতারের পর নাতনীদের সাথেই সময় কাটিয়ে দিতেন আর বিশ্বাস করতেন ব্যারিস্টার সন্তান একদিন তার বাবাকে মুক্ত করে ঘরে ফিরবে। কিন্তু হায়! স্বামী কারাগারে আর সন্তান আয়নাঘরে!
ষাটোর্ধ এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম মহিলা জীবনকে নতুন রুপে দেখতে শুরু করলেন। তিনি সকালে আদালতে যান স্বামীর আইনি লড়াই দেখতে আর বিকেলে যান বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্টেশনগুলোতে। রাতে নাতনীদের বুঝাতে হয়—তাদের বাবা ফিরবে দাদাকে সাথে নিয়ে। বউমার চোখের পানি তার দৃষ্টি এড়ায় না। অবশ্য তিনিও অশ্রু ফেলেন, তবে দরজা বন্ধ করে।
চার.
ব্যারিস্টার সাব ৬ ফিট-৭ ফিট ঘরে বন্দী। হাত পিছে বাঁধা, চোখও বাঁধা। কেবল খাবার আর টয়লেটে যাওয়ার সময় হ্যান্ডকাফ থেকে মুক্তি! তিনি জানেন না, কেন তাকে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে। আটককারীরা জানালো, ছেড়ে দেওয়া হবে। দিন যায়, মাস যায়, বছর পেড়িয়ে যায়। ব্যারিস্টার বুঝতে পারে, এই ছোট্ট ঘর থেকে কোনোদিন আর মুক্তি মিলবে না। আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নেন। কেবল বড্ড ইচ্ছে করে একবারের জন্য কলিজার টুকরো দু’মেয়েকে একনজর দেখতে। তাদের দেখে মরতে পারলে ভালো হতো!
পাঁচ.
আজ ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার দিন। মঞ্চ প্রস্তুত। শেষবারের সাক্ষাতে এসেছেন পরিবারের সবাই। শুধু একজন নাই। প্রিয়তমা স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সন্তানকে এখনো খুঁজে পাওনি? ওরা শেষবেলাতেও ওকে একবার আসতে দিলো না? আমি ওকে দেখে যেতে পারলে ভালো লাগতো। প্রিয়তমা স্ত্রী নিরুত্তর। তিনি বল্লেন—’হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল, নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান-নাসির’
ফাঁসির মঞ্চে হেঁটে যাচ্ছেন বীর সেনানী। কর্তাবাবুদের চোখেও পানি। কনডেম সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চ বেশ দূরেই। মাঝপথে খোলা আকাশ। তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন—আমার রব, আপনার কাছে পৌঁছে যাচ্ছি। আমার সন্তানকে আপনার জিম্মায় দিয়ে গেলাম।
ছয়.
ভদ্রমহিলার স্বামী ফাঁসির মঞ্চে যাচ্ছেন।
সন্তান কোথায়, জানেন না।
নাতনীদের বুঝাতে পারছেন না, দাদা আর কখনো তাদের চুমো দেবে না। এক নাতনী বলে উঠলো—দাদী! আগামীকাল সকালেও কি আমরা দাদাকে এখানে খাবার দিতে আসব? ভদ্রমহিলা বললেন—না, এখানে আর খাবার দেবো না। এখন থেকে আমাদের আল্লাহ সরাসরি তোমার দাদাকে খাবার দেবেন। এখন থেকে আমরা তোমার বাবার গাড়িতে ঘুরে ঘুরে এই শহরের প্রত্যেকটি দালান-কোঠার সামনে দিয়ে যাব…