নূরুল হক নূরুকে মজিবুর রহমান মঞ্জুর পরামর্শ

- আপডেট সময় : ০১:০৪:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ৮১ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর এডভোকেট তাজুল ইসলাম সম্পর্কে গণঅধিকার পরিষদ একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরু যে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন এবং উনার গালে গালে তালে তালে জুতা মারার শ্লোগান দিয়ে যে মিছিল করেছেন তা আমি গণমাধ্যমে দেখলাম। এর আগে নুরুল হক নুরু এবং রাশেদ খান আমাকে এবং আমাদের দলের কয়েকজন নেতাকে ফোন করে অনুরোধ করেন এডভোকেট তাজুল ইসলাম যেন কর্ণেল অব. মশিউজ্জামান-ফারুক হাসান নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের পক্ষে মামলায় না লড়েন। তার এই অনুরোধ আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। কারণ একজন আইনজীবী হিসেবে (জনাব তাজুল ইসলাম) তিনি নুরুদের এবং ফারুকদের যে কারও মামলা লড়তে পারেন, এটা তার পেশাগত অধিকার। রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশই আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের মিত্র। কেউ আপন কেউ পর নয়।
নুরুল হক নুর আমাকে বহুবার অনুরোধ করেছেন মশিউজ্জামান-ফারুক গ্রুপকে আমরা যেন স্বীকৃতি না দিই বা কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানাই। শুনেছি এরকম অনুরোধ সে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও করেছে। কিন্তু কেউ তার এই অনুরোধকে আমরা গুরুত্ব দিইনি। কারণ একই রাজনৈতিক সভায় আমরা এলডিপি’র দুই অংশ, জাগপা’র দুই অংশ, খেলাফত মজলিশের দুই অংশসহ এরকম বহু রাজনৈতিক দলের দুই অংশকে নিয়ে মিটিং মিছিল করেছি; এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের ব্যপারে কেউ আপত্তি তোলেনি। নুরুল হক নুরু ও রাশেদকে আমি বিষয়টা বুঝিয়ে বলেছি এবং এও অনুরোধ করেছি নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে এক হয়ে যাও। তুমি মেনদি সাফাদির সাথে মিটিংয়ের বিষয়টা স্বীকার করে Sorry বললে আর তোমার বিরুদ্ধে যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল সেটা মেনে নিয়ে দলকে এক করে ফেল। যাই হোক নুরুর কাছে সেটা ভালো মনে হয়নি বলে সে আমাদের পরামর্শ ও উপদেশ গ্রাহ্য করেনি।
নুরুল হক নুরুর দল কালকে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও এবি পার্টিকে কটাক্ষ করে যে বক্তব্য এবং শ্লোগান দিয়েছে তাতে আমি খুব বিস্মিত হয়েছি! একটা সামান্য স্বার্থের জন্য কেউ তার আন্দোলনের মিত্র সম্পর্কে এ ধরনের বিষোদগার করতে পারে! তা ভাবতেও পারিনি। পরক্ষণে মনকে প্রবোধ দিয়েছি এই বলে যে, হ্যাঁ পারে। কেউ যদি অপরের কৃতজ্ঞতা ও অবদানকে পদদলিত করে মুহুর্তে চোখ উল্টানোর রাজনীতিতে অভ্যস্ত হয় সে সম্ভবত: পারে।
আমি গণপরিষদের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে বলবো, আমার এবং অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস শুরু হয়েছে অন্তত: ৩০-৩৫ বছর আগে। গণঅধিকার পরিষদের বহু নেতা-কর্মীর জন্মও বোধকরি তখন হয়নি। জামায়াত আমাকে দল থেকে বহিস্কার করলেও কিম্বা এডভোকেট তাজুল ইসলাম এবি পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন হলেও আমাদের বিরুদ্ধে জামায়াতের কেউ কোন অনৈতিক ও আর্থিক অসততার অভিযোগ তুলেছে বলে কখনও শুনিনি। নুরুল হক নুরু ও রাশেদ খানরা বিগত সরকারের সময়ে যে নির্যাতন নিস্পেষণ ভোগ করেছেন তার শতগুন বেশী নির্যাতন নিস্পেষণ আমরা প্রত্যেক সরকারের আমলে ভোগ করেছি। ইতিহাস না জানা অপরাধ নয় কিন্তু না জেনে কারও সম্পর্কে মন্তব্য করাটা অজ্ঞতা ও মুর্খতা।
নুরু এই সময়ের একজন উঠতি রাজনীতিবিদ। তাকে এবং তার দলের নেতা-কর্মীদের বলবো তোমাদের সম্ভাবনা এখনও আছে। রাজনীতিতে বন্ধু বাড়াতে হয় শত্রু কমাতে হয়। কিন্তু তোমরা অনবরত শত্রু বাড়িয়ে চলছো। তোমাদের বহু বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তোমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তোমাদের ক্ষুদে অনুসারীরা (সমন্বয়ক ও উপদেষ্টারা) আজ দেশের মহা পরিবর্তনের বিপ্লবী মহানয়ক। আর তোমরা একটা মামলা পরিচালনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মিত্রদের গালে গালে জুতা মারার রাজনীতি করছো। এতটুকু তোমাদের দূরদৃষ্টি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা!!
আবারও অনুরোধ করছি, তোমরা ভাবো। দলটাকে সুন্দর করে গড়ে তোল। তোমাদের সাথে কারও দ্বিমত থাকলে তার উপর হামলা করা, তাকে অপমাণ অপদস্ত করার রাজনীতিতো ছাত্রলীগের রাজনীতি! সেটাই যদি করবা তাইলে এত রক্ত সংগ্রামের পথ কেন পাড়ি দিলা? অতএব পূণ: অনুরোধ; তোমাদের মহা সম্ভাবনাকে এভাবে ক্ষুদ্র ও হীন চিন্তায় বিলীন করে দিওনা প্লিজ।