ঢাকা ০৮:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ছাতকে চরম অবহেলা, ৫ মাস আগের মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন শরীরে দিল নার্স, জীবন সংকটে রোগী। তাহিরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে ভিডিপি সদস্যরা আট দলীয় জোটের লিয়াজো কমিটির বৈঠক  নাশকতার মামলায় ধর্মপাশায় আওয়ামী লীগ নেতার গ্রেপ্তার শেখ কামাল পাশা স্মৃতি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ অনুষ্ঠিত ছাতকে মিলনের পক্ষে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা এ কে এম রিপনের গণসংযোগ ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা জামায়াতের যৌথ রুকন (সদস্য) সমাবেশ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন ও প্রশিক্ষণ হিট ফাউন্ডেশন সিলেট মহানগরীর সভাপতি দিলশাদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোঃমুস্তাফিজুর রহমান দুর্নীতি রুখতে পারলে পাঁচ বছরেই সুনামগঞ্জের উন্নয়ন সম্ভব – তোফায়েল আহমদ খান পুনরায় আমীর নির্বাচিত ডা. শফিকুর রহমান

তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার ভিজিডি কর্মসূচির নারীদের সঞ্চয়ের টাকা সরকারি হিসাবে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।

ভিজিডি উপকারভোগীদের ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তাহিরপুরের শ্রীপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

আমার সুনামগঞ্জ ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:২৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / 127
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দারের বিরুদ্ধে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী নারীদের ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে, যা এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৪০০ জন ভিজিডি উপকারভোগী নারী জন প্রতি ৫ হাজার ২৮০ টাকা করে সঞ্চয় জমা দেন। কিন্তু ওই অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি হিসাবে জমা না দিয়ে চেয়ারম্যান আলী হায়দার নিজের কাছে রেখে দেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও উপকারভোগীরা টাকা ফেরত না পেয়ে বারবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হন। ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগী ফরিদা বেগমের স্বামী আলী আহমদ গত ১২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন ২২ অক্টোবর (বুধবার) সরজমিন তদন্তে গেলে চেয়ারম্যান আলী হায়দার সবার সামনে টাকা নিজের কাছে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

তদন্তকালে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খসরুল আলম, ইউনিয়ন সচিব আল আমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী নারীরা।

প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন,

“চেয়ারম্যান সাহেব ভিজিডি উপকারভোগীদের টাকা সরকারি হিসাবে না রেখে ব্যক্তিগতভাবে রেখেছেন। জানুয়ারিতে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেননি। তবে তিনি ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”

 

 

ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

“আমরা অনেক কষ্ট করে টাকা জমা দিয়েছি। জানুয়ারিতে ফেরত পাওয়ার কথা থাকলেও এখন অক্টোবর মাস চলছে, এখনও টাকা পাইনি। জানি না আদৌ টাকা ফেরত পাব কিনা।”

 

 

একজন ওয়ার্ড সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন,

“সরজমিন তদন্তে চেয়ারম্যানের কাছে টাকা জমা থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এই টাকা ব্যক্তিগতভাবে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এটি পরিষদের সরকারি হিসাবেই থাকা উচিত ছিল।”

 

 

অভিযোগকারী আলী আহমদ জানান,

“আমার স্ত্রী ফরিদা বেগমসহ ৪০ জন ভুক্তভোগীর মোট ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা ফেরত চাওয়ার পরও চেয়ারম্যান দেননি। পরে নিরুপায় হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। গত বুধবার তদন্তের সময় চেয়ারম্যান ১৫ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

 

 

চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন,

“আমি কিছুদিন অসুস্থ থাকায় সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারিনি। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব উপকারভোগীর টাকা ফেরত দিয়ে দেব।”

 

 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন বলেন,

“তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। সরজমিন তদন্তের সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে আরও ৩৪ বস্তা ভিজিডি চাল জব্দ করা হয়েছে।”

 

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরুখ আলম শান্তনু বলেন,

“ইউএনও স্যার প্রশিক্ষণে আছেন। এ বিষয়ে সরজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

 

মূল তথ্য এক নজরে:

অভিযুক্ত: আলী হায়দার, চেয়ারম্যান, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ

অভিযোগ: ভিজিডি সঞ্চয় তহবিল থেকে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাত

উপকারভোগী নারী: প্রায় ৪০০ জন

তদন্তকারী কর্মকর্তা: মো. আফজাল হোসেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা

প্রতিশ্রুতি: ১৫ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরতের আশ্বাস

 

🗞️ সূত্র: দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার ভিজিডি কর্মসূচির নারীদের সঞ্চয়ের টাকা সরকারি হিসাবে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।

ভিজিডি উপকারভোগীদের ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তাহিরপুরের শ্রীপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

আপডেট সময় : ০৩:২৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দারের বিরুদ্ধে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী নারীদের ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে, যা এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৪০০ জন ভিজিডি উপকারভোগী নারী জন প্রতি ৫ হাজার ২৮০ টাকা করে সঞ্চয় জমা দেন। কিন্তু ওই অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি হিসাবে জমা না দিয়ে চেয়ারম্যান আলী হায়দার নিজের কাছে রেখে দেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও উপকারভোগীরা টাকা ফেরত না পেয়ে বারবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হন। ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগী ফরিদা বেগমের স্বামী আলী আহমদ গত ১২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন ২২ অক্টোবর (বুধবার) সরজমিন তদন্তে গেলে চেয়ারম্যান আলী হায়দার সবার সামনে টাকা নিজের কাছে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

তদন্তকালে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খসরুল আলম, ইউনিয়ন সচিব আল আমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী নারীরা।

প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন,

“চেয়ারম্যান সাহেব ভিজিডি উপকারভোগীদের টাকা সরকারি হিসাবে না রেখে ব্যক্তিগতভাবে রেখেছেন। জানুয়ারিতে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেননি। তবে তিনি ১৫ নভেম্বরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”

 

 

ভুক্তভোগী ফরিদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,

“আমরা অনেক কষ্ট করে টাকা জমা দিয়েছি। জানুয়ারিতে ফেরত পাওয়ার কথা থাকলেও এখন অক্টোবর মাস চলছে, এখনও টাকা পাইনি। জানি না আদৌ টাকা ফেরত পাব কিনা।”

 

 

একজন ওয়ার্ড সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন,

“সরজমিন তদন্তে চেয়ারম্যানের কাছে টাকা জমা থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এই টাকা ব্যক্তিগতভাবে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এটি পরিষদের সরকারি হিসাবেই থাকা উচিত ছিল।”

 

 

অভিযোগকারী আলী আহমদ জানান,

“আমার স্ত্রী ফরিদা বেগমসহ ৪০ জন ভুক্তভোগীর মোট ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা ফেরত চাওয়ার পরও চেয়ারম্যান দেননি। পরে নিরুপায় হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। গত বুধবার তদন্তের সময় চেয়ারম্যান ১৫ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।”

 

 

চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন,

“আমি কিছুদিন অসুস্থ থাকায় সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারিনি। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব উপকারভোগীর টাকা ফেরত দিয়ে দেব।”

 

 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন বলেন,

“তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। সরজমিন তদন্তের সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে আরও ৩৪ বস্তা ভিজিডি চাল জব্দ করা হয়েছে।”

 

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরুখ আলম শান্তনু বলেন,

“ইউএনও স্যার প্রশিক্ষণে আছেন। এ বিষয়ে সরজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

 

মূল তথ্য এক নজরে:

অভিযুক্ত: আলী হায়দার, চেয়ারম্যান, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ

অভিযোগ: ভিজিডি সঞ্চয় তহবিল থেকে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাত

উপকারভোগী নারী: প্রায় ৪০০ জন

তদন্তকারী কর্মকর্তা: মো. আফজাল হোসেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা

প্রতিশ্রুতি: ১৫ নভেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরতের আশ্বাস

 

🗞️ সূত্র: দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর