ঢাকা ০১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক

আমার সুনামগঞ্জ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 150
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০১৬ সালে গুম হয়েছিলেন মীর আহমেদ বিন কাসেম। জামায়াত নেতা মীর কাসিমের ছেলে আহমেদ বিন কাসেম ব্যারিস্টার আরমান হিসেবেও পরিচিত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলে দীর্ঘ আট বছর পর বাড়ি ফেরেন তিনি। ওই সময় দেখা যায়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আরমান রুগ্ন হয়ে গেছেন। তাকে চেনাও যাচ্ছিল না।

 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বুধবার (৮ জানুয়ারি) জানিয়েছে, নিখোঁজ আরমানের ব্যাপারে ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে প্রশ্ন করেছিলেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। টিউলিপ যেহেতু ব্রিটেনের নাগরিক ও এমপি ছিলেন। তাই ওই সাংবাদিক মনে করেছিলেন, হাসিনার কাছে একটি ফোন করলে আরমান হয়ত মুক্তি পেতে পারেন।

 

তবে চ্যানেল-৪ এর ওই সাংবাদিকের প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হন টিউলিপ। তিনি পরবর্তীতে তার ক্ষমতা ও প্রশাসনকে দিয়ে আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করান বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ব্যারিস্টার আরমান বলেছেন, “চ্যানেল-৪ প্রতিবেদনটি প্রচার করার কয়েক ঘণ্টা আগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমার বাড়িতে যায়। আমার স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলে। বাইরের দেশের কার কার সঙ্গে আমার স্ত্রীর যোগাযোগ আছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করে যেন কোনো সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “আমার ব্যাপারে টিউলিপকে জিজ্ঞেস করার বিষয়টি কোনোভাবে যেন শেখ পরিবারকে আঘাত করেছিল। এ কারণে প্রশাসন থেকে এমন আচরণ করা হয়েছিল।”

 

চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে যান। তাকে ব্যারিস্টার আরমান সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, ‘আপনার একটি ফোন কল অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে’। তখন ওই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন টিউলিপ। তিনি তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করেন, ‘আরমান কী তার সংসদীয় আসনের কেউ? তিনি কী ব্রিটিশ’? জবাবে সাংবাদিক বলেন, ’আরমান বাংলাদেশি। তার পরিবার আপনার কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছে কিছু করার জন্য।’

 

তখন টিউলিপ বলেন, ’আপনি কী জানেন আমি ব্রিটিশ এমপি এবং আমার জন্ম হয়েছে লন্ডনে।’ চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক বলেন, ’কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আপনার গভীর সম্পর্ক আছে। আপনি নিজেই বলেছেন আপনি আওয়ামী সরকারের মুখপাত্র। আপনার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ ওই মুহূর্তে টিউলিপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ’আপনি কী বলতে চান আমি বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ? আমি ব্রিটিশ এমপি। আমাকে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ বলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এটি বলে তিনি চলে যেতে থাকেন। তখন ওই সাংবাদিক বলতে থাকেন, ’আপনি আরমানের ব্যাপারে একটি ফোন দিতে পারবেন না? কেন পারবেন না।’

ব্যারিস্টার আরমান লন্ডনে পড়ালেখা করেছেন। ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বাবার বিচার চলাকালে তিনি তার আইনজীবীর ভূমিকা পালন করছিলেন। ঠিক তখনই তাকে গুম করা হয়।

 

আরমানের ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল পলক বলেছেন, “চ্যানেল- ৪ কে যেন ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে, সেজন্য তার বাড়িতে ওইদিন র‌্যাবের সদস্যরা গিয়েছিল। দেখুন, আপনি একজন ব্রিটিশ এমপিকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, এরপরই র‌্যাবের মতো বাহিনীর কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। যেটি হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত।”

 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার দল লেবার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কেউই কোনো কথা বলেননি। তবে টিউলিপের এক সহযোগী বলেছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয়টি নিয়ে ফরেন অফিসে পত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি।
সূত্র: এনটিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস : আমার সুনামগঞ্জ | Amar Sunamganj

ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক

আপডেট সময় : ০৮:৫৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫

২০১৬ সালে গুম হয়েছিলেন মীর আহমেদ বিন কাসেম। জামায়াত নেতা মীর কাসিমের ছেলে আহমেদ বিন কাসেম ব্যারিস্টার আরমান হিসেবেও পরিচিত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হলে দীর্ঘ আট বছর পর বাড়ি ফেরেন তিনি। ওই সময় দেখা যায়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আরমান রুগ্ন হয়ে গেছেন। তাকে চেনাও যাচ্ছিল না।

 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বুধবার (৮ জানুয়ারি) জানিয়েছে, নিখোঁজ আরমানের ব্যাপারে ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে প্রশ্ন করেছিলেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। টিউলিপ যেহেতু ব্রিটেনের নাগরিক ও এমপি ছিলেন। তাই ওই সাংবাদিক মনে করেছিলেন, হাসিনার কাছে একটি ফোন করলে আরমান হয়ত মুক্তি পেতে পারেন।

 

তবে চ্যানেল-৪ এর ওই সাংবাদিকের প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হন টিউলিপ। তিনি পরবর্তীতে তার ক্ষমতা ও প্রশাসনকে দিয়ে আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করান বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ব্যারিস্টার আরমান বলেছেন, “চ্যানেল-৪ প্রতিবেদনটি প্রচার করার কয়েক ঘণ্টা আগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমার বাড়িতে যায়। আমার স্ত্রীকে চুপ থাকতে বলে। বাইরের দেশের কার কার সঙ্গে আমার স্ত্রীর যোগাযোগ আছে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করে যেন কোনো সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “আমার ব্যাপারে টিউলিপকে জিজ্ঞেস করার বিষয়টি কোনোভাবে যেন শেখ পরিবারকে আঘাত করেছিল। এ কারণে প্রশাসন থেকে এমন আচরণ করা হয়েছিল।”

 

চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে যান। তাকে ব্যারিস্টার আরমান সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, ‘আপনার একটি ফোন কল অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে’। তখন ওই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন টিউলিপ। তিনি তাকে উল্টো জিজ্ঞেস করেন, ‘আরমান কী তার সংসদীয় আসনের কেউ? তিনি কী ব্রিটিশ’? জবাবে সাংবাদিক বলেন, ’আরমান বাংলাদেশি। তার পরিবার আপনার কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছে কিছু করার জন্য।’

 

তখন টিউলিপ বলেন, ’আপনি কী জানেন আমি ব্রিটিশ এমপি এবং আমার জন্ম হয়েছে লন্ডনে।’ চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক বলেন, ’কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আপনার গভীর সম্পর্ক আছে। আপনি নিজেই বলেছেন আপনি আওয়ামী সরকারের মুখপাত্র। আপনার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ ওই মুহূর্তে টিউলিপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ’আপনি কী বলতে চান আমি বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ? আমি ব্রিটিশ এমপি। আমাকে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ বলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এটি বলে তিনি চলে যেতে থাকেন। তখন ওই সাংবাদিক বলতে থাকেন, ’আপনি আরমানের ব্যাপারে একটি ফোন দিতে পারবেন না? কেন পারবেন না।’

ব্যারিস্টার আরমান লন্ডনে পড়ালেখা করেছেন। ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বাবার বিচার চলাকালে তিনি তার আইনজীবীর ভূমিকা পালন করছিলেন। ঠিক তখনই তাকে গুম করা হয়।

 

আরমানের ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল পলক বলেছেন, “চ্যানেল- ৪ কে যেন ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে, সেজন্য তার বাড়িতে ওইদিন র‌্যাবের সদস্যরা গিয়েছিল। দেখুন, আপনি একজন ব্রিটিশ এমপিকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, এরপরই র‌্যাবের মতো বাহিনীর কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। যেটি হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত।”

 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার দল লেবার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু কেউই কোনো কথা বলেননি। তবে টিউলিপের এক সহযোগী বলেছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয়টি নিয়ে ফরেন অফিসে পত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি।
সূত্র: এনটিভি