সুনামগঞ্জ ০৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালালো চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০১:১৯:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই চীন হাইড্রোজেনভিত্তিক ‘ক্লিন এনার্জি’ বোমার একটি সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

এই নতুন ধরনের বিস্ফোরক ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড নামক একটি পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষাটি পরিচালনা করেছে চীনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), যার পেছনে গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের ৭০৫ নম্বর গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বোমাটি পারমাণবিক নয়, তবে এটি বিস্ফোরণের সময় ১,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার আগুনের গোলা তৈরি করতে সক্ষম, যা প্রায় দুই সেকেন্ড পর্যন্ত জ্বলে থাকে। এই কারণে এটি খোলা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সৈন্যদের দমন, রাস্তা বা সেতু ধ্বংস, এমনকি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

বিস্ফোরণের পর বোমাটি নিজে থেকেই হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে, যা আগুনকে আরও বিস্তৃত করে। এতে বিস্ফোরণের মাত্রা ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। চীনা গবেষকদের দাবি, এই আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে এটি অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুও গলিয়ে ফেলতে পারে।

বর্তমানে চীন একদিকে যেমন তাইওয়ান ঘিরে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়া তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যৎ সংঘাতের আশঙ্কাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চীন পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াও এমন কৌশলগত হামলার সক্ষমতা অর্জনে মনোযোগ দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সীমিত রাখতে পারে।

চীন যদিও এই বোমাকে ‘ক্লিন এনার্জি অস্ত্র’ হিসেবে তুলে ধরেছে, এর মূল লক্ষ্য হলো— শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস, কৌশলগত এলাকা দখলে বাধা সৃষ্টি, এবং প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অঞ্চলে আগুন দিয়ে আঘাত হানা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তির ব্যবহার করে তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণে মনোযোগ দিচ্ছে। এবার হাইড্রোজেনভিত্তিক বিস্ফোরক তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে— পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহার এখন আধুনিক যুদ্ধেও সম্ভব।

চীনের দাবি অনুযায়ী, এখন ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইডের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে, যা আগে কেবল পরীক্ষাগারে তৈরি হতো। বর্তমানে প্রতিবছর এই পদার্থের উৎপাদন ১৫০ টন পর্যন্ত করা সম্ভব।

এ মাসের শুরুতেই চীন তাইওয়ান উপকূলে বড় পরিসরের যুদ্ধ মহড়া ও লাইভ ফায়ার ড্রিল পরিচালনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই কর্মকাণ্ডকে ‘ভয় প্রদর্শনের কৌশল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা তাইওয়ানের পাশে থাকবে।

এই প্রেক্ষাপটে চীন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে— তারা শুধু পরমাণু অস্ত্রেই নয়, যুদ্ধের আরও আধুনিক ও কৌশলগত বিকল্প প্রস্তুতির দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালালো চীন

আপডেট সময় : ০১:১৯:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই চীন হাইড্রোজেনভিত্তিক ‘ক্লিন এনার্জি’ বোমার একটি সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

এই নতুন ধরনের বিস্ফোরক ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড নামক একটি পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষাটি পরিচালনা করেছে চীনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), যার পেছনে গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের ৭০৫ নম্বর গবেষণা ইনস্টিটিউট।

বোমাটি পারমাণবিক নয়, তবে এটি বিস্ফোরণের সময় ১,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার আগুনের গোলা তৈরি করতে সক্ষম, যা প্রায় দুই সেকেন্ড পর্যন্ত জ্বলে থাকে। এই কারণে এটি খোলা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সৈন্যদের দমন, রাস্তা বা সেতু ধ্বংস, এমনকি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

বিস্ফোরণের পর বোমাটি নিজে থেকেই হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে, যা আগুনকে আরও বিস্তৃত করে। এতে বিস্ফোরণের মাত্রা ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। চীনা গবেষকদের দাবি, এই আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে এটি অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুও গলিয়ে ফেলতে পারে।

বর্তমানে চীন একদিকে যেমন তাইওয়ান ঘিরে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়া তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যৎ সংঘাতের আশঙ্কাও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চীন পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াও এমন কৌশলগত হামলার সক্ষমতা অর্জনে মনোযোগ দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সীমিত রাখতে পারে।

চীন যদিও এই বোমাকে ‘ক্লিন এনার্জি অস্ত্র’ হিসেবে তুলে ধরেছে, এর মূল লক্ষ্য হলো— শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস, কৌশলগত এলাকা দখলে বাধা সৃষ্টি, এবং প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অঞ্চলে আগুন দিয়ে আঘাত হানা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তির ব্যবহার করে তার সামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণে মনোযোগ দিচ্ছে। এবার হাইড্রোজেনভিত্তিক বিস্ফোরক তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছে— পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহার এখন আধুনিক যুদ্ধেও সম্ভব।

চীনের দাবি অনুযায়ী, এখন ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইডের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে, যা আগে কেবল পরীক্ষাগারে তৈরি হতো। বর্তমানে প্রতিবছর এই পদার্থের উৎপাদন ১৫০ টন পর্যন্ত করা সম্ভব।

এ মাসের শুরুতেই চীন তাইওয়ান উপকূলে বড় পরিসরের যুদ্ধ মহড়া ও লাইভ ফায়ার ড্রিল পরিচালনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই কর্মকাণ্ডকে ‘ভয় প্রদর্শনের কৌশল’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা তাইওয়ানের পাশে থাকবে।

এই প্রেক্ষাপটে চীন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে— তারা শুধু পরমাণু অস্ত্রেই নয়, যুদ্ধের আরও আধুনিক ও কৌশলগত বিকল্প প্রস্তুতির দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে।