ঢাকা ০১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লগি-বৈঠার তাণ্ডব বনাম পাথর বাহিনীর নির্মমতা

আমার এ দেশ কোন মৃত্যু উপত্যকা নয়ঃ

এস.এম.এ ফয়সল
  • আপডেট সময় : ১০:৩৮:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
  • / 7
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ও ২০২৫ সালের ১১ জুলাই প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের দুইটি কলংকজনক অধ্যায়।

প্রথম ঘটনাটি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে তার সোনার ছেলেরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে লগি-বৈঠা দিয়ে জামাত-শিবিরের ১১ জন নেতা কর্মীকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করে মৃত লাশের উপর উম্মত্ত নৃত্য করেছিল। সেই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড দেখে বিশ্ববাসী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ঘটনাটি গতকাল অর্থাৎ ১১ জুলাই ২০২৫ এর। পুরান ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে যুবদলের একটি গ্রুপ তাদের দলেরই আরেকজন সহকর্মী ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী চান মিয়া ওরফে সোহাগকে ভারি পাথর দিয়ে বুকে ও মাথায় আঘাতের পর আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডটি যখন সংঘটিত হয় তখন শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে তামশা দেখছিল এবং ভিডিও করছিল কিন্তু কেউ সোহাগের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এ হত্যাকাণ্ডটি আইয়্যামে জাহিলিয়াতকে হার মানিয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত। উক্ত নির্মম, নিষ্ঠুর ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড দেখে দেশবাসী ও বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত।

প্রথম ঘটনার দায় যেভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এড়াতে পারেন না, ঠিক তেমনি ভাবে দ্বিতীয় ঘটনার দায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তার দল বি এন পিও এড়াতে পারে না।

৫ আগস্ট ২০২৪ এর পট পরিবর্তনের পরে বিএনপি’ র কতিপয় সন্ত্রাসীরা খুন, হত্যা, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক খেলায় মেতে উঠেছে। খবরে প্রকাশ পট পরিবর্তনের পরে বিগত ১১ মাসে বিএনপি’র আন্তকোন্দলে নিজ দলের ১৭০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। এই যদি হয় নির্বাচন পূর্ববর্তী অবস্থা তাহলে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গেলে দেশের জনগণ ও তাদের জান-মালের কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারবে বিএনপি ? যে দল তাদের দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রন করতে ও নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা কীভাবে দেশের জনগণ ও তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দিবে? জাতির সামনে এ এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে! দেশের সচেতন নাগরিকদের মনে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে-আবু সাঈদ-মুগ্ধসহ হাজার- হাজার নেতা-কর্মীরা এ জন্যই কী জীবন দিয়েছে এবং পঙ্গুত্ববরণ করেছে? বি এন পি”র নেতৃবৃন্দ আবোল- তাবোল কথাবার্তা বাদ দিয়ে এখনই যদি নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে না ধরেন, তাহলে এর খেসারত একদিন জাতীর সামনে তাদেরকে দিতেই হবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সকল কর্তাব্যক্তিদের নিকট আমরা ২৮ অক্টোবর ও ১১ জুলাই সহ সকল হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোড় দাবি জানাচ্ছি। দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্মানিত সদস্য এবং আইন-শৃং্খলা রক্ষাবাহিনীর সম্মানিত সকল সদস্যকে অপকর্ম দমনে আরো কঠোর ও কার্যকরী ভুমিকা পালন করার জন্য অনুরোধ করছি।
আর যদি তা না হয়, তাহলে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কারণ- দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা তাদের এ প্রিয় জন্মভূমিকে
কোন মৃত্যু উপত্যকা হতে দিতে পারে না, হতে দিবে না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমিকে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দেশী-বিদেশী সকল যড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন।

লেখক: মাওঃ মতিউর রহমান
সিনিয়র শিক্ষক
আলহেরা জামেয়া ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা। মাইজবাড়ি,সদর, সুনামগঞ্জ

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

লগি-বৈঠার তাণ্ডব বনাম পাথর বাহিনীর নির্মমতা

আমার এ দেশ কোন মৃত্যু উপত্যকা নয়ঃ

আপডেট সময় : ১০:৩৮:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ও ২০২৫ সালের ১১ জুলাই প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের দুইটি কলংকজনক অধ্যায়।

প্রথম ঘটনাটি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে তার সোনার ছেলেরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে লগি-বৈঠা দিয়ে জামাত-শিবিরের ১১ জন নেতা কর্মীকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করে মৃত লাশের উপর উম্মত্ত নৃত্য করেছিল। সেই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড দেখে বিশ্ববাসী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ঘটনাটি গতকাল অর্থাৎ ১১ জুলাই ২০২৫ এর। পুরান ঢাকার মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে যুবদলের একটি গ্রুপ তাদের দলেরই আরেকজন সহকর্মী ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী চান মিয়া ওরফে সোহাগকে ভারি পাথর দিয়ে বুকে ও মাথায় আঘাতের পর আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডটি যখন সংঘটিত হয় তখন শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে তামশা দেখছিল এবং ভিডিও করছিল কিন্তু কেউ সোহাগের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এ হত্যাকাণ্ডটি আইয়্যামে জাহিলিয়াতকে হার মানিয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত। উক্ত নির্মম, নিষ্ঠুর ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড দেখে দেশবাসী ও বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত।

প্রথম ঘটনার দায় যেভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এড়াতে পারেন না, ঠিক তেমনি ভাবে দ্বিতীয় ঘটনার দায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তার দল বি এন পিও এড়াতে পারে না।

৫ আগস্ট ২০২৪ এর পট পরিবর্তনের পরে বিএনপি’ র কতিপয় সন্ত্রাসীরা খুন, হত্যা, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক খেলায় মেতে উঠেছে। খবরে প্রকাশ পট পরিবর্তনের পরে বিগত ১১ মাসে বিএনপি’র আন্তকোন্দলে নিজ দলের ১৭০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। এই যদি হয় নির্বাচন পূর্ববর্তী অবস্থা তাহলে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় গেলে দেশের জনগণ ও তাদের জান-মালের কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারবে বিএনপি ? যে দল তাদের দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রন করতে ও নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা কীভাবে দেশের জনগণ ও তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দিবে? জাতির সামনে এ এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে! দেশের সচেতন নাগরিকদের মনে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে-আবু সাঈদ-মুগ্ধসহ হাজার- হাজার নেতা-কর্মীরা এ জন্যই কী জীবন দিয়েছে এবং পঙ্গুত্ববরণ করেছে? বি এন পি”র নেতৃবৃন্দ আবোল- তাবোল কথাবার্তা বাদ দিয়ে এখনই যদি নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে না ধরেন, তাহলে এর খেসারত একদিন জাতীর সামনে তাদেরকে দিতেই হবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সকল কর্তাব্যক্তিদের নিকট আমরা ২৮ অক্টোবর ও ১১ জুলাই সহ সকল হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোড় দাবি জানাচ্ছি। দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্মানিত সদস্য এবং আইন-শৃং্খলা রক্ষাবাহিনীর সম্মানিত সকল সদস্যকে অপকর্ম দমনে আরো কঠোর ও কার্যকরী ভুমিকা পালন করার জন্য অনুরোধ করছি।
আর যদি তা না হয়, তাহলে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কারণ- দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা তাদের এ প্রিয় জন্মভূমিকে
কোন মৃত্যু উপত্যকা হতে দিতে পারে না, হতে দিবে না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমিকে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দেশী-বিদেশী সকল যড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন।

লেখক: মাওঃ মতিউর রহমান
সিনিয়র শিক্ষক
আলহেরা জামেয়া ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা। মাইজবাড়ি,সদর, সুনামগঞ্জ