দোয়ারাবাজারের ইউএনও নেহের নিগার তনু’র প্রত্যাহারের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারের বরাবর আবেদন

- আপডেট সময় : ০৬:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে
দোয়ারাবাজারে বিতর্কিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনুকে প্রত্যাহার করার দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত এই আবেদন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিদ হাসনা শান্ত।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়.
বদলি আদেশের পরও স্বপদে বহাল রয়েছেন আওয়ামীলীগের এমপির আশির্বাদপৃষ্ট
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) নেহের নিগার তনু।
গত নভেম্বরে প্রথম সপ্তাহে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকির স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলী করেন এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু’কে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু বদলী আদেশের ৬ মাস পার হলেও এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন বিতর্কিত এই কর্মকর্তা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,
বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসিকে তদবির করে ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর সুনামগঞ্জ -৫( ছাতক-দোয়ারা) আসনে আওয়ামীলীগের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক দোয়ারাবাজার উপজেলায় নিয়ে আসেন আওয়ামীলীগ পরিবারের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হওয়া নেহের নিগার তনুকে। তার আগের ইউএনও ফারজানা প্রিয়াংকা এমপি মানিকের কথায় এতটা পাত্তা দিতনা বিদায় তাকে অনত্রায় সরিয়ে নেন সাবেক এই প্রভাবশালী এমপি।
তনু আসার পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি’র সদস্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবুকে নিয়ে গড়ে তুলেন বালু মহলের সিন্ডিকেট, উপজেলার সকল কাজ তিনি বাবুর পরামর্শে এমপি মানিকের কথায় করতেন। সীমান্তে চোরাচালান ব্যবসা থেকে চাঁদা আদায় আর ফসলী জমি থেকে মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। সময় মত এসব চাঁদা না দিলে নিজেই অভিযানে বের হতেন।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়. ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর দোয়ারাবাজারে যোগদানকারী ইউএনও নেহের নিগার তনু
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি রাতের ভোটের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন নেহের নিগার তনু এবং ২০২৪ সালের ২৯ মে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২য় বারের মত আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান তানভীর আশরাফী বাবুকে এমপি মানিকের নির্দেশে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। এতে বিএনপি নেতা আরিফুল ইসলাম জুয়েল ২১ হাজার ২২৯ ভোট এবং বাবুকে ২৫ হাজার ৬৬১ ভোট দেখানো হয়। দোয়ারাবাজার সদর ও বাবুর নিজ এলাকা দোহালিয়া,পান্ডারগাঁও, মান্নারগাঁও ইউনিয়নে জাল ভোট হয় প্রশাসনের নির্দেশেই কারণ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ( ইউএনও) আর আওয়ামীলীগ নেতা বাবু একই সিন্ডিকেট।
৫ ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখহাসিনা পতনের পর তার নিয়োগকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনুকে হবিগঞ্জের বাহুবল
উপজেলায় বদলি করা হলে
স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় নেহের নিগার তনুকে বাহুবল এলাকাবাসী প্রতিহত করার ঘোষণাও দেয়। এতে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ ও প্রকাশিত হয়। বাহুবল উপজেলার বাসিন্দাদের আপত্তির
এই সুযোগে সীমান্তে চোরাকারবারি চাঁদার টাকার মায়া ছাড়তে না পারায় দোয়ারাবাজারের আওয়ামীলীগ নেতাদের আশ্রয় ও সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য তদবির করে পুনরায় দোয়ারাবাজারে থেকে যান তনু। এতে ইউএনও নেহের নিগার তনু স্বপদে বহাল থাকায় দোয়ারাবাজারে বদলী হওয়া বিয়ানীবাজারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী শামিম যোগদান করেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়,
ইউএনও নেহের নিগার তনু উপরে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে তেল মারলেও উপজেলা পিআইসি দিয়েছে সে আওয়ামীলীগের লোকজনকে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের যাতে আটক না করে সেজন্য দোয়ারাবাজার থানা পুলিশকে সবসময়ই নির্দেশ দেন তনু। শুধু তাইনা এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের সাথে এখনো নিয়মিত যোগাযোগ হয় তার। ইউএনও তনু’র নির্দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থদাতা উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু সহ উপজেলার প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের আটক না করার বিষয়েও প্রশাসনকে বাঁধা প্রদান করেন তিনি।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলজিইডি, ভিজিডি,ভিজিএফ, পিআইসি ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম চলে তারই ইশারাতে। দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ চলেন ইউএনও ছোট ভাই পরিচয়ে। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ইউএনও ও এলজিইডি কর্মকর্তা একই গাড়িতে সবসময় চলাফেরা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ইউএনওর পরামর্শ ক্রমে এলজিইডি কর্মকর্তা উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে এখন হয়ে উঠেছেন ব্যপরোয়া। যেকোন কাজের অগ্রগতি ও অনিয়ম সম্পর্কে এলজিইডি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানেন বলেও তিনি এড়িয়ে চলেন।
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের পূনবার্সনকারী ও সাবেক প্রভাবশালী এমপি জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুহিবুর রহমান মানিকের আস্থাভাজন ও দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের পূনবার্সনকারী নেহের নিগার তনুকে উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানান অভিযোগকারীরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনু’র ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে +880 1730-331088 একাধিকবার কল দেওয়া হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।