পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে স্মরণকালের ভয়বাহ নৌকাডুবি
বাবা-মাকে হারানো ছোট্ট দিপুর দায়িত্ব নিয়েছেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান

- আপডেট সময় : ০৪:১৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৭৩ বার পড়া হয়েছে
পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে স্মরণকালের ভয়বাহ নৌকাডুবিতে বাবা-মাকে হারানো ছোট্ট দিপুর পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় পরিবারটির দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
দিপুদের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর হাতিডুবা গ্রামে। সেখানে অন্যের জমিতে বাস করেন তারা। বড়ভাই দীপন ও পরিতোষই এখন তার অভিভাবক।
ঘটনাটি ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। সেদিন বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরে ছিলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়া উৎসব। তিনবছর বয়সি দিপু ওই উৎসবে যেতে বাবা-মায়ের সঙ্গে রওনা হয় করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটের দিকে। কারণ, ঘাটের অপরপ্রান্তেই বদেশ্বরী মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছার আগেই সেদিন ঘটে এক বিরাট বিপর্যয়।
শতাধিক যাত্রী নিয়ে করতোয়ার বুকে তলিয়ে যায় নৌকা। এ ঘটনায় মৃত্যুপুরী হয় করতোয়ার পাড়। অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরে ছোট্ট দিপু। একদিন পর ফিরে তার মা রূপালী রানীও। তবে জ্যান্ত নয়, প্রাণহীন মরদেহ হয়ে। একইভাবে প্রায় দেড়মাস পর পাওয়া যায় তার বাবা ভূপেন্দ্রনাথ রায়ের মরদেহ।
জামায়াতের আমীর বক্তব্যে বলেন, নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়েছিলো। আমরা আমাদের সাধ্যমত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করেছিলাম।তখন এই ছোট্ট দিপুকে কোলে নেয়ার সুযোগ হয়েছিলো। আমরা চেয়েছিলাম সে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব আমরা নিবো।
পরে আমি দেখলাম, এই এলাকার তৎকালীন সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তার স্ত্রী দিপুর দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আমি খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু আজকে দিপুর ভাই পরিতোষকে জিজ্ঞেস করে জানলাম তারা মাঝে মধ্যে জামকাপড় ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেননি। অর্থ ছাড়া দিপু খাবে কী? তার পড়ালেখার কী হবে?
আলহামদুলিল্লাহ আজকে দিপুকে আবার কোলে নিয়েছি, এই দিপু যতদিন প্রাপ্ত বয়স্ক না হবে তার লেখাপড়া চলবে। আমরা এই পরিবারের সাথে প্রতিমাসের ১ তারিখে এসে হাজির হবো।
এ সময় দিপু, তার বড়ভাই পরিতোষ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার মাহমুদ আল মামুন হিমু, তোফায়েল প্রধান, পঞ্চগড় জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, পঞ্চগড় জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মীর মোর্শেদ তুহিন, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টির সভাপতি মাসুদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেই নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে ৭১ জনই হিন্দু ধর্মের। ঘটনার পরদিন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাত করে সমবেদনা জানান এবং প্রত্যেক নিহতের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে অর্থসহায়তা দেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল আবারও পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাত করে আরও ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেন।