দখল মামলা বানিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব
মধ্যনগর বিএনপি’র দুইপক্ষের মারমুখী অবস্থান যুবদল নেতাকে বহিস্কার

- আপডেট সময় : ০৬:৪৭:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৫২ বার পড়া হয়েছে
হাঁটবাজার, খেওয়াঘাট, জলমহালসহ বৈধ-অবৈধ আয়ের খাতগুলোতে নিজের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির দু’টিপক্ষ।
দুইপক্ষের মারমুখী অবস্থার কারণে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানে ১৪৪ ধারা বহাল ছিল। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ায় শনিবার মধ্যরাতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায়। তবে রোববার সন্ধ্যায় একপক্ষের নেতা শহীদ আহমদকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা।
মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম মজনু ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দুগনই গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত সবুজ মিয়ার ছেলে জেলা যুবদলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শহীদ আহমদ এর মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব বহুদিনের। গেল পাঁচ আগস্টের পর এই দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়।
স্থানীয় একজন প্রবীণ বিএনপি নেতা জানান, পাঁচ আগস্টের পর মধ্যনগর উপজেলার মহেষখলা বাজার, গোলগাঁও বাজার ও মধ্যনগর বাজারের নিয়ন্ত্রণে একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম মজনু’র ঘনিষ্টদের।
সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেনের ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও আওয়ামী লীগ নেতা বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ ও এই পরিবারের লোকজনের ফেলে যাওয়া রাজত্বের অধিপতি হন মজনু’র সমর্থকরা।
পাঁচ আগস্টের পর থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ওখানে তারাই টোল আদায় করবে বলে জানান ওই নেতা। গেল সপ্তাহে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে উপজেলার তিনটি বৃহৎ বাজার ইজারা হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশে হাটবাজার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী মধ্যনগর, গোলগাঁও ও মহেষখলা বাজার ইজারা দেওয়া হয়। এসময় মহেষখলা বাজার ইজারা হয় এক কোটি ৬৬ লাখ টাকায়। যা আগের বছরে ইজারা ছিল মাত্র ৬৪ লাখ টাকায়। মধ্যনগর বাজার ৯০ লাখ টাকায় ইজারা নেয় মধ্যনগর আড়ৎদার সমিতি। যা দুইবছর আগে ইজারা ছিল ৫০ লাখ টাকায়। চলতি বছরে খাস কালেকশন আদায় হচ্ছে এই বাজারে। গোলগাঁও বাজার ২৩ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে। গেল বছরে এটি ছিল তিন লাখ ৬৬ হাজার টাকায় ইজারা। এই তিনটি হাট-ই শহীদ আহমদের পক্ষের লোকজন ইজারা নিয়েছেন জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, এ কারণেও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। মধ্যনগর বাজার ইজারায় আড়ৎদার সমিতিকে ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছিল। শহীদ আহমদ আড়ৎদার সমিতির পক্ষ নেওয়ায় সেটি সম্ভব হয় নি।
স্থানীয় বিএনপির এই দুপক্ষের একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, ক্ষমতাচ্যুত সরকার দলীয় অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেবার।
যুবদল নেতা শহীদ আহমদ বললেন, ‘আমার পরিবার মধ্যনগরে সংগ্রামী পরিবার হিসেবেই পরিচিত। পাঁচ আগস্টে আমার ভাই রাজধানীতে মিছিল করতে গিয়ে গুলি খেয়েছে। তিন মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়েছে সে। আমরা চাঁদাবাজি-মামলা বাণিজ্য করি না। আব্দুল কাইয়ুম মজনু’র একনায়কতন্ত্রে এবং নানা অপকর্মে একমাত্র বাাঁধা আমি। মজনু’র চাপে উপজেলা কৃষক লীগের নেতা সোনা মিয়া, যুবলীগ নেতা আব্দুল হালিমকে পুলিশ আটক করেও ছেড়ে দেয়। মজনু মামলা বাণিজ্য করেন, মামলা করে টাকা আদায় করেন। গেল ১৫ বছরও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা ছিল মজনু ও তার পরিবারের। তার ভাই মিজানুর রহমান মিনু নৌকাঘাটের ইজারায় শরিক ছিল। বিতর্কিত ডিআইজি আব্দুল বাতেনের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিল। আব্দুল রাজ্জাক আব্দুল কাইয়ুম মজনু’র ঘরে নির্বাচনী কার্যালয় করেছিল।
নির্বাচনে প্রকাশ্যে তার (মজনু’র) পরিবার রাজ্জাকের পক্ষে ছিল। তদন্ত করলেই এসব বেরুবে। ওয়ান ইলেভেনেও দলের সঙ্গে বেঈমানী করেছে এরা (মজনুর পরিবার)। তারা আমার বিরুদ্ধে দলীয় অফিস ভাংচুরের অভিযোগ দিয়েছে। অথচ. তারাই আমার অফিস ভাংচুর করেছে। অফিসে থাকা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছবিও তারা ভাংচুর করেছে। এসব বিষয় দলীয় উর্ধ্বতনদের জানাবো আমি। তিনি দাবি করে, তিনি যুবলীগ নেতার মুক্তি চেয়ে মিছিল করেন নি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন।
আব্দুল কাইয়ুম মজনু বললেন, পুলিশ যুবলীগ নেতা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। অথচ. শহীদ আহমদ যুবদলের নেতা হয়ে মিছিল করে, বিএনপি অফিস ভাংচুর করেছে। আমি বা আমার কোন সমর্থক শহীদের অফিস ভাংচুর করে নি।
বিতর্কিত ডিআইজি বাতেনের ভাইকে আমি অফিস ভাড়া দেই নি। ভাড়া দিয়েছিলাম অন্য একজনকে, সে ডিআইজির ভাই রাজ্জাককে ভাড়া দেয়। এখন ওদের সরিয়ে আমরা বিএনপি অফিস করেছি। আমার ভাই কখনোই আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে-মিশে বাজার ইজারায় ছিল না। আমার ছত্রছায়ায় একজন আওয়ামী লীগের নেতা বা কর্মী নিজেদের অপকর্ম থেকে রেহাই পেয়েছে, কেউ উদাহরণ দিতে পারবে না। শহীদ আহমদ তার অপকর্ম ডাকতে এখন আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ আনার অপচেষ্টা করছে।
মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির আরেক নেতা আবুল বাশার বললেন, উপজেলা বিএনপির দ্বন্দ্বে দুইপক্ষেরই দোষত্রুুটি আছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই সমস্যার তৈরি হয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন জানালেন, মধ্যনগরে দলের দুইপক্ষের দ্বন্দ্ব সংঘাতের ঘটনায় যুবদলের এমএ শহীদকে (শহীদ আহমদকে) যুবদলের পদসহ প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।