সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
জেলা শহরে ক্যাম্পাস করার দাবি

- আপডেট সময় : ০৩:০০:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৩৬ বার পড়া হয়েছে
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি) ক্যাম্পাস জেলা শহরের কাছাকাছি করার দাবি উঠেছে। মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় এর উপস্থিতিতে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে উত্থাপন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আতাউল গণি।
বিশ্বম্ভরপুরের বাসিন্দা, মেহেরপুর ও টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক আতাউল গণি বলেন, বিগত সময়ে সারা দেশের জেলা শহরগুলোর উন্নতি হলেও সুনামগঞ্জের কোন পরিবর্তন হয় নি। জেলা শহরের কাছকাছি বাড়ি এবং ১৯৯৯ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করার সুবাদে এই শহরের সকল গলি—পথ তাঁর চেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সময়ে শহরের মাত্র পাঁচ শতাংশ পরিবর্তন হয়েছে। যা ঋণাত্মক পরিবর্তন। কোন অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। নাগরিক সুবিধাও বৃদ্ধি পায় নি। উপরুন্ত কর্মহীন গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। শহরটি বাসযোগ্যহীন হয়ে উঠেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। শিক্ষা—দীক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থাও করুণ। শহরটি মৃত প্রায় হয়ে পড়েছে।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয় ক্যাম্পাস শান্তিগঞ্জে হলে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সিলেটে থাকবেন। জেলা শহরের কোন উন্নতি হবে না। তিনি বলেন, শান্তিগঞ্জ আমাদের একটি উপজেলা। চাইলেই ওখানে জেলা শহর কেউ বানাতে পারবেন না। জেলা শহর কোথায় হয়, যেখানে কোর্ট, ডিসি, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জনের অফিস থাকে। সরকারি জুবিলী স্কুল, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের মত প্রতিষ্ঠান আরেকটা হুট করে শান্তিগঞ্জে তৈরি করতে পারবেন না। শান্তিগঞ্জকে জেলা শহর বানানোর এমন পরিকল্পনা ভালো নয়। বিশ্ববিদ্যালয় এই শহরের কাছাকাছি আনলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখানে থাকবেন। জেলা শহরের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। বিদগ্ধ একটি সমাজ গড়ে ওঠবে। এই সুবিধা ভোগ করবেন বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, শাল্লা, মধ্যনগরসহ জেলার সকল উপজেলার বাসিন্দাগণ।
তিনি বলেন, যেখানে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ও নেই, সেই জেলায় বিশ^বিদ্যালয় করা হচ্ছে। এখানে কোন ব্যক্তির কৃতিত্বের কিছু নেই। এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত।
জেলা প্রশাসককে তিনি বলেন, যেহেতু জমি অধিগ্রহণ হয় নি। জমির অর্থও পরিশোধ করা হয় নি। এই বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা যায়।
ড. আতাউল গণি— সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এমন বক্তব্য করার পর সভায় উপস্থিত অনেক কর্মকর্তাই তাঁর বক্তব্যের পক্ষে মতামত জানিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের অনুধাবনের বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায়কে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতনদের জানানোর অনুরোধ জানান।
সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকে এমন দাবি ওঠে আসার বিষয়টি জানাজানি হলে বিকালে শহরজুড়েই এই নিয়ে আলোচনা হতে থাকে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি মুহাম্মদ শামসউদদীন এডভোকেট বললেন, ড. আতাউল গণি সুনামগঞ্জবাসীর আকাঙ্খার কথা তুলে ধরেছেন। শহরের সুধীজনদের সঙ্গে কথা বলে, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) জমি অধিগ্রহণ নিয়ে শুরুতেই ভিন্নমত তৈরি হয়েছিল। সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও পীর মিসবাহ এই বিষয়ে সংসদে কথাও বলেছিলেন। প্রথমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি শান্তিগঞ্জের উজানিগাঁওয়ের কাছাকাছি নির্ধারণের চিন্তা থাকলেও পরে দেখার হাওরপাড়ে সুনামগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জের সীমানায় নির্ধারণ হয়। এক পর্যায়ে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
দেখার হাওরপাড়ে সুনামগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জের সীমানায় এই ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের কথা। প্রস্তাবিত ২০০ একর জমির মধ্যে শান্তিগঞ্জ খাদ্য গোদাম এবং এলাকার একটি কবরস্থান সংরক্ষণ করে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু নঈম শেখ বললেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। জমি অধিগ্রহণের মূল্য পরিশোধ করার প্রকল্প প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ে চলতি সেশনে ১২৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। শান্তিগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটে এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস করে গত ৩ নভেম্বর নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ অনুষ্ঠান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আতাউল গণি বললেন, সুনামগঞ্জের মানুষ হিসেবে আবেগের জায়গা থেকে আমি এই প্রস্তাব করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সুনামগঞ্জের নাগরিকরা ন্যায়সঙ্গতভাবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এই প্রত্যাশা করছি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় বলেন, এটি আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাদের দাবির বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবো।
আতাউল গণি স্যারসহ সকলকে সাধুবাদ জানাই।