ঢাকা ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক: ১১ কিলোমিটারে দুর্ভোগের দীর্ঘশ্বাস; সুনামগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মানবিক সংগঠন ‘Source Of Humanity’-এর যাত্রা শুরু: শান্তিগঞ্জে গলায় ওড়না পেঁচানো গৃহবধূর লা*শ উদ্ধার আপনাদের সন্তান হিসেবে সেবা করার সুযোগ চাই : সৈয়দ তালহা আলম আজ ২০ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ভূমি উন্নয়ন সচেতনতায় সুনামগঞ্জে তিনদিনব্যাপী ভূমি মেলা শুরু; পূর্ব নির্ধারিত স্থানে সুবিপ্রবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে মানববন্ধন শান্তিগঞ্জে ভূমি মেলা উদ্বোধন ও বর্ণাঢ্য র‍্যালি সুনামগঞ্জ জেলা স্কাউটস’র গবেষণা ও মূল্যায়ন ওয়ার্কসপ ড. ইউনূসের পাশে জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ইইউ
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়ক: ১১ কিলোমিটারে দুর্ভোগের দীর্ঘশ্বাস; সুনামগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মানবিক সংগঠন ‘Source Of Humanity’-এর যাত্রা শুরু: শান্তিগঞ্জে গলায় ওড়না পেঁচানো গৃহবধূর লা*শ উদ্ধার আপনাদের সন্তান হিসেবে সেবা করার সুযোগ চাই : সৈয়দ তালহা আলম আজ ২০ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ভূমি উন্নয়ন সচেতনতায় সুনামগঞ্জে তিনদিনব্যাপী ভূমি মেলা শুরু; পূর্ব নির্ধারিত স্থানে সুবিপ্রবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে মানববন্ধন শান্তিগঞ্জে ভূমি মেলা উদ্বোধন ও বর্ণাঢ্য র‍্যালি সুনামগঞ্জ জেলা স্কাউটস’র গবেষণা ও মূল্যায়ন ওয়ার্কসপ ড. ইউনূসের পাশে জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ইইউ

বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে বাড়ছে চালের দাম

আমার সুনামগঞ্জ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৫:১৯:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ১০৯ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিশ্ববাজারে চালের দাম কমলেও বাংলাদেশে চালের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। মোটা ও মাঝারি জাতের চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও চিকন চালের দাম বাড়ছে। সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে স্মার্টকার্ড ও ট্রাকসেলের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিতরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খাদ্য অধিদপ্তর আশা করছে, বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ফলে দাম কিছুটা কমবে।

এদিকে নওগাঁয় ধান ও চাল অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগে এক চালকল মালিকের (মিলার) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। খাদ্য বিভাগ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে। একই সঙ্গে মজুত করা ২০৩ টন ধান ও ৩৫ টন চালসহ গুদাম বন্ধ করে (সিলগালা) দেওয়া হয়।

নওগাঁ জেলা খাদ্য বিভাগের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তারা অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুত করছেন। এ কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ যৌথ অভিযান চালায়। এ সময় শহরের নওগাঁ সুফিয়া অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক শফিকুল ইসলাম নাথুর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করা হয়। পাশাপাশি মজুত করা চাল ও ধানের গুদাম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল কারওয়ান বাজারে মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা এবং চিকন চাল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। পুরান ঢাকার বাবুবাজারে মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা এবং চিকন চাল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ব্রি-২৮ চাল ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, আর নাজির শাইল চাল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল, যা মেশিন প্রসেসড রাইস, মূলত ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি হাইব্রিড ধান থেকে উৎপাদিত এবং এর মূল্য পুরো বাজার দরকে প্রতিফলিত করে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় দরিদ্র জনগণের জন্য চালের স্বল্পমূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে এবং মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রায় সাত লাখ টন চাল বিতরণের পরিকল্পনা করেছে। বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দাম কমে আসবে।

খাদ্য ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে সরকার খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুক গড়ে তুলেছে এবং চালের দর যাতে স্থিতিশীল থাকে সে জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে চাল আমদানিও অব্যাহত রেখেছে। খাদ্যমূল্য সহনশীল রাখার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশে কোনো খাদ্য সংকট হবে না।

এদিকে গতকাল সোমবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন (মিনিকেট) চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বর্তমানে ভালো মানের মিনিকেট চাল মানভেদে ৭৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হতো ৭১ থেকে ৮৪ টাকায়। মোটা স্বর্ণা গুটিচাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের ওসমান রাইস এজেন্সির ওসমান বলেন, গত সপ্তাহে রশিদ মিনিকেট চালের কেজি ছিল ৭৬ থেকে ৭৮ টাকার মধ্যে। এ সপ্তাহে সে চালের দাম হয়েছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। আর মোজাম্মেল মিনিকেট (অপেক্ষাকৃত সরু) গেল সপ্তাহে বিক্রি হয় ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়। এ সপ্তাহে সেটি ১০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীতে গত সপ্তাহে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় মিনিকেট চালের দামও কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মতো।

শুধু আঠাশ আর পাইজামের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৬২ টাকাতেই মিলছে। গত সপ্তাহে নাজিরশাইল চালের (মোটা) কেজি বিক্রি হয় ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। এ সপ্তাহে ৭২ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর চিকন নাজিরশাইল গত সপ্তাহে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে হয়েছে ৭৬ থেকে ৮০ টাকায়। কিছুটা দাম বেড়েছে ‘গরিবের’ মোটা চালেরও। গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া চাল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের চাটখিল রাইস এজেন্সির রাসেল বলেন, চালের বাজারে এখনো সিন্ডিকেট সক্রিয়। সরকার ইচ্ছা করলে অন্যান্য পণ্যের মতো চালের দামও কমাতে পারে। আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি চাল সরবরাহকারী মিল মালিকদের গোডাউনে অভিযান চালালে চালের দাম কমতে বাধ্য। বড় বড় মিল মালিকরা হাজার হাজার টন চাল মজুত করে রেখে সংকটের কথা বলে দফায় দফায় চালের দাম বাড়াচ্ছে।

জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ইরি ধান না ওঠা পর্যন্ত চালের বাজার অস্থির থাকতে পারে। তবে সরকার আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারলে চালের দাম কিছু কমে আসতে পারে।

তবে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, গত বছর বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কারণে আমন ও আউশ মৌসুমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এর ফলে বাজারে ধানের দাম চড়া।

এমনকি মিল মালিকরা স্থানীয় বাজার থেকে পর্যাপ্ত ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে বোরো মৌসুমের ধান ওঠার আগপর্যন্ত চালের দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায়ীর পরামর্শ চালের দাম কমাতে হলে আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ক্রমেই কমছে। ভারতে চালের রপ্তানিমূল্য এখনো ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। চাহিদা কমে যাওয়া এবং অন্যান্য চাল রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে চালের রপ্তানিমূল্য কমে আসছে।

বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, চাহিদা সেভাবে না থাকলেও এশিয়ার শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। বিশ্ববাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল সরবরাহ করে ভারত। চালের আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের পরের চারটি অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে দামে প্রভাব ফেলে। তবে ভারতে কমলেও ভিয়েতনামে চলতি সপ্তাহে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।

তবে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দামের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও দাম কমেছে।

ভারতে ২০২২ সালে কম বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদনসংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ফলে সে বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির সরকার বাসমতী ভিন্ন অন্যান্য চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ২০২৩ সালে অন্যান্য চাল রপ্তানির ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে রেকর্ড ফসল উৎপাদনের ফলে সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় চাল রপ্তানির বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু হয়।

গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারত চাল রপ্তানি থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এরপর থেকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে শীত মৌসুম থেকেই চালের দাম বাড়তি। বিভিন্ন দেশে থেকে আমদানি করা হলেও দাম কমছে না।

ব্যবসায়ীদের মতে, ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারীদের কাছ থেকে চাল কিনতে শুরু করেছে। এতে ভারতের চালের দামের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

ভারতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের রপ্তানি মূল্য চলতি সপ্তাহে টনপ্রতি ৪০৩-৪১০ ডলার নির্ধারণ হয়েছে। গত সপ্তাহে এই দাম ছিল ৪০৯-৪১৫ ডলার। ভারতের সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্টের সংবাদে বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের চালের রপ্তানিমূল্য কমে যাওয়ায় ভারতের চালের দামও কমেছে।

ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৯২ ডলার, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩৮৯ ডলার।

এদিকে থাইল্যান্ডেও চলতি সপ্তাহে চালের দাম ছিল নিম্নমুখী। দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল গত সপ্তাহে টনপ্রতি ৪১৫ ডলার থেকে কমে ৪০৫-৪০৮ ডলার হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে চালের দামে প্রভাব পড়েছে।

ব্যাংককের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভিয়েতনাম ও ভারতের চালের দাম থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক কম। তাই পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চাহিদা নিম্নমুখী। অন্য একটি সূত্র বলছে, ভারত ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো থেকে নতুন চালের সরবরাহ বাড়ায় এ বছর থাইল্যান্ডের চালের চাহিদা আরও কমতে পারে।

এদিকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও সরকারি জোগান শক্তিশালী করতে চলতি অর্থবছরে বিশ্ববাজার থেকে ১০ লাখ টন চাল ও গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে সরকার চাহিদা প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িয়ে সাত হাজার ২৫০ কোটি টাকার স্থলে আট হাজার ১০০ কোটি টাকা করেছে। খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি জোরদার ও কম আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত জুলাই থেকে আগস্টে টিসিবির বিতরণ কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হলেও সরকার আলু ও পেঁয়াজসহ বেশ কয়েকটি পণ্য বিতরণ জোরদার করেছে। কম আয়ের মানুষদের সহায়তায় সরকার ওএমএস, টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (এফএফপি) মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ বাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সামগ্রিক খাদ্য বিতরণ হয়েছে ১৮ লাখ ১৬ হাজার টন।

তথ্যসূত্র:  দৈনিক আমার দেশ

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে বাড়ছে চালের দাম

আপডেট সময় : ০৫:১৯:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

বিশ্ববাজারে চালের দাম কমলেও বাংলাদেশে চালের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। মোটা ও মাঝারি জাতের চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও চিকন চালের দাম বাড়ছে। সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে স্মার্টকার্ড ও ট্রাকসেলের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিতরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খাদ্য অধিদপ্তর আশা করছে, বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, ফলে দাম কিছুটা কমবে।

এদিকে নওগাঁয় ধান ও চাল অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগে এক চালকল মালিকের (মিলার) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। খাদ্য বিভাগ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে। একই সঙ্গে মজুত করা ২০৩ টন ধান ও ৩৫ টন চালসহ গুদাম বন্ধ করে (সিলগালা) দেওয়া হয়।

নওগাঁ জেলা খাদ্য বিভাগের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তারা অবৈধভাবে ধান ও চাল মজুত করছেন। এ কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ যৌথ অভিযান চালায়। এ সময় শহরের নওগাঁ সুফিয়া অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক শফিকুল ইসলাম নাথুর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করা হয়। পাশাপাশি মজুত করা চাল ও ধানের গুদাম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল কারওয়ান বাজারে মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা এবং চিকন চাল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। পুরান ঢাকার বাবুবাজারে মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা এবং চিকন চাল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ব্রি-২৮ চাল ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, আর নাজির শাইল চাল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল, যা মেশিন প্রসেসড রাইস, মূলত ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি হাইব্রিড ধান থেকে উৎপাদিত এবং এর মূল্য পুরো বাজার দরকে প্রতিফলিত করে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় দরিদ্র জনগণের জন্য চালের স্বল্পমূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে এবং মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রায় সাত লাখ টন চাল বিতরণের পরিকল্পনা করেছে। বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দাম কমে আসবে।

খাদ্য ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে সরকার খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুক গড়ে তুলেছে এবং চালের দর যাতে স্থিতিশীল থাকে সে জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে চাল আমদানিও অব্যাহত রেখেছে। খাদ্যমূল্য সহনশীল রাখার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশে কোনো খাদ্য সংকট হবে না।

এদিকে গতকাল সোমবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন (মিনিকেট) চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বর্তমানে ভালো মানের মিনিকেট চাল মানভেদে ৭৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হতো ৭১ থেকে ৮৪ টাকায়। মোটা স্বর্ণা গুটিচাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের ওসমান রাইস এজেন্সির ওসমান বলেন, গত সপ্তাহে রশিদ মিনিকেট চালের কেজি ছিল ৭৬ থেকে ৭৮ টাকার মধ্যে। এ সপ্তাহে সে চালের দাম হয়েছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। আর মোজাম্মেল মিনিকেট (অপেক্ষাকৃত সরু) গেল সপ্তাহে বিক্রি হয় ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়। এ সপ্তাহে সেটি ১০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীতে গত সপ্তাহে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় মিনিকেট চালের দামও কেজিতে বেড়েছে দুই টাকার মতো।

শুধু আঠাশ আর পাইজামের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৬২ টাকাতেই মিলছে। গত সপ্তাহে নাজিরশাইল চালের (মোটা) কেজি বিক্রি হয় ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। এ সপ্তাহে ৭২ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর চিকন নাজিরশাইল গত সপ্তাহে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে হয়েছে ৭৬ থেকে ৮০ টাকায়। কিছুটা দাম বেড়েছে ‘গরিবের’ মোটা চালেরও। গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া চাল এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের চাটখিল রাইস এজেন্সির রাসেল বলেন, চালের বাজারে এখনো সিন্ডিকেট সক্রিয়। সরকার ইচ্ছা করলে অন্যান্য পণ্যের মতো চালের দামও কমাতে পারে। আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি চাল সরবরাহকারী মিল মালিকদের গোডাউনে অভিযান চালালে চালের দাম কমতে বাধ্য। বড় বড় মিল মালিকরা হাজার হাজার টন চাল মজুত করে রেখে সংকটের কথা বলে দফায় দফায় চালের দাম বাড়াচ্ছে।

জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ইরি ধান না ওঠা পর্যন্ত চালের বাজার অস্থির থাকতে পারে। তবে সরকার আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারলে চালের দাম কিছু কমে আসতে পারে।

তবে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, গত বছর বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কারণে আমন ও আউশ মৌসুমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এর ফলে বাজারে ধানের দাম চড়া।

এমনকি মিল মালিকরা স্থানীয় বাজার থেকে পর্যাপ্ত ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে বোরো মৌসুমের ধান ওঠার আগপর্যন্ত চালের দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায়ীর পরামর্শ চালের দাম কমাতে হলে আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ক্রমেই কমছে। ভারতে চালের রপ্তানিমূল্য এখনো ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। চাহিদা কমে যাওয়া এবং অন্যান্য চাল রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে চালের রপ্তানিমূল্য কমে আসছে।

বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, চাহিদা সেভাবে না থাকলেও এশিয়ার শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। বিশ্ববাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল সরবরাহ করে ভারত। চালের আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের পরের চারটি অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের চাল রপ্তানির সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে দামে প্রভাব ফেলে। তবে ভারতে কমলেও ভিয়েতনামে চলতি সপ্তাহে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।

তবে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দামের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও দাম কমেছে।

ভারতে ২০২২ সালে কম বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদনসংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ফলে সে বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির সরকার বাসমতী ভিন্ন অন্যান্য চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ২০২৩ সালে অন্যান্য চাল রপ্তানির ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে রেকর্ড ফসল উৎপাদনের ফলে সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় চাল রপ্তানির বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু হয়।

গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারত চাল রপ্তানি থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এরপর থেকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে শীত মৌসুম থেকেই চালের দাম বাড়তি। বিভিন্ন দেশে থেকে আমদানি করা হলেও দাম কমছে না।

ব্যবসায়ীদের মতে, ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারীদের কাছ থেকে চাল কিনতে শুরু করেছে। এতে ভারতের চালের দামের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

ভারতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের রপ্তানি মূল্য চলতি সপ্তাহে টনপ্রতি ৪০৩-৪১০ ডলার নির্ধারণ হয়েছে। গত সপ্তাহে এই দাম ছিল ৪০৯-৪১৫ ডলার। ভারতের সংবাদমাধ্যম লাইভ মিন্টের সংবাদে বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের চালের রপ্তানিমূল্য কমে যাওয়ায় ভারতের চালের দামও কমেছে।

ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৯২ ডলার, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩৮৯ ডলার।

এদিকে থাইল্যান্ডেও চলতি সপ্তাহে চালের দাম ছিল নিম্নমুখী। দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল গত সপ্তাহে টনপ্রতি ৪১৫ ডলার থেকে কমে ৪০৫-৪০৮ ডলার হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে চালের দামে প্রভাব পড়েছে।

ব্যাংককের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভিয়েতনাম ও ভারতের চালের দাম থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক কম। তাই পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চাহিদা নিম্নমুখী। অন্য একটি সূত্র বলছে, ভারত ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো থেকে নতুন চালের সরবরাহ বাড়ায় এ বছর থাইল্যান্ডের চালের চাহিদা আরও কমতে পারে।

এদিকে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও সরকারি জোগান শক্তিশালী করতে চলতি অর্থবছরে বিশ্ববাজার থেকে ১০ লাখ টন চাল ও গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে সরকার চাহিদা প্রায় ১২ শতাংশ বাড়িয়ে সাত হাজার ২৫০ কোটি টাকার স্থলে আট হাজার ১০০ কোটি টাকা করেছে। খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি জোরদার ও কম আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত জুলাই থেকে আগস্টে টিসিবির বিতরণ কার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হলেও সরকার আলু ও পেঁয়াজসহ বেশ কয়েকটি পণ্য বিতরণ জোরদার করেছে। কম আয়ের মানুষদের সহায়তায় সরকার ওএমএস, টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (এফএফপি) মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ বাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সামগ্রিক খাদ্য বিতরণ হয়েছে ১৮ লাখ ১৬ হাজার টন।

তথ্যসূত্র:  দৈনিক আমার দেশ