সুনামগঞ্জ ০৮:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পুরান বারুংকা মডেল মাদরাসায় ফ্রি চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত রেনেসাঁ ইসলামিক সোসাইটির উদ্যোগে ফ্রি ব্লাডগ্রুপ নির্নয় তাহিরপুরে আগুনে পুড়ে ছাই বসতঘর, ১৩ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি  পুরান বারুংকা মডেল মাদরাসায় ফ্রি চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত তাহিরপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র হামদ নাত ক্বিরাত প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ সম্পন্ন সততা ও দক্ষতা ব্যবসার মূল পূঁজি : মোঃ শহিদুল ইসলাম ছাতকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দীক গ্রেফতার দোয়ারাবাজারের ইউএনও নেহের নিগার তনু’র প্রত্যাহারের দাবিতে বিভাগীয় কমিশনারের বরাবর আবেদন কাঠইর ইউনিয়নে জামায়াতের গণসংযোগ শান্তিগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ালেন শিল্পপতি মইনুল ইসলাম

শহীদ আব্দুস সালাম আযাদ ভাইয়ের শাহাদাতঃ ব্যতিক্রমি কিছু স্মৃতি

মুহাম্মদ মখছুছুর রহমান
  • আপডেট সময় : ১২:৪১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১১ বার পড়া হয়েছে
সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১৯৮৮ইং সনে দারুল কেরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট হতে ছাদিছ পরিক্ষা দিয়ে ‘ক্বারিয়ানা’ পাশ করি। এই জন্য এ বছর রমজান মাসে ফুলতলীতে অবস্হান করে ‘সাহেব কিবলার’ সোহবত লাভ করে জামায়াত-শিবির বিরোধী ধারণা আরো পাকা পোক্ত হয়।

ওরা নবী-ওলী-সাহাবী মানে না, এদের আকীদা খারাপ,এদের সাথে বিয়ে-শাদী হারাম এ সব কথা গোবিন্দনগর মাদ্রাসায় লেখা-পড়ার সুবাদে আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হযরত মাওঃ ছমির উদ্দিন হুজুরের কাছ থেকে শুনে জামায়াত-বিরুধী যে ধারনা পয়দা হয়েছিল, ‘সাহেব কিবলার’ পবিত্র মুখ থেকে তা শুনে এদের হাত থেকে মুসলমানদেরকে রক্ষার ‘ঈমানী দায়িত্ব’ পালনের প্রেরণা লাভ করি।

এই প্রেরণা থেকে ছাতকে তালামীযের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করি এবং ৮৮ সনের ৭ নভেম্বর ‘ছাতক ক্লাব হলে’ সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়।

৭ নভেম্বর ছাতক সম্মেলনে যাবার জন্য গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট পার্শ্ববর্তী দক্ষিণের রেল লাইনের উপর জাসদ ছাত্রলীগ নেতা গোবিন্দগঞ্জ কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র লক্ষিপাশা গ্রামের লাল ভাইর সাথে দেখা হয়।উনি আমার ক্লাসমিট ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু তাহের ভাইর তালতো ভাই।

এ সুবাদে লাল ভাইর সাথে একটা আলাদা সম্পর্ক। উনার কাছ থেকে জানতে পারি গতকাল গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে শিবিরের ছেলেদের সাথে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের কর্মিদের মারামারি হয়েছে। তিনি জানালেন শিবিরের ছেলেরা নাকি মারামারিতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। শিবিরের একটি ছেলে একটি ‘বাউ’ দিয়ে সংগ্রাম পরিষদের ৬/৭জন কর্মিকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে আজ প্রস্তুতি নিয়ে শিবিরকে শায়েস্তা করা হবে বলে লাল ভাই জানালেন।

ছাতক মিলনায়তনে জাকঝমকপূর্ণ সম্মেলনের মাধ্যমে তালামীযের ছাতক উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে আমিসহ বর্তমান বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান গোলাম মাজকুর পাবেল ভাইও ছিলেন।

সম্মেলনে থাকা অবস্হায়ই সংবাদ পাই যে গোবিন্দগ্ঞ্জে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও শিবিরের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়েছে।এবং এতে শিবিরের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ‘নবীর দুষমনরা’ মার খেয়েছে এ সংবাদে সম্মেলনে ‘নবী প্রেমিকদের’ মাঝে আনন্দ দেখা দেয়!

সম্মেলন থেকে বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ এসে বিস্তারিত সংবাদ জানার জন্য আমি ও আবু তাহের ভাই গোবিন্দগঞ্জ কলেজে যাই।এ বছর জাসদ ছাত্রলীগের কয়েকনেতা কলেজের একটি রুমে মেস হিসেবে থাকতেন। সেখানে গিয়ে লাল ভাইকে পেয়ে তাঁর কাছ থেকে ঘটনার খবর নেয়ার এক পর্যায়ে জাসদ ছাত্রলীগের এক নেতা (বাড়ি কলেজ সংলগ্ন গ্রামে,বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী) পার্শবর্তী ধান ক্ষেত দিয়ে জংধরা একটি রামদা হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করেন এবং বলেন এটা দিয়ে শিবিরকে কুপিয়েছি। তাদের কাছ থেকে জানতে পারি রেজা ভাই (সাবেক উপজেলা আমীর) জুলহাস ভাইসহ কয়েকজনের অবস্হা আশংকা জনক। এখান থেকে বিদায় নিয়ে বাদ মাগরীব গোবিন্দগঞ্জ হতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরাত পথে রাস্হায় লোক মুখে শুনতে পাই যে, শিবিরের আহত আব্দুস সালাম নামক একজন ওসমানী হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। এতে মানুষের মধ্যে কিছুটা আতংকের সৃষ্টি হয়।কারণ তখনকার সময় যে কোন মার্ডারের সংবাদে মানুষের মনে ভয় দেখা দিতো।

পরের দিন গোবিন্দ নগর মাদ্রাসায় ক্লাস করতে গিয়ে জানতে পারি যে,কলেজ মাঠে শিবির নেতার জানাযা হবে। তখন আমি আলিম ১ম বর্ষের ছাত্র।ক্লাস নিতে আসা (মাওলানা ওয়ারিছ উদ্দিন) মৈশাপুরী হুজুরকে জানাযায় অংশ গ্রহণ করা যায় কী না জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বললেন,”মান কুতিলা জুলমান ফাহুয়া শাহীদুন”(যে ব্যক্তিকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয় তিনি শহীদ) হুজুরের এ কথা শুনে আমরা কয়েকজন কলেজ মাঠে গিয়ে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য শুনি এবং জানাযায় শরিক হই। জানাযার ইমামতি করেন জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মাওঃ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।

ইসলামের শত্রু হিসেবে যাদেরকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতাম, সদ্য গঠিত উপজেলা তালামীযের একজন ‘নেতা’ হয়েও কিসের টানে এমন একজনের জানাযায় অংশ নিয়েছিলাম এ নিয়ে আজো ভাবি!

প্রায় ৫ বছর সক্রিয় ভাবে তালামীয করার পর ৯৩ সনের ৭ নভেম্বর শহীদ সালাম ভাইয়ের শাহাদাত বার্ষিকীর দিন সিলেট জেলা উত্তর শিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাওঃ ফখরুল ভাইয়রে হাতে এই শহীদি কাফেলায় শরীক হই।

আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর মেহেরবাণীতে ৯৪সালে এই সংগঠনের সাথী ও ৯৬ সনে সদস্য শপথ নেয়ার সৌভাগ্য লাভ করি।

আল্লাহ যেন আব্দুস সালাম আযাদ ভাইয়ের শাহাদাতকে এবং শহীদের খুন ঝরা ছাতকের জমিনকে ইসলামী আন্দদোলনের জন্য কবুল করেন।
আমীন!

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শহীদ আব্দুস সালাম আযাদ ভাইয়ের শাহাদাতঃ ব্যতিক্রমি কিছু স্মৃতি

আপডেট সময় : ১২:৪১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

১৯৮৮ইং সনে দারুল কেরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাষ্ট হতে ছাদিছ পরিক্ষা দিয়ে ‘ক্বারিয়ানা’ পাশ করি। এই জন্য এ বছর রমজান মাসে ফুলতলীতে অবস্হান করে ‘সাহেব কিবলার’ সোহবত লাভ করে জামায়াত-শিবির বিরোধী ধারণা আরো পাকা পোক্ত হয়।

ওরা নবী-ওলী-সাহাবী মানে না, এদের আকীদা খারাপ,এদের সাথে বিয়ে-শাদী হারাম এ সব কথা গোবিন্দনগর মাদ্রাসায় লেখা-পড়ার সুবাদে আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হযরত মাওঃ ছমির উদ্দিন হুজুরের কাছ থেকে শুনে জামায়াত-বিরুধী যে ধারনা পয়দা হয়েছিল, ‘সাহেব কিবলার’ পবিত্র মুখ থেকে তা শুনে এদের হাত থেকে মুসলমানদেরকে রক্ষার ‘ঈমানী দায়িত্ব’ পালনের প্রেরণা লাভ করি।

এই প্রেরণা থেকে ছাতকে তালামীযের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করি এবং ৮৮ সনের ৭ নভেম্বর ‘ছাতক ক্লাব হলে’ সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়।

৭ নভেম্বর ছাতক সম্মেলনে যাবার জন্য গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট পার্শ্ববর্তী দক্ষিণের রেল লাইনের উপর জাসদ ছাত্রলীগ নেতা গোবিন্দগঞ্জ কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র লক্ষিপাশা গ্রামের লাল ভাইর সাথে দেখা হয়।উনি আমার ক্লাসমিট ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবু তাহের ভাইর তালতো ভাই।

এ সুবাদে লাল ভাইর সাথে একটা আলাদা সম্পর্ক। উনার কাছ থেকে জানতে পারি গতকাল গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে শিবিরের ছেলেদের সাথে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের কর্মিদের মারামারি হয়েছে। তিনি জানালেন শিবিরের ছেলেরা নাকি মারামারিতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। শিবিরের একটি ছেলে একটি ‘বাউ’ দিয়ে সংগ্রাম পরিষদের ৬/৭জন কর্মিকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে আজ প্রস্তুতি নিয়ে শিবিরকে শায়েস্তা করা হবে বলে লাল ভাই জানালেন।

ছাতক মিলনায়তনে জাকঝমকপূর্ণ সম্মেলনের মাধ্যমে তালামীযের ছাতক উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে আমিসহ বর্তমান বিএনপি নেতা সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান গোলাম মাজকুর পাবেল ভাইও ছিলেন।

সম্মেলনে থাকা অবস্হায়ই সংবাদ পাই যে গোবিন্দগ্ঞ্জে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও শিবিরের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়েছে।এবং এতে শিবিরের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ‘নবীর দুষমনরা’ মার খেয়েছে এ সংবাদে সম্মেলনে ‘নবী প্রেমিকদের’ মাঝে আনন্দ দেখা দেয়!

সম্মেলন থেকে বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ এসে বিস্তারিত সংবাদ জানার জন্য আমি ও আবু তাহের ভাই গোবিন্দগঞ্জ কলেজে যাই।এ বছর জাসদ ছাত্রলীগের কয়েকনেতা কলেজের একটি রুমে মেস হিসেবে থাকতেন। সেখানে গিয়ে লাল ভাইকে পেয়ে তাঁর কাছ থেকে ঘটনার খবর নেয়ার এক পর্যায়ে জাসদ ছাত্রলীগের এক নেতা (বাড়ি কলেজ সংলগ্ন গ্রামে,বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী) পার্শবর্তী ধান ক্ষেত দিয়ে জংধরা একটি রামদা হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করেন এবং বলেন এটা দিয়ে শিবিরকে কুপিয়েছি। তাদের কাছ থেকে জানতে পারি রেজা ভাই (সাবেক উপজেলা আমীর) জুলহাস ভাইসহ কয়েকজনের অবস্হা আশংকা জনক। এখান থেকে বিদায় নিয়ে বাদ মাগরীব গোবিন্দগঞ্জ হতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরাত পথে রাস্হায় লোক মুখে শুনতে পাই যে, শিবিরের আহত আব্দুস সালাম নামক একজন ওসমানী হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। এতে মানুষের মধ্যে কিছুটা আতংকের সৃষ্টি হয়।কারণ তখনকার সময় যে কোন মার্ডারের সংবাদে মানুষের মনে ভয় দেখা দিতো।

পরের দিন গোবিন্দ নগর মাদ্রাসায় ক্লাস করতে গিয়ে জানতে পারি যে,কলেজ মাঠে শিবির নেতার জানাযা হবে। তখন আমি আলিম ১ম বর্ষের ছাত্র।ক্লাস নিতে আসা (মাওলানা ওয়ারিছ উদ্দিন) মৈশাপুরী হুজুরকে জানাযায় অংশ গ্রহণ করা যায় কী না জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বললেন,”মান কুতিলা জুলমান ফাহুয়া শাহীদুন”(যে ব্যক্তিকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয় তিনি শহীদ) হুজুরের এ কথা শুনে আমরা কয়েকজন কলেজ মাঠে গিয়ে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য শুনি এবং জানাযায় শরিক হই। জানাযার ইমামতি করেন জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মাওঃ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।

ইসলামের শত্রু হিসেবে যাদেরকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতাম, সদ্য গঠিত উপজেলা তালামীযের একজন ‘নেতা’ হয়েও কিসের টানে এমন একজনের জানাযায় অংশ নিয়েছিলাম এ নিয়ে আজো ভাবি!

প্রায় ৫ বছর সক্রিয় ভাবে তালামীয করার পর ৯৩ সনের ৭ নভেম্বর শহীদ সালাম ভাইয়ের শাহাদাত বার্ষিকীর দিন সিলেট জেলা উত্তর শিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাওঃ ফখরুল ভাইয়রে হাতে এই শহীদি কাফেলায় শরীক হই।

আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর মেহেরবাণীতে ৯৪সালে এই সংগঠনের সাথী ও ৯৬ সনে সদস্য শপথ নেয়ার সৌভাগ্য লাভ করি।

আল্লাহ যেন আব্দুস সালাম আযাদ ভাইয়ের শাহাদাতকে এবং শহীদের খুন ঝরা ছাতকের জমিনকে ইসলামী আন্দদোলনের জন্য কবুল করেন।
আমীন!