আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির ছয় নেতার তৎপরতা, আনিসুল হক, মাহবুবুর রহমান সরকার ও কামরুজ্জামান কামরুল আলোচনায় শীর্ষে
সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়: মাঠে সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা

- আপডেট সময় : ০৫:০৫:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
- / 170
সুনামগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনী সরবতা
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন সক্রিয়ভাবে।
চার উপজেলার প্রতিটি বাজার, মোড়, এমনকি হাওরের পাড়েও এখন আলোচনা— ধানের শীষের টিকিট কার হাতে?
আসনের সংক্ষিপ্ত চিত্র
মোট ভোটার প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৯৫ জন, এর মধ্যে নারী ২ লাখ ২৭ হাজার ৭০১ জন, পুরুষ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ জন, এবং হিজড়া ভোটার ৫ জন।
আসনটি বিস্তৃত হাওরাঞ্চলের চার উপজেলা— ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ নিয়ে গঠিত।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
এই আসনে বিএনপি থেকে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নের জন্য সক্রিয় রয়েছেন। সবাই নিজ নিজ এলাকায় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
১. জননেতা আনিসুল হক
তাহিরপুরের কৃতি সন্তান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা সহসভাপতি আনিসুল হক বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ)।
তিনি সংগঠন পরিচালনায় অভিজ্ঞ, মাঠে জনপ্রিয় এবং তৃণমূল কৃষকশ্রেণির কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
২. জননেতা মাহবুবুর রহমান সরকার
জামালগঞ্জের তরুণ নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (যুবদল, সিলেট বিভাগ)।
তিনি তরুণ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এবং এলাকায় ধারাবাহিকভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
৩.জননেতা কামরুজ্জামান কামরুল
তাহিরপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি দীর্ঘদিন দলের তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত থেকে কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বর্তমানে তাহিরপুর-মধ্যনগর অঞ্চলে তার প্রভাব স্পষ্ট, এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে তিনিও মনোনয়নের দৌড়ে অন্যতম সম্ভাবনাময় প্রার্থী।
৪. জননেতা আব্দুল মোতালেব খান
ধর্মপাশার অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। দলের কঠিন সময়ে তিনি বিএনপির প্রতি অটল ছিলেন এবং স্থানীয়ভাবে শক্ত সংগঠন গড়ে তুলেছেন।
৫. ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন
জামালগঞ্জের প্রবাসী আইনজীবী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
প্রবাসে থেকেও তিনি এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন এবং নতুন নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছেন।
৬. জনাবা সালমা নজির
সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নজির হোসেনের সহধর্মিণী সালমা নজিরও মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তৃণমূলে কাজ করছেন।
তিনি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং বিশেষ করে ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ এলাকায় নারী ভোটারদের মধ্যে সাড়া পেয়েছেন।
তৃণমূলে সমান তালে প্রতিযোগিতা
রমজান মাস থেকেই তারা মাঠে সরব— ২৩টি ইউনিয়নে পথসভা, উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা ও কর্মী সমাবেশ করে চলেছেন।
এতে বিএনপির তৃণমূল সংগঠন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
কারা নির্যাতিত নেতারা
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চারজনই রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জেল খেটেছেন।
তারা বিএনপির দুঃসময়েও দলের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন এবং মাঠে থেকে সংগঠন সচল রেখেছেন।
বিশ্লেষণ : কার হাতে যাবে ধানের শীষের টিকিট?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এখনো মনোনয়নের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে স্থানীয় পর্যবেক্ষক ও তৃণমূল কর্মীদের মতে, আনিসুল হক, মাহবুবুর রহমান সরকার ও কামরুজ্জামান কামরুলের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
তাদের মাঠপর্যায়ের উপস্থিতি, জনসংযোগ ও সংগঠন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।
তবুও সালমা নজিরসহ অন্য প্রার্থীরাও সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দলীয় প্রতিযোগিতাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন।
হাওরাঞ্চলে নির্বাচনী উচ্ছ্বাস
চার উপজেলার হাওর-বাঁওড়ে এখন রাজনীতির জোয়ার।
ব্যানার, পোস্টার ও দলীয় সভা-সমাবেশে গরম হয়ে উঠছে পরিবেশ।
স্থানীয়রা বলছেন— “এবারের ধানের শীষের লড়াই হবে জমজমাট, তবে কে পাবেন চূড়ান্ত কার্ড, তা সময়ই বলে দেবে।”